Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bangladesh Unrest

অনভিজ্ঞতাই সমস্যা ইউনূসের, শঙ্কা সাউথ ব্লকের

কূটনৈতিক মহলের মতে, ছাত্র থাকলে বা এনজিও করলে দেশ চালানো যাবে না— এমন ভাবছে না নয়াদিল্লি। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ জরুরি।

মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।

মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৪ ০৯:২৫
Share: Save:

প্রশাসনিক অনভিজ্ঞতা ও সাংগঠনিক দুর্বলতাই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের এগোনোর পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠছে, আশঙ্কা নয়াদিল্লির কূটনৈতিক শিবিরের। তাদের বক্তব্য, উত্তাল ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে যে কোনও দেশের সরকার বদল হতে পারে। কিন্তু সেই ছাত্র আন্দোলনের জেরে সরকারের অর্থনৈতিক রণকৌশল ও প্রশাসন পরিচালনাও যে সফল হবে, তার প্রমাণ ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এনজিও পরিচালনা ও রাষ্ট্র পরিচালনার মধ্যেও বিস্তর ব্যবধান রয়েছে বলে মনে করছে সরকারি সূত্র। আশঙ্কা, ফের হরতাল ও ধর্মঘটের রাজনীতির পুনরুত্থান ঘটতে পারে ঢাকায়।

ভারত মনে করে, তদারকি সরকারের অনভিজ্ঞতা এখনই স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের কারণে তা হয়তো নজরে আসছে না। কিন্তু সামনে বড় চ্যালেঞ্জ মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের সামনে।

সূত্রের মতে, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতার অভাব তদারকি সরকারের গোড়াতেই স্পষ্ট হচ্ছে। সরকার গঠনের ৯ দিনের মধ্যেই উপদেষ্টাদের দফতর বদল নিয়ে সেই প্রশ্ন উঠছে। সেই সঙ্গে রয়েছে সামরিক বাহিনী ও বিএনপি-জামায়াতে থেকে শুরু করে অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির ক্রমাগত চাপ। যেমন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে সরিয়ে দেওয়া হল প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেনকে। দুর্গাপুজোর ছুটি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নিয়ে মন্তব্য করায় তাঁর বিরুদ্ধে পথে নামে বিএনপি ও জামায়াতে। তাই তাঁকে দেওয়া হয় বস্ত্র ও পাট উন্নয়নের লঘু দায়িত্ব। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রাক্তন মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সঙ্গে তাঁকে দেওয়া হয় কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ও। ছাত্র নেতা নাহিদ ইসলামের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক তো ছিলই, এর পরে তাঁকে দেওয়া হল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। আর এক ছাত্র নেতা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রালয়ের সঙ্গে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থানের। দু’জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

কূটনৈতিক মহলের মতে, ছাত্র থাকলে বা এনজিও করলে দেশ চালানো যাবে না— এমন ভাবছে না নয়াদিল্লি। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ জরুরি। এ ক্ষেত্রে সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতার বাইরে রেখে সামরিক শক্তিতে ভর করে সরকার পরিচালনা যে বেশ কঠিন, তা প্রথম থেকেই প্রকট। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, বাংলাদেশে অতীতেও দেখা গিয়েছে, খারাপ হোক বা ভাল, বিএনপি, আওয়ামী লীগ এবং কিছুটা হলেও জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য কেউ দেশকে স্থিতিশীলতা দিতে পারেনি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার কি আদৌ সম্ভব, সেই প্রশ্নও উঠছে।

মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশে অস্থিরতা নিরসনে ব্যর্থ সেনাবাহিনী আপাতত জনমত অনুসরণ করতে চায়। শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সেনাপ্রধানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বহু জঙ্গি জেল থেকে মুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। ছাত্র ও সেনার চাপে প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পরিবর্তন, বিচার ব্যবস্থাকেও অস্থির করে তুলেছে।

বিএনপিকে কোণঠাসা করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কাজে লাগানোর কৌশল নিয়েছে সেনাবাহিনী। রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষার্থীরা গুরুত্ব পেলেও দিন-দিন বিএনপি কোণঠাসা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পরে বাংলাদেশে অনেকেরই ধারণা ছিল, বিএনপি-ই ক্ষমতা দখল করবে। কিন্তু তা হয়নি। এমনকি বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তাতেও মনে হয়েছিল, তাঁরা ক্ষমতা দখলে প্রস্তুত। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে, বিএনপি-ও মনে করতে শুরু করেছে সেনাবাহিনী ছাত্রদের একটি ‘বাফার’ হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাসিনাকে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করার জন্য ছাত্রদের বিদ্রোহের বর্ণনা তাঁদের জন্য সর্বব্যাপী জনসমর্থনের একটি চিত্র তৈরি করে।

মনে করা হচ্ছে, মাসখানেক বাদেই শুরু হবে বর্তমান সরকারের আসল পরীক্ষা। কিছু দিনের মধ্যেই বিএনপি তাদের কর্মী-সমর্থকদের পুনরায় সক্রিয় করে তুলবে। অন্য রাজনৈতিক শক্তিও নিজেদের পালে হাওয়া টানতে সক্রিয় হবে। তাই কয়েক মাস পরে ফের হরতাল ও ধর্মঘটের রাজনীতির পুনরুত্থানের আশঙ্কা থাকছে। সব মিলিয়ে নেতিবাচক রাজনীতির ফসল অন্তর্বর্তী সরকার অভিজ্ঞতার অভাব এবং সাংগঠনিক শক্তিহীনতায় কয়েক মাসের মধ্যেই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে। তা সামলানোই ইউনূস ও তাঁর সঙ্গীদের কঠিন পরীক্ষা। আগেই বিএনপি দাবি তুলেছিল, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘দ্রুততম নির্বাচন’ ঘোষণার দাবি তুলেছেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার বা সেনা যে এখনই ভোট চায় না, সেই ইঙ্গিত তারা প্রতিনিয়তই দিয়ে চলেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

new delhi Muhammad Yunus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy