Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Delhi Violence

‘জানলামও না মানুষটা কেমন,’ হাহাকার দিল্লির হিংসায় স্বামীহারা নববধূ তসলিনের

ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে বিয়ে হয়েছিল আশফাক হুসেন এবং তসলিন ফতিমার।

বাঁ দিকে, বিয়ের দিন আশফাক। ডান দিকে, কনেবেশে তসলিন।

বাঁ দিকে, বিয়ের দিন আশফাক। ডান দিকে, কনেবেশে তসলিন।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:২৮
Share: Save:

একসঙ্গে অনেকটা পথ যাওয়ার কথা ছিল দু’জনের। কিন্তু বিয়ের ১২ দিনের মাথাতেই ভেঙে গেল সব স্বপ্ন। হুজ্জুতি মাথায় নিয়ে দুপুরে ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সদ্য বিবাহিত ২২ বছরের আশফাক হুসেন। আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁর। এমনকি তাঁর মৃতদেহের জন্য হা-পিত্যেশ করে বসে রয়েছে গোটা পরিবার। তিন দিন ধরে গায়ে জ্বর নিয়ে ঘরের কোণে পড়ে রয়েছেন ২১ বছরের তসলিন ফতিমা। ঘুমের মধ্যেও মৃত স্বামীকে হাতড়ে চলেছেন তিনি। স্বামীকে জানার, চেনার সুযোগটাই যে মিলল না!

পূর্ব দিল্লির গোকুলপুরীর অন্তর্গত মুস্তফাবাদের ঘিঞ্জি গলির এক পাশে কোনও রকমে মাথা গোঁজার একটা জায়গা। সপরিবারে সেখানেই বাস ছিল অশফাক হুসেনের। পেশায় বিদ্যুৎকর্মী তিনি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের সাখনিতে তসলিনের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। পরিবার পরিজনকে নিয়ে সবকিছু মেটাতেই বেশ কয়েক দিন লেগে যায়। ভেবেছিলেন সব কিছু মিটিয়েই দিল্লি ফিরবেন। তসলিনকে নিয়ে সেখানেই নতুন জীবনে পা রাখবেন। একে অপরকে চিনবেন, জানবেন।

কাজের প্রয়োজনে রবিবার রাতে একাই মুস্তফাবাদের বাড়িতে ফিরে আসেন আশফাক। ঠিক ওই সময়ই জাফরাবাদ এবং মৌজপুরে বিক্ষোভের আগুনে হাওয়া লাগে। উত্তরপ্রদেশেও সে খবর পৌঁছয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে পর দিন ফিরে আসেন তসলিনও। নতুন বউ হিসাবে ওই দিন তাঁর কাঁধেই রান্নার ভার পড়ে। তা সেরে দপুর ২টো নাগাদ সকলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া সারেন। সেই প্রথম পাশাপাশি বসে খাওয়ার সুযোগ হয় তসলিন ও আশফাকের।

আরও পড়ুন: ‘আমাদের রাজধর্ম শেখাবেন না’, সনিয়াকে তোপ রবিশঙ্করের​

আরও পড়ুন: ‘কেন এই নির্মম দাঙ্গা তাকে মৃত্যুর জন্য বাছল?’ লিখলেন গুলজার​

কিন্তু দুপুরে খাওয়ার পরই একটি ফোন আসে আশফাকের কাছে। বলা হয়, পাড়ায় একটি বাড়িতে আচমকা বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। তাকে গিয়ে দেখতে হবে। সেই মতো ১২ দিনের স্ত্রীকে রেখে বাড়ি থেকে বেরোন আশফাক। পরস্পরকে সেই শেষ দেখা তাঁদের। তার পর আর ফেরা হয়নি আশফাকের। বাড়ি থেকে কিছু দূর এগোতেই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরিবারের লোকজন কিছু জানার আগে স্থানীয়রাই তাঁকে নিউ মুস্তফাবাদের আল হিন্দ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মৃত্যু হয় আশফাকের। ময়নাতদন্তের জন্য পরে গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর দেহ। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত তাঁর দেহ হাতে পায়নি পরিবার।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রবিবার রাত থেকেই বন্দুক, লাঠি এবং পেট্রল বোমা নিয়ে মুস্তফাবাদে ঢুকতে শুরু করে তাণ্ডবকারীরা। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশ এবং দমকলবাহিনীকে একাধিক বার ফোন করা হলেও, কারও দেখা মেলেনি। বুধবার এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত ঢুকতে পারেনি। এলাকার একটি মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। আগুন ধরানো হয় একটি স্কুলেও। একাধিক বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ সময় মতো দায়িত্ব পালন করলে পরিস্থিতি এতদূর গড়াত না বলে দাবি আশফাকের কাকা মুখতার আহমেদ। গত তিন দিন ধরে ছেলের ওয়ার্কশপে বসে কেঁদে চলেছেন আশফাকের বাবা। শুধু নিজের ছেলে নয়, চার দিন ব্যাপী হিংসায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের সকলকে শহিদ ঘোষণা করতে হবে বলে দাবি তাঁর। এই পরিস্থিতিতেও সরকার অপরাধীদের কড়া শাস্তি দেবে বলে আশাবাদী তিনি।

আর তসলিন? কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই তিনি। উপরের একটি ঘরে গত তিন দিন ধরে জ্বর নিয়ে পড়ে রয়েছেন তিনি। এই তিন দিনে একটি দানাও মুখে তোলেননি তিনি। জল পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখেননি। মুখে একটাই আফশোস, ‘‘মানুষটা কেমন, তা জানতেও পারলাম না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Violence CAA Protest Delhi Police Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy