রবিবার দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াকে বাড়তি সময় মঞ্জুর করল সিবিআই। আবগারি দুর্নীতির মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে রবিবার ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু বাজেট প্রস্তুতির কারণ দেখিয়ে অতিরিক্ত সময় চান সিসৌদিয়া। সূত্রের খবর, সিসৌদিয়াকে অতিরিক্ত সময় মঞ্জুর করেছে তদন্তকারী সংস্থা। তবে আবার কবে তাঁকে ডাকা হবে তা জানা যায়নি। এই প্রেক্ষিতে জেনে নেওয়া যাক, আবগারি দুর্নীতির মোড়কে কী কী ঘটেছে অতীতে।
১। দিল্লি সরকারের অর্থমন্ত্রী মণীশ। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেট প্রস্তুত করার জন্য তিনি ব্যস্ত রয়েছেন। তাই সিবিআইয়ের কাছে অতিরিক্ত অন্তত এক সপ্তাহ সময় চেয়েছেন তিনি। সেই সময় দেওয়া হলে তদন্তকারী সংস্থাকে সমস্ত রকম সহযোগিতা করতে পারবেন তিনি।
২। রবিবার দক্ষিণ দিল্লির লোধি রোডে সিবিআইয়ের সদর দফতরে সকাল ১১টা নাগাদ হাজির হওয়ার কথা ছিল সিসৌদিয়ার। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি টুইট করেন, ‘‘সিবিআই আগামী কাল (রবিবার) আমাকে আবার ডেকে পাঠিয়েছে। ওরা সিবিআই, ইডিকে সর্বশক্তি দিয়ে আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। আমার বাড়িতে তল্লাশি চলেছে, ব্যাঙ্কের লকার খুলে দেখেছে, কিন্তু কিছুই পায়নি।’’
৩। কেজরীওয়ালের ডেপুটি সিসৌদিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এবং অন্যান্যরা মিলে দিল্লিতে নতুন এক আবগারি নীতি প্রণয়ন করতে চেয়েছিলেন। যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ করে গত বছর সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা।
৪। এর পরেই দিল্লির কেজরীওয়াল সরকার পুরনো আবগারি নীতিতেই ফেরত যায়। এর ফলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব লোকসানের অভিযোগ করে আপ। কেজরীওয়াল অভিযোগ করেন, লেফটেন্যান্ট গভর্নরের জন্য রাজস্বের এমন বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে হল। আপ দাবি করে, নতুন আবগারি নীতি প্রণয়ন হলে রাজস্ব ভান্ডার ফুলেফেঁপে উঠত।
আরও পড়ুন:
৫। বিজেপি অভিযোগ করে, কেজরীওয়াল সরকার পুরনো আবগারি নীতিতেই ফেরত গিয়েছে কারণ তারা নতুন নীতি প্রণয়নের জেরে হওয়া বিরাট দুর্নীতিকে এ ভাবেই ধামাচাপা দিতে চায়।
৬। আপের অভিযোগ, বিজেপি চালিত কেন্দ্রের মন্ত্রণাতেই দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর সিসৌদিয়ার পিছনে সিবিআইকে লেলিয়ে দিয়েছেন। সিসৌদিয়াকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে সিবিআই। তল্লাশি অভিযান চলেছে সিসৌদিয়ার বাড়িতে। তাঁর ব্যাঙ্কের লকারেও তল্লাশি চালানো হয়েছে। যদিও তল্লাশিতে কিছুই পাওয়া যায়নি বলে দাবি সিসৌদিয়ার। সিবিআই এ ব্যাপারে কোনও বিবৃতি দেয়নি।
৭। মাস তিনেক আগেই এই মামলায় চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। তাতে যদিও নাম নেই দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রীর। সিবিআইয়ের অন্য একটি সূত্র সেই সময় দাবি করেছিল, আগামী দিনে আরও একাধিক চার্জশিট আদালতে জমা পড়বে। তাতে সিসৌদিয়ার নাম থাকতে পারে।
৮। সিবিআই সূত্র থেকে এমন জানানো হলেও তদন্তকারী সংস্থা যে চার্জশিট জমা দিয়েছে, তাতে অভিযুক্ত হিসাবেও সিসৌদিয়ার নাম রাখা হয়নি। এই প্রেক্ষিতেই অনেক আইন বিশেষজ্ঞের প্রশ্ন, তা হলে কিসের ভিত্তিতে সিসৌদিয়াকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে?
৯। আবগারি দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়েছে ‘দক্ষিণ লবি’র। এই সূত্রে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করেছে সিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ে তথা রাজ্যের দাপুটে নেত্রী কে কবিতাকেও। সিবিআইয়ের দাবি, মিডলম্যান ব্যবহার করে মদ ব্যবসায়ীরা নয়া আবগারি নীতির মাধ্যমে বাড়তি মুনাফা পকেটে ভরার ছক কষেছিলেন। তাতে প্রত্যক্ষ ভাবে মদত ছিল কেজরীওয়ালের ঘনিষ্ঠ তথা দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী সিসৌদিয়ার।
১০। ২০২১-এর নভেম্বরে নতুন আবগারি নীতি চালু করে দিল্লি সরকার মদ বিক্রির ব্যবসা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করে। দিল্লিতে মদ বিক্রি পুরোপুরি সরকারি হাতে। কিন্তু কেজরীওয়াল সরকারের তাতে আপত্তি ছিল। তাই নতুন আবগারি নীতি প্রণয়ন করে রাজধানীর মদ ব্যবসা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেই নীতিতেই বিপুল দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন ভিকে সাক্সেনা।