Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Delhi Violence

তিলক পরালেন হিন্দু পড়শি

হিংসার পাশাপাশি দিল্লির অলি-গলিতে এখন ঘুরছে সম্প্রীতির এই টুকরো টুকরো ছবিগুলোও। 

গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে ঘর ছাড়া উত্তর-পূর্ব দিল্লির বহু মানুষ। পুরনো মুস্তাফাবাদ এলাকার একটি হাসপাতালে তাঁদেরই একাংশের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শনিবার। পিটিআই

গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে ঘর ছাড়া উত্তর-পূর্ব দিল্লির বহু মানুষ। পুরনো মুস্তাফাবাদ এলাকার একটি হাসপাতালে তাঁদেরই একাংশের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শনিবার। পিটিআই

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২০ ০৩:৫৯
Share: Save:

উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন মহল্লা তখন জ্বলছে। গত মঙ্গলবার সকাল ন’টা নাগাদ প্রায় পাঁচশো জনের একটা হিংস্র দল শিববিহার এলাকায় ঢুকে পড়ে। এলাকার সংখ্যালঘুরা অধিকাংশই ঘরছাড়া। সালিম কাসারের মাথায় তখন বাজ পড়েছে। নিজে আর পরিবারের বাকিদের প্রাণ কী ভাবে বাঁচাবেন, বুঝতে পারছিলেন না। কোনও মতে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে এক হিন্দু পড়শির বাড়ি গিয়ে হাজির হন সালিম। সঙ্গে স্ত্রী, সন্তানেরা। ওই হিন্দু পরিবারটিই তার পর আগলে রাখেন সালিমদের।

হিংসার পাশাপাশি দিল্লির অলি-গলিতে এখন ঘুরছে সম্প্রীতির এই টুকরো টুকরো ছবিগুলোও।

সেই রাতটা সেই আশ্রয়দাতার বাড়িতেই কাটান সালিমরা। শুধু আশ্রয় দেওয়াই নয়, উন্মত্ত জনতার হাত থেকে সালিমদের বাঁচানোর উপায়ও বার করেন ওই হিন্দু দম্পতি। সালিমের মাথায় তাঁরা তিলক কেটে দেন। তাঁর স্ত্রীর সিঁথিতে পরানো হয় সিঁদুর। কপালে টিপ। যাতে কোনও ভাবেই তাঁদের কেউ মুসলিম ভেবে বাড়ি থেকে টেনে বার করে নিয়ে না-যায়। পরের দিন ওই বেশেই এলাকা ছাড়েন সালিমরা। চলে যান মুস্তাফাবাদ এলাকায় এক পরিচিতের বাড়ি।

৪৮ বছরের সালিমের বড় দাদাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে দুষ্কৃতীরা। বললেন, ‘‘দাদার পরিবারে সে-ই ছিল একমাত্র উপার্জনকারী। বাড়িতে তাদের সঙ্গে এক বিবাহিত মেয়েও থাকে। ওর স্বামী চোখে ভাল দেখতে পায় না। ফলে কোনও কাজও করে না সে। পরিবারটাকে এখন কে দেখবে, জানি না।’’ সালিম নিজের চোখের সামনে পুড়ে যেতে দেখেছেন এলাকার আর এক বাসিন্দাকেও। জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তিকে গাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে আগুন জ্বালিয়ে দেয় কিছু দুষ্কৃতী। কোনও মতে নিজের প্রাণ বাঁচাতে পেরেছিলেন সালিম। তাঁর দাবি, ওই দুষ্কৃতীদের অধিকাংশ উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। এলাকার কিছু দাগি অপরাধীও ওদের সঙ্গে ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘১৯৮৪-র শিখ-বিরোধী দাঙ্গা আমরা দেখেছি। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়ঙ্কর।’’

এর উল্টো ছবিও আছে। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় একমাত্র হিন্দু পরিবারকে বাঁচানোর ছবিও দেখা গিয়েছে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে। মুস্তাফাবাদের ওই এলাকায় গুটিকয়েক হিন্দু পরিবার থাকে। গোলমাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এলাকা ছাড়েন তাঁরা। ব্যতিক্রম শুধু সেবক রাম শর্মা ও তাঁর পরিজনেরা। ব্রাহ্মণ এই পরিবারটিকে এলাকায় থাকার সাহস জুগিয়েছেন তাঁর মুসলিম প্রতিবেশীরা। রামের কথায়, ‘‘আমি এলাকা ছাড়ার কথা ভাবতেও পারি না। এক পাড়ায় ৩৫ বছর ধরে রয়েছি। কখনও হিন্দু-মুসলিম বিভেদ দেখিনি। পাড়ার যুবকরাই এসে বলে গিয়েছে, আপনারা নিশ্চিন্তে এখানে থাকুন, আপনাদের বাড়ি আমরা পাহারা দেব। এই হিংসা আর হানাহানির আবহে পাড়ার ছেলেদের থেকে এই আশ্বাস পেয়ে আমরা বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবিনি। এই ক’টা দিন ওরাই সারা রাত আমাদের বাড়ি পাহারা দিয়ে আগলে রেখেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Violence CAA Protest Communal Harmony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy