শনিবার ফিরোজ শাহ কোটলা মসজিদের সামনে প্রেম সিংহের তোলা ছবি।
রাজধানীর বাদশাহি রোদ বায়ু দূষণের কবলে পড়ে মুখ ঢাকল কালো ধোঁয়ায়। ক্রমাগত বাড়তে থাকা দূষণ ও কালো ধোঁয়া দিল্লিবাসীর ফুসফুসে মিশে যাচ্ছে। ঘন ধোঁয়াশার আবরণ পেরিয়ে দৃশ্যমান্যতা ক্রমে কমে গিয়ে দিল্লির পরিবহণ ব্যবস্থা, হাসপাতাল, স্কুল সহ অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রও বিপর্যয়ের মুখে। পরিস্থিতি এমনই যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল আগামী তিন দিন রাজদানীর সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বায়ুদূষণ কমাতে ফের জোড়-বিজোড় ট্র্যাফিক বিধি চালু করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
গত চব্বিশ ঘণ্টায় দিল্লিতে বাতাসের এয়ার-কোয়ালিটি ইনডেক্স(একিউআই) ছিল ৪৮৫। আনন্দবিহার অঞ্চলে একিউআই ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ(ডিপিসিসি) ও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ(সিপিসিবি)-এই দুই সংস্থার মত অনুযায়ী একিউআই ২৫০-র অধিক হলেই তা অত্যন্ত ভয়াবহ। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী শ্রী অনিল মাধব দাভে বলেন, “পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। দিল্লিতে বিপদকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমাদের এই মুহূর্তে দূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে।”
পরিস্থিতি মোকাবিলার কৌশল খুঁজতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল রবিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছিলেন। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, আগামী তিন দিন রাজধানীর সমস্ত স্কুল বন্ধ থাকবে। ঘরবাড়ি তৈরি, সংস্কার বা ভাঙার কাজও আগামী পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। রাজধানীর বুকে আবর্জনার স্তূপে আগুন লাগানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া, আগামী ১০ দিনের জন্য বদরপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। এই ১০ দিন দিল্লিতে ডিজেল চালিত জেনারেটর ব্যবহারের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ধুলো ওড়া কমাতে রাস্তাঘাটে জল ছেটানোর নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি সরকার।
দিল্লিকে ইতিমধ্যেই ‘গ্যাস চেম্বার’ বলে অভিহিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল। পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় ফসল জ্বালানো বন্ধ করতে তিনি কেন্দ্রের সহায়তা চেয়েছেন। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী অনিল মাধব দাভে দিল্লি ও তার আশপাশের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিবাসীকে দূষণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার আবেদন জানিয়েছেন। খুব প্রয়োজন না হলে দিল্লির রাস্তায় যানবাহনের দূষণ না বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন তিনি। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য দৃশ্যমান্যতার অভাবে রাজধানীর বেশ কিছু অঞ্চলে কয়েকটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। কালো কুয়াশার কবলে পড়ে দিল্লির সড়ক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। দিল্লি ট্রাফিক পুলিশ ৭৪ টি দুর্ঘটনাপ্রবণ অঞ্চলে সতর্কতা জারি করেছে।
দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দৃশ্যমান্যতা গত বুধবার পর্যন্ত ৩০০-৫০০ মিটার পর্যন্ত ছিল। বৃহস্পতিবার অবস্থার একটু উন্নতি হলেও বেঙ্গালুরু-জয়পুর ইণ্ডিগো বিমানটিকে ঘন কুয়াশার দরুণ দৃশ্যমান্যতার অভাবে জয়পুরের বদলে দিল্লিতেই অবতরণ করাতে বাধ্য হয়েছিল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া দফরের পূর্বাভাস অনুযায়ী পরের দিন বিমানবন্দরে দৃশ্যমান্যতার কিছুটা উন্নতি আশা করা হয়েছিল। শুক্রবার দৃশ্যমান্যতা ১২০০ মিটার পর্যন্ত ছিল। তবে বাতাসে দূষিত পদার্থের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে আগামী দিনে আরও ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে বিমানবন্দরের দৃশ্যমান্যতা অনেকাংশেই কমে যাবে, আশঙ্কা করছে বিমানবন্দর কতৃপক্ষ।
দৃশ্যমান্যতার অভাবে ফিরোজশাহ কোটলা স্টেডিয়ামে গুজরাট-বাংলা ও কার্ণাল সিং স্টেডিয়ামে হায়দরাবাদ-ত্রিপুরা রঞ্জি ট্রফি ক্রিকেট ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে। শুধু দৃশ্যমান্যতার অভাবই নয়, ভিন রাজ্য থেকে রঞ্জি খেলতে আসা খেলোয়াড়রা মাঠে প্র্যাকটিসের সময় দূষণের কবলে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চোখে জ্বালা, শ্বাসকষ্ট এই ধরণের সমস্যার জন্য ক্রিকেটারদের বায়ুপরিশোধক যন্ত্র সমন্বিত হোটেলের ঘরে রাখা হয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরেই বন্ধ ছিল বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্কুল। বাতাসে সালফার-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ার দরুণ শিশু, বৃদ্ধ ও সাধারণ মানুষও শ্বাস-কষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন। সেণ্টার ফর সাইন্স এন্ড এনভায়রনমেন্ট(সিএসই)-এর পরামর্শ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক দ্রুত বায়ুদূষণ প্রশমন কমিটি গঠন করতে চলেছেন। বাতাসে টক্সিক পদার্থের প্রভাবে দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে হাসপাতালগুলোতে ক্রমাগত রোগী ভর্তি বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতর যাঁদের অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ঘর থেকে বাইরে বেরোতে কয়েকদিনের জন্য নিষেধ করেছে। এ ছাড়াও বাচ্চা ও বয়স্ক-সহ সকলকেই মাস্ক পরে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
বায়ু দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন নির্মাণসংস্থার কাজ থেকে নির্গত ধুলোর দূষণ। দিল্লির গণেশ নগর, জংপুরা, ঝাঁসি রোড-সহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে এই দূষণের পরিমাণ সর্বাধিক। বাতাসে ধুলোর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় শ্বাসকষ্ট ও সড়ক দুর্ঘটনা দুটোরই সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছে। হেলমেটে মুখ ঢেকেও বাইক আরোহীরা এই ধুলোর কবল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ দিল্লির অ্যান্ড্রুজগঞ্জ এলাকার কাউন্সিলার অভিষেক দত্ত দক্ষিণ দিল্লি কর্পোরেশন কমিশনার পুণিত গোয়েলকে ঐ অঞ্চলের সমস্ত নির্মীয়মান কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছেন।
শুধু দিল্লিই নয়, এনসিআর সহ উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতেও পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। একমাত্র বৃষ্টি বা বায়ুপ্রবাহের গতিবৃদ্ধিই পারে বাতাসে দূষিত পদার্থের পরিমাণ কমাতে- এরকমই দাবি করছে পরিবেশ দফতর।
আরও পড়ুন: দূষণে জেরবার দিল্লি, বন্ধ ১৮০০ স্কুল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy