Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

চিন পাচ্ছে লেনদেনের তথ্য, আশঙ্কা সঙ্ঘের

বাজারে নোট নেই। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ডিজিটাল লেনদেন করুন। কিন্তু তা করতে গিয়ে আমার-আপনার তথ্য চলে যাচ্ছে চিনের হাতে! এই আশঙ্কা থেকে আন্দোলনে নামতে চাইছে আরএসএস। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল স্বপ্নেও জল ঢালতে তৈরি এখন সঙ্ঘ!

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

বাজারে নোট নেই। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ডিজিটাল লেনদেন করুন। কিন্তু তা করতে গিয়ে আমার-আপনার তথ্য চলে যাচ্ছে চিনের হাতে! এই আশঙ্কা থেকে আন্দোলনে নামতে চাইছে আরএসএস। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল স্বপ্নেও জল ঢালতে তৈরি এখন সঙ্ঘ! তাদের মূল প্রশ্ন, বিশেষ একটি ই-ওয়ালেট সংস্থা পেটিএম-কে ঘিরে। যাদের ৪০ শতাংশ মালিকানাই চিনা সংস্থা আলিবাবার।

নোট-বাতিলের ঘোষণার পরে পরিস্থিতির চাপে এখন আম-জনতা অনেকটা বাধ্য হয়েই ই-ওয়ালেটের শরণাপন্ন হচ্ছে। বাজারে নগদের অভাবে এদের ব্যবসাও বাড়ছে হু-হু করে। দৌড়ে সব চেয়ে এগিয়ে রয়েছে পেটিএম। প্রধানমন্ত্রী মোদীর ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোর ডাক দেওয়ার পরে যারা বিজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে ফলাও প্রচার চালিয়েছিল। আরএসএসের আর্থিক সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের আশঙ্কা, ওই ই-ওয়ালেট সংস্থার মাধ্যমেই চিন এখন এ দেশের টাটকা তথ্যও অনায়াসে হাতে পেয়ে যাচ্ছে। এবং এই কারণেই এ বারে পেটিএম-এর উপর খড়গহস্ত হচ্ছে তারা।

স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতাদের বক্তব্য, ভারতের উপরে চিনের বিশেষ নজরদারির কথা অজানা কিছু নয়। ভারতের তথ্য হাতানোর জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে যায় তারা। এখন প্রাথমিক তদন্তের পর সংগঠনটির জোর আশঙ্কা, ওই ই-ওয়ালেট সংস্থার দৌলতেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চিনের হাতে চলে যাচ্ছে।

সংগঠনটির আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন বলেছেন, ‘‘চিন যে ভাবে তাদের পণ্যে ভারতের বাজার ছেয়ে ফেলেছে, এমনিতেই আমরা তার বিরোধী। ভারতে চিনা সামগ্রীর বিরুদ্ধে আমরা অভিযানও চালিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নোট-বাতিলের সিদ্ধান্তের আমরা বিরোধী নই। কিন্তু একটি সংস্থার হাত ধরে চিন আমাদের
দেশের বহু তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে কি না, সেটাই আমাদের কাছে সব থেকে উদ্বেগের বিষয়।’’

কী বলছে পেটিএম?

সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা হয় চিনের সঙ্গে। চিনা কর্মীরা নিয়মিত ভাবে ভারতে পেটিএম দফতরে এসে কাজ করে যান। আর চিনা মালিকানা নিয়ে পেটিএম কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা আসলে মারুতি সংস্থার মতো। পেটিএম-এর প্রতিষ্ঠাতা বিজয় শেখর শর্মার বক্তব্য, তাঁদের সংস্থা মারুতির মতোই ভারতীয়। এক সময়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা মারুতির সিংহভাগ মালিকানা জাপানের গাড়ি তৈরি সংস্থা সুজুকি মোটরের হাতে ছিল।

কিন্তু স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের পাল্টা অভিযোগ, কোনও ভাবেই উভয়ের কোনও তুলনা হতে পারে না। একটি হল গাড়ি তৈরি করার কারখানা। আর অন্য একটি হল মানুষের কষ্টের টাকা ও তার তথ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। পেটিএমের মাধ্যমে কার্যত ব্যাঙ্কের কাজকর্ম হয়। আর্থিক লেনদেন হয়। গাড়ির থেকে অনেক বেশি স্পর্শকাতর বিষয় এটি। তা ছাড়া জাপান কোনও দিন ভারতের উপর আগ্রাসন দেখায়নি। ভারতের তথ্য হ্যাকিং-ও করতে চায়নি। কিন্তু চিন সেটি বরাবরই করে এসেছে।

চিনের বিরুদ্ধে ভিন্‌ দেশের ডিজিটাল তথ্য হাতানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত মাসেও মার্কিন সংস্থা ক্রিপ্টোওয়্যার অভিযোগ এনেছে, স্মার্টফোনে একটি চিনা সংস্থার সফট্‌ওয়্যার এসএমএস-এর পুরো বয়ান থেকে শুরু করে কল-লগ, কনট্যাক্ট লিস্ট, ফোনের অবস্থান— সব তথ্য গোপনে পাচার করছে চিনে। অভিযুক্ত সংস্থাটি একে মিথ্যা প্রচার বলে দাবি করলেও কী কী স্পর্শকাতর তথ্য পাচার হচ্ছে, তা বুঝতে তদন্ত শুরু করেছেন মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

চিন সম্পর্কে এমন অভিজ্ঞতার কথাও মাথায় রাখছে স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। তারা তাই পেটিএম-কে চিঠি লিখেছে তাদের সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য জানতে চেয়ে। অশ্বিনী মহাজন জানিয়েছেন, যদি জুৎসই উত্তর তাদের কাছে না পাওয়া যায়, তা হলে পেটিএম-এর বিরুদ্ধেই বড়সড় আন্দোলন শুরু হবে।

খোদ সঙ্ঘের থেকে এমন আন্দোলনের কর্মসূচির আঁচ নরেন্দ্র মোদী সরকারের কানে পৌঁছয়নি, এমনও নয়। সরকারি সূত্রের খবর, ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে সঙ্ঘের কোনও আপত্তি নেই। তাদের আপত্তি রয়েছে শুধুমাত্র চিনা মালিকানা নিয়েই। তাই পেটিএম চিনা মালিকানা বর্জন করে যাতে ভারতের কোনও সংস্থার মালিকানায় রূপান্তরিত করতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। সঙ্ঘকেও সে কথা বোঝানো হচ্ছে।

সরকার এ-ও বুঝতে পারছে, নোটের অভাবে ডিজিটাল লেনদেনে অনভ্যস্ত মানুষের ভোগান্তি যে ভাবে বাড়ছে, তাতেও সঙ্ঘের বিভিন্ন সংগঠন নানা ভাবে সরকারের উপরে চাপ বাড়ানো শুরু করেছে। জানুয়ারি মাসে নীতি আয়োগের কাজকর্ম নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে চলেছে সঙ্ঘ।

অন্য বিষয়গুলি:

E-Wallet Digital Transactions Data China RSS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE