মুখ্যসচিব ‘নিগ্রহ’-র ঘটনায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ছবি: পিটিআই।
পুলিশ হানা দিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের বাসভবনে। কেজরীর বাড়িতেই দিল্লির মুখ্যসচিবকে নিগ্রহের যে অভিযোগ নিয়ে রাজধানী এখন তোলপাড়, তা খতিয়ে দেখতে এবং ‘প্রমাণ’ সংগ্রহ করতেই শুক্রবার হাজির হয়েছিল দিল্লি পুলিশের ৬০-৭০ জনের একটি দল।
দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, সে দিনের বৈঠকে কী হয়েছিল তা জানতে কেজরীবালের বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেই অনুরোধ মানা হয়নি। তাই ‘প্রমাণ’ সংগ্রহ করতেই এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।
এ দিনের তল্লাশির পর এক পুলিশ আধিকারিক জানান, ‘কেজরীর বাড়ি থেকে ২১টি ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি কাজ করছে। যদিও সেগুলোতেও ফুটেজ দেখতে কিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’ হার্ড ডিস্কগুলোতে কোনও কারচুপি করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশের ওই কর্তা।
আরও পড়ুন: গর্ভসংস্কার! বলে বলে নাকি আর্যভট্ট-আইনস্টাইনদের জন্ম দেওয়া যাবে?
মুখ্যসচিবকে নিগ্রহের অভিযোগে আম আদমি পার্টির বিধায়ক প্রকাশ জারবালকে আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে আরও এক বিধায়ক আমানতুল্লা খান জামিয়া নগর থানায় আত্মসমর্পণ করেন। দু’জনেই এখন বিচারবিভাগীয় হেফাজতে আছেন।
দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া এবং মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। ছবি: পিটিআই।
গত সোমবার রাতে সরকারি বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত বিষয়ে নিজের বাড়িতে বৈঠক ডেকেছিলেন কেজরীবাল। সেখানে হাজির ছিলেন আপ বিধায়করা। বৈঠকে ডাকা হয়েছিল মুখ্যসচিব অংশু প্রকাশকেও। ওই বৈঠকেই মুখ্যসচিবকে মারার অভিযোগ ওঠে আপ বিধায়কদের বিরুদ্ধে। এমনও অভিযোগ উঠেছে যে, মুখ্যসচিবের উপর যখন আপ বিধায়করা চড়াও হয়েছিলেন, সব দেখেশুনেও চুপ ছিলেন কেজরীবাল এবং উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া!
যদিও মুখ্যসচিবকে মারধরের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করছে আপ। উল্টে বিধায়কদের সঙ্গে অংশু খারাপ আচরণ করেছিলেন বলে পাল্টা অভিযোগ তোলে দল। সেই সঙ্গে দলের তরফে সাফাই দেওয়া হয়, কোনও বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত বিষয় নয়, রেশন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলা হয়, তাঁর কাছে অনেক বিষয় নিয়েই জানতে চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু মুখ্যসচিব জবাব দিতে চাননি। উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া বলেন, বিধায়কদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল অংশু প্রকাশকে, কিন্তু মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেনি। যদিও মেডিক্যাল রিপোর্টে জানা যায়, অংশুর কপালে ও হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
আরও পড়ুন: মুখ্যসচিব কি অমিতাভ, প্রশ্ন আপ নেতার
এ সবের মধ্যেই আম আদমি পার্টির অস্বস্তি বাড়িয়েছে কেজরীবালের ব্যক্তিগত পরামর্শদাতা এবং প্রাক্তন আমলা ভি কে জৈনের আদালতে দেওয়া ‘স্বীকারোক্তি’। বৃহস্পতিবার দিল্লির আদালতে জৈন সাক্ষ্য দেন। বিভিন্ন সূত্রে খবর, মুখ্যসচিবকে মারধরের ঘটনাটি তিনি নিজের চোখে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এই জৈনই অংশু প্রকাশকে ওই দিনের বৈঠকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বলেও জানা গিয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে জৈনের দাবি, বৈঠক চলাকালীন তিনি ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন দুই বিধায়ক মুখ্যসচিবকে মারধর করছেন। তাঁর আরও দাবি, পুরো ঘটনাটাই মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রী নীরবে দেখেছেন।
জৈনের এই বয়ানকেই হাতিয়ার করে পুলিশ দুই অভিযুক্ত বিধায়ককে জেরার জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশের সেই আর্জিকে খারিজ করে দেয় আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy