প্রতীকী ছবি।
ব্রহ্মাণ্ড এবং জীবন। দুই বিস্ময়। কিন্তু এই দু’টির ভবিষ্যৎ কী? কী আছে এদের ভাগ্যে? তা নিয়ে বিতর্ক। সেই বিতর্কে জড়িয়ে রয়েছে পদার্থবিজ্ঞানের দুই শাখা। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের জেনারেল থিয়োরি অব রিলেটিভিটি এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স, যার গুরু বলা যায় ডেনমার্কের বিজ্ঞানী নিলস বোরকে। দুই তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে দুই ভিন্ন সাইজ়ের বস্তুকে। লার্জ এবং স্মল। এক দিকে নক্ষত্র, গ্যালাক্সি। তার ব্যাখ্যায় রিলেটিভিটি। অন্য দিকে অণু-পরমাণু। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা। তার ব্যাখ্যা রয়েছে কোয়ান্টাম মেকানিক্সে। আইনস্টাইন অবশ্য কোয়ান্টাম মেকানিক্স মানতেন না। তা নিয়ে বোরের সঙ্গে তাঁর তর্কও হত খুব।
সেই তর্কই ফিরে এসেছে ব্রহ্মাণ্ডের এবং জীবনের ভাগ্য নিয়ে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বেঙ্গালুরুর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিয়োরেটিক্যাল সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক অশোক সেন তুলে আনলেন সেই বিতর্ক। জানালেন, রিলেটিভিটি অনুযায়ী এই ব্রহ্মাণ্ডে প্রাণের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে আছে। প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সংসদ আয়োজিত ২০৫-তম প্রতিষ্ঠা দিবসে অশোকের বক্তৃতার বিষয় ছিল, ব্রহ্মাণ্ডের ভবিষ্যৎ।
অশোক বললেন, এডুইন পাওয়েল হাবল নামে এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্রায় ১০০ বছর আগে বিগ ব্যাং থিয়োরির প্রবক্তা ছিলেন। কারণ, তিনি আবিষ্কার করেছিলেন, যে নক্ষত্রপুঞ্জ বা গ্যালাক্সি যত দূরে আছে, তা তত বেশি বেগে আমাদের গ্যালাক্সি থেকে সরে যাচ্ছে। কিন্তু আইজ়্যাক নিউটন আবিষ্কার করেছিলেন, মাধ্যাকর্ষণ বা গ্র্যাভিটি সব সময়েই দূরের বস্তুকে কাছে টানে। সেই হিসেবে দূরের গ্যালাক্সির কাছে আসার কথা। ১৯৯৮ সালে দেখা গেল, তার উল্টো ব্যাপারটি ঘটছে ব্রহ্মাণ্ডে। গ্যালাক্সিগুলির পলায়ন বেগ কমে আসার পরিবর্তে দ্রুত হারে বাড়ছে। দেখা গেল, আইনস্টাইন একদা যার কথা বলেছিলেন, সেই শক্তি বা এনার্জি ব্রহ্মাণ্ডে ক্রিয়াশীল। নাম হয়ে গেল, ডার্ক এনার্জি বা কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট। এই ব্রহ্মাণ্ডে ডার্ক এনার্জি হল ৭৩ শতাংশ। আর আইনস্টাইন তাঁর বিখ্যাত ‘ই ইকুয়ালস টু এমসি স্কোয়ার’ সূত্রে দেখিয়েছিলেন, এনার্জি এবং মাস (শক্তি এবং পদার্থ) আলাদা নয়। তার মানে এই ব্রহ্মাণ্ডের ৭৩ শতাংশ এনার্জি কিংবা পদার্থ
ডার্ক এনার্জি।
১৯৯৮ সালের আবিষ্কার অনুযায়ী, গ্যালাক্সিগুলির পলায়ন বেগ বাড়তে বাড়তে ভবিষ্যতে এমন এক দিন আসবে যে তা আলোর বেগকেও (সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার) ছাড়িয়ে যাবে। এই ব্রহ্মাণ্ডে আলোর বেগের চেয়েও বেশি জোরে কেউ ছুটতে পারে না। তা হলে ব্রহ্মাণ্ড বাড়তে বাড়তে এমন আকারে দাঁড়াবে যে আমাদের গ্যালাক্সির সঙ্গে কোনও গ্যালাক্সিরই আর যোগাযোগ থাকবে না। সেই অবস্থাকে ইউনিভার্সের বদলে মাল্টিভার্স বলা যেতে পারে। অর্থাৎ এক ব্রহ্মাণ্ডের বদলে বহু ব্রহ্মাণ্ড। এই হল আইনস্টাইনের তত্ত্বে ব্রহ্মাণ্ডের ভবিষ্যৎ। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী, বহু ব্রহ্মাণ্ডেও প্রাণের ভবিষ্যৎ আছে। ডার্ক এনার্জি যেমন বহু ব্রহ্মাণ্ড তৈরি করবে তেমনই কিছু কিছু ব্রহ্মাণ্ডে প্রাণ টিঁকে থাকতে পারবে। সুতরাং, যে বিষয়ে আইনস্টাইন এবং বোরের মধ্যে তর্ক বেধেছিল, তা এখনও ব্রহ্মাণ্ড এবং প্রাণের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে বর্তমান। অশোক ঠাট্টা করে বলেন, “ডার্ক এনার্জি হেল্প দোজ় হু হেল্প দেমসেলভস।”
বক্তৃতার শুরুতে অশোককে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে পরিচয় করিয়ে দেন মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ-এর অধ্যাপক গৌতম মণ্ডল। অশোকের গবেষণার বিষয় সুপার স্ট্রিং থিয়োরি। সুপার স্ট্রিং থিয়োরি রিলেটিভিটি এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে মেশাতে চায়। এই বিষয়ে প্রথম বিপ্লব এসেছিল ১৯৮৪ সালে। কিন্তু তার পরে দেখা যায়, পাঁচ রকম সুপার স্ট্রিং থিয়োরি আছে। অশোক প্রমাণ করেন, সেই পাঁচ রকমের থিয়োরি একই তত্ত্বের ভিন্ন ভিন্ন রূপ।
গৌতম এ দিন তাঁর পরিচয় পর্বে বলেন, “অশোককে চেনা যায় তাঁর বিনয়ে এবং হাওয়াই চপ্পলে।” অশোক তাঁর উত্তরে বলেন, “এটা আমি প্রেসিডেন্সি কলেজে বৌদ্ধিক পরিমণ্ডলে পেয়েছিলাম। আমাদের অধ্যাপক ছিলেন অমলকুমার রায়চৌধুরী। যিনি একেআর নামে বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর উদ্ভাবিত রায়চৌধুরী ইকুয়েশন কসমোলজিতে বিখ্যাত। পৃথিবীর যে প্রান্তেই গিয়েছি, সেখানে পদার্থবিদদের জিজ্ঞাসা করেছি, একেআর-কে চেনো? উত্তর দিয়েছেন, চিনি না। পাল্টা প্রশ্ন করেছি, রায়চৌধুরী ইকুয়েশন জানো? সবাই উত্তর দিয়েছে, জানি। এই হলেন একেআর।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy