Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
National News

রাস্তা অন্ধকার, ফের স্লোগান ‘গোলি মারো’

দিল্লিতে চাকরি করলেও যাঁরা উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ, ইন্দিরাপুরম, নয়ডায় বসবাস করেন, তাঁদের মনে আতঙ্ক— বর্ডার সিল করে দেবে না তো?

ছবি: রয়টার্স।

ছবি: রয়টার্স।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:১৮
Share: Save:

কোন রাস্তা দিয়ে ফিরছ? সেখানে কোনও গোলমাল নেই তো?

অফিস থেকে একটু রাতে বাড়ি ফেরার সময় গত তিন দিন ফোনে এই কথোপকথনগুলো এখন নিয়ম।

পূর্ব দিল্লির যে এলাকায় বছর ১২ বাস, রাইসিনা হিলস থেকে তার দূরত্ব কিলোমিটার দশেক। এই পাড়া থেকে জাফরাবাদ-মৌজপুরের দূরত্ব আরও ১০-১২ কিলোমিটার। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে নতুন দিল্লি থেকে যমুনার ব্রিজ পেরিয়ে পূর্ব দিল্লিতে ঢুকতেই শহরটা যেন পাল্টে গেল।

আরও পড়ুন: ‘আমার বুড়ি মা পালাতে পারেনি’

নতুন দিল্লি থেকে আইটিও হয়ে পূর্ব দিল্লিতে ঢুকতেই লক্ষ্মীনগর। এলাকার নতুন বিজেপি বিধায়ক অভয় বর্মার নেতৃত্বে সন্ধ্যায় মিছিল বেরিয়েছিল। স্লোগান উঠেছিল— ‘দেশকে হত্যারোঁ কো, গোলি মারো শালো কো’, ‘যো হিন্দু হিত কি বাত করেগা, ওহি দেশ মে রাজ করেগা’। লক্ষ্মীনগর রাত ১২টা-১টাতেও গমগম করে। খাবারের ছোট ছোট দোকান খোলা থাকে। মেট্রো স্টেশনে অটোর অপেক্ষায় ভিড় লেগে থাকে। মঙ্গলবার সেই লক্ষ্মীনগর শুনশান। রাস্তার সমস্ত আলো নেভানো। ৭-৮ কিলোমিটার দূরে উত্তর-পূর্ব দিল্লির অশান্তির আতঙ্ক এতখানি পথ পেরিয়ে চলে এসেছে! দিল্লিতে চাকরি করলেও যাঁরা উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ, ইন্দিরাপুরম, নয়ডায় বসবাস করেন, তাঁদের মনে আতঙ্ক— বর্ডার সিল করে দেবে না তো?

উচ্চ-মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তদের জন্য আবাসন। তার পাশেই নিম্ন-মধ্যবিত্তদের পাড়া। সেখানে বাংলা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে রুটিরুজির সন্ধানে আসা গরিব মানুষের বাস। মুসলিমেরা সংখ্যায় বেশি। রাস্তার এ পারে মন্দির, তো ও পারে মসজিদ। মসজিদের সামনের পার্কে ভোরবেলায় লাফিং ক্লাব। সপ্তাহান্তে ওই পার্কেই এখন আরএসএস-এর শাখা। তবু অশান্তি বাঁধেনি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেই মসজিদের সামনের বেপাড়ার কিছু লোক ঢুকে পড়েছিল। নানা রকম কটূ-কাটব্য, বাগ্‌বিতণ্ডা— অশান্তি তৈরির উপক্রম। এলাকার বিধায়ক দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসৌদিয়া। পুলিশ আসতে দেরি করেনি বলে পরিস্থিতি খারাপ দিকে এগোয়নি। কিন্তু দোকানপাট সন্ধ্যা নামতেই বন্ধ। ঘরে ঢুকে পড়েছেন রিকশাওয়ালারা। দিল্লি জুড়ে এ ভাবেই ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। শহরটা যে পাল্টে যাচ্ছে, কিছু দিন ধরেই টের পাওয়া যাচ্ছিল।

গত বছর রামনবমীর সময় এই মসজিদের সামনেই একটি হিন্দুত্ববাদীরা জড়ো হয়ে আবির খেলতে শুরু করেছিল। মুখে ‘জয় শ্রী রাম’। সে বারও পুলিশ এসে সামলায়। গোটা পাড়ায় একটাই দুর্গাপুজো। বহু বছরের। হঠাৎ শোনা গেল, সে পুজো করার অনুমতি মিলবে না। পুজোর মাঠে আমিষ খাবার নিয়ে আপত্তি। পুজোর সময় পার্কে আমিষ রান্না হবে না— থানা-পুরসভায় লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে পুজোর অনুমতি মিলেছিল।

এক প্রতিবেশী মুসলিম পরিবারের গলায় হতাশার সুর। ‘কেউ চাইছে না, আমরা এখানে থাকি। আমরাও বুঝতে পারছি। বাড়িতেও আলোচনা করছি। কিন্তু আমরা কোথায় যাব বলুন তো?’ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাই না। রাজধানী শহরেও মানুষ এত নিরাপত্তার অভাবে ভোগে? মুসলিম না-হলেও কি বাকিরা নিশ্চিন্তে রয়েছেন? এক প্রতিবেশী বলছিলেন, কে বলবে এটা দেশের রাজধানী! অন্য শহরের বন্ধুরা এখন ফোন করলেই বলে, তোমাদের দিল্লিতে তো এখন খুব অশান্তি চলছে! জেএনইউ, জামিয়া, শাহিন বাগ, জাফরাবাদ-মৌজপুর— থামার লক্ষণই নেই।

যেন, ‘ইস রাত কি সুবাহ নেহি’।

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Violence CAA Protest Citizenship Amendment ACT CAA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy