উত্তর-পূর্ব দিল্লির হিংসা কবলিত এলাকা। ছবি: এপি।
এখনও সুনসান শিব বিহারের সরু, ঘিঞ্জি গলিগুলো। সপ্তাহ পার করা দিল্লি-সন্ত্রাসের ছায়ায় এখনও অন্ধকার। ঘর-বাড়ি তালা দিয়ে কোনওমতে পালিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন এলাকার মুসলিম বাসিন্দারা। খুলে রেখে গিয়েছেন দরজায় লাগানো নাম-পরিচয় লেখা ফলক।
একই ছবি মুস্তফাবাদে। গত সপ্তাহে হিংসা ছড়ানোর পরে খালি শিব বিহার লাগোয়া মুস্তফাবাদের সীমায় থাকা হিন্দু বাড়িগুলি। তালা দেওয়া দরজার উপর থেকে উধাও নেমপ্লেট। যেগুলি রয়েছে, সেগুলিতেও বাড়ি-মালিকের নাম পড়ার উপায় নেই। আতঙ্কে কাঁটা মানুষ ধর্মপরিচয় আড়াল করতে লুকোচ্ছেন নাম-পদবি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অশান্তি শুরু হওয়ার পর থেকে গাজ়িয়াবাদে আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন দীপক রাজোরা। তিনি বলেন, ‘‘পালিয়ে আসার আগে বাবার নাম লেখা নেমপ্লটটা খুলে রেখে এসেছি। আমাদের প্রতিবেশীরা অনেকেই এই কাজ করেছেন। না করে উপায় আছে? আমাদের গলির শেষ প্রান্তে বেশ কিছু বাড়ি হামলাকারীদের লাগানো আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছে।’’
উত্তর-পূর্ব দিল্লির হিংসাদীর্ণ এলাকাগুলি থেকে খুব বেশি দূরে নয় বুরারি। সেখানেই আকরব সইদের আসবাবপত্রের দোকান। বাইরে লাগানো সাইনবোর্ডটি চোখে না পড়লে যা খুঁজে পাওয়া দায়। দোকান বাঁচাতে এই সাইনবোর্ডটিই চোখের আড়ালে সরিয়ে ফেলেছেন আকরব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিব বিহারের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘আমাদের শোরুমের বাইরে বিরাট হোর্ডিংয়ে লেখা ছিল, ইকবাল ফার্নিচার হাউস। এলাকায় এই একটিমাত্র মুসলিম দোকান। ঝুঁকি না নিয়ে তাই হোর্ডিং খুলে ফেলেছি।’’ ওই এলাকাতেই ‘মালিক ক্লোদ হাউস’-এর বাইরে থেকে দোকানের নাম লেখা হোর্ডিং ছিঁড়ে ফেলেছেন ইয়াকুব। ৫৫ বছরের প্রৌঢ় বলেছেন, ‘‘আমার প্রতিবেশী শিবভাইও ওঁর ওষুধের দোকানের বাইরে থেকে ‘ওম’ লেখাটি ঘষে তুলে দিয়েছেন। বরাত জোরে আমরা এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছি।’’
সোমবার থেকে ফের কাপড়ের দোকানটি খুলছেন ইয়াকুব। অদূরেই পাহারায় আধাসেনা। সে দিকে তাকিয়ে কিছুটা স্বস্তির সুরে বললেন, ‘‘এখন পরিস্থিতি শান্ত। দোকানপাটও খুলতে শুরু করেছে। এভাবেই স্বাভাবিক হচ্ছে সব কিছু।’’
ভজনপুরায় বাসনের দোকান শাহ-ই-আলমের। বছর পঁয়ত্রিশের তরুণ জানালেন, গত সপ্তাহে হিংসা ছড়ানোর খবর পেয়েই তিনি মেন সুইচ বন্ধ করে দোকান অন্ধকার করে দেন। খুলে ফেলেন সাইনবোর্ড। দোকানের কর্মী ইউনুসকে নিয়ে অন্ধকারেই সিঁটিয়ে ছিলেন বহুক্ষণ। আলম জানিয়েছেন, গত ছ’দিন ধরে তাঁদের এলাকা মোটের উপর শান্ত। তবে সন্ধ্যা হতেই তাঁরা দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছেন।
উত্তর-পূর্ব দিল্লির হিংসাবিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে এখন ২৪ ঘণ্টা আধাসেনার পাহারা। তবু দোকান খুলতে সাহস পাচ্ছেন না সবাই। এক দোকানি বললেন, ‘‘মূলত মুদি দোকানগুলি খুলেছে। বড় বড় শোরুমগুলি এখনও খোলার সাহস পাচ্ছেন না মালিকেরা। ফের যদি হামলা হয়!’’
মৌজপুরে আব্দুল আজিজ়ের ছোট ছাপাখানার শাটারের উপরে লাগানো সাইনবোর্ডটি তাই আর নেই। তাঁর কথায়, ‘‘এটা পরিকল্পিত হামলা। বহিরাগতরা এই হামলায় জড়িত ছিল। দোকানের মালিক কোন সম্প্রদায়ের তা দেখে বেছে বেছে হামলা হয়েছে। আমি ওদের মুখ দেখেছি। এখনও ভয় কাটাতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy