রাহুল গান্ধী। ছবিঃ পিটিআই।
শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, সাদা টি-শার্ট ভরসা। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ভারত জোড়ো যাত্রার সময় সাদা টি-শার্ট গায়ে চড়িয়েছিলেন। গত দু’বছর ধরে সেই পোশাকে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে আজ লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে রাহুল গান্ধী ইনিংস শুরু করলেন, রাজনীতিকদের পরিচিত সাদা কুর্তা-পাজামায়।
দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছুক, হালকা মেজাজের রাজনীতিক থেকে কি সক্রিয়, দায়িত্বশীল রাজনীতিকে উত্তরণ ঘটল রাহুল গান্ধীর?
নরেন্দ্র মোদীর পদবি নিয়ে মন্তব্যের জেরে মানহানির মামলায় গুজরাতের আদালত রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়ায় গত লোকসভায় তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে গিয়েছিল। আজ নতুন লোকসভায় স্পিকার নির্বাচনের পরে সেই মোদীর সঙ্গেই হাত মেলালেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল। তারপর স্পিকার ওম বিড়লাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা দিলেন, বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে সংসদ চালানো অগণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা। এ বারের নির্বাচনে দেশের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছেন যে তাঁরা চান, বিরোধীরা সংবিধান রক্ষা করুক। রাহুল স্পিকারকে বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত, সংবিধানকে রক্ষায় বিরোধীদের বলতে দিয়ে, মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়ে আপনিও সংবিধান রক্ষায় আপনার কর্তব্য পালন করবেন।’’
দলীয় বৈঠকেও রাহুলকে এখন ‘মারকাটারি’ মেজাজে দেখা যাচ্ছে বলে কংগ্রেস নেতাদের দাবি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ও রাহুল মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে খড়্গে নেতাদের বলেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করুন। সূত্রের খবর, রাহুল তখন এআইসিসি-তে মহারাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত নেতা রমেশ চেন্নিথালাকে বলেন, ‘সকলের সঙ্গে কথা বলে বোঝান। কথা না শুনলে কয়েক জনকে শিকার করে দেওয়ালে ঝুলিয়ে দিন।’
বৃহস্পতিবার সংসদের যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা। তা নিয়ে বিতর্কেও রাহুল মোদী সরকারকে নিশানা করবেন। সূত্রের খবর, লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে ‘শ্যাডো প্রাইম মিনিস্টার’ হিসেবে দেখা হয়। কংগ্রেস ও বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে রাহুল ‘ছায়া মন্ত্রিসভা’ (শ্যাডো ক্যাবিনেট) তৈরি করতে পারেন। যেখানে এক-এক জনের কাঁধে সরকারের এক-একটি মন্ত্রকের কাজকর্মে নজর রাখার দায়িত্ব থাকবে। এ ক্ষেত্রে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি কোনও সাংবিধানিক পদের দায়িত্ব নিতে চান না। মনমোহন সিংহের জমানায় কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী হতে চাননি। কংগ্রেসের সভাপতি হয়েও একটি লোকসভা ভোটে হারের পরেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। আজ কিন্তু বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব নিয়ে কংগ্রেসের নেতা-কর্মী ও ‘ইন্ডিয়া’-র শরিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে রাহুল টুইট করেন, ‘‘বিরোধী দলনেতার পদ নিছক পদ নয়। এ আপনাদের কণ্ঠ হয়ে আপনাদের মঙ্গল ও অধিকারের লড়াই করার বড় দায়িত্ব।’’ কংগ্রেস নেতা সচিন পাইলটের মতে, ‘‘এতে কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া-য় প্রাণশক্তি ফিরে আসবে।’’ ‘ইন্ডিয়া’র শরিক উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতা আদিত্য ঠাকরের মতে, ‘‘বিরোধী দলনেতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যাঁদের কথা শোনা হয়নি, রাহুল তাঁদের কণ্ঠ হয়ে উঠবেন।’’
আজ রাহুলের মুখেও একই কথা শোনা গিয়েছে। গতকাল কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেত্রী সনিয়া গান্ধীর চিঠি পেয়ে আজ লোকসভার স্পিকার সরকারি ভাবে রাহুলকে বিরোধী দলনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা হিসেবে রাহুলের প্রথম দায়িত্ব ছিল, স্পিকার পদে নির্বাচনের পরে ওম বিড়লাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁকে স্পিকারের চেয়ার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসা। সে সময়েই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে করমর্দন করেন রাহুল। তারপরে স্পিকারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘‘গত বারের তুলনায় এ বার বিরোধীরা দেশের অনেক বেশি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। সংসদ চলুক, ভাল ভাবে চলুক। আস্থার ভিত্তিতে সহযোগিতা হোক। সংসদে বিরোধীদের স্বরকে অনুমতি দেওয়া জরুরি।’’
রাজীব গান্ধী ও সনিয়া গান্ধী, দু’জনেই বিরোধী দলনেতার পদে ছিলেন। উল্লেখ্য, শুধু সংসদে বিরোধীদের নেতৃত্ব দেওয়া নয়, লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে রাহুল সিবিআই অধিকর্তা, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন, মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার বাছাইয়ের প্যানেলেও থাকবেন। বিরোধী দলনেতা হিসেবে রাহুল ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমান পদমর্যাদা, বেতন, বাংলো ও নিরাপত্তা পাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy