(বাঁ দিকে) ভূমিধসের ফলে ক্ষতির মুখে পড়া অশোকের বাড়ি। (ডান দিকে) প্রাক্তন সেনাকর্মী অশোক গুলেরিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
টানা ১৭ বছর ধরে কর্তব্য পালনের পর ২০০৬ সালে ভারতীয় সেনা থেকে অবসর নিয়েছিলেন হিমাচল প্রদেশের শিমলার বাসিন্দা অশোক গুলেরিয়া। হেড কনস্টেবল হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের বাহিনীতে। ৩০ বছরের জমানো পুঁজি দিয়ে সম্প্রতি পাহাড়ের কোলে বাড়িও বানিয়েছিলেন। কিন্তু এক ধাক্কাতেই সব শেষ। বৃষ্টির তাণ্ডবে হিমাচল প্রদেশে যে বিপর্যয় দেখা গিয়েছে, তার আঁচ গিয়ে পড়েছে অশোকের জীবনেও। তাঁর নবনির্মিত বাড়ি গ্রাস করেছে ভূমিধস। ভেসে গিয়েছে তাঁর নতুন কেনা গাড়ি। বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অশোক। তবে কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হননি। বাড়ি ধসে যাওয়ার পর দিনই আবার যোগ দিয়েছেন কাজে। তাঁর এখন একটাই অঙ্গীকার, ‘‘আমার ক্ষতি হয়েছে হোক, কিন্তু বাকিদের ক্ষতির মুখ থেকে বাঁচাতে হবে।’’
সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’-র সঙ্গে কথা বলার সময় ৫৪ বছর বয়সি অশোক জানিয়েছেন, মান্ডি জেলায় একটি তিন তলা বাড়ি বানিয়েছিলেন তিনি। মাত্র দুই বছর আগে সেই বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয়। ৩০ বছরের সঞ্চয় করা অর্থ, প্রায় এক কোটি টাকা ঢেলেছিলেন সেই বাড়ি তৈরিতে। কিন্তু ধসের মুখে পড়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে গিয়েছে সেই বাড়ি। ভেসে গিয়েছে নতুন কেনা গাড়ি এবং আসবাবও। তবে শিমলা ছাড়তে রাজি নন তিনি। হিমাচলের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নিয়েছেন তিনি। তবে দুর্দিনে তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন। এমনটাই দাবি করেছেন অশোক। তিনি জানিয়েছেন, প্রশাসনের তরফে কোনও সাহায্য বা সাহায্যের আশ্বাস না পেলেও তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন, ভারতীয় সেনার সহকর্মীরা। তাঁর অনেক সহকর্মীই তাঁকে আর্থিক সহায়তা করেছেন বলে জানিয়েছেন অশোক।
অশোকের মতোই বিপর্যস্ত হিমাচলে বিপদের মুখে পড়েছেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। কেউ বাড়ি-গাড়ি হারিয়েছেন, তো কেউ হারিয়েছেন প্রিয়জনদের। বর্ষার মরসুম শুরুর ভারী বর্ষণজনিত ধসের কারণে হিমাচলে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিগত কয়েক দিনেই মৃত্যু হয়েছে ৭৭ জনের। শিমলার সামার হিল এলাকায় শিবমন্দিরের ধ্বংসাবশেষ থেকে শুক্রবার আরও একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। শিমলার এসপি সঞ্জীবকুমার গান্ধী সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, মন্দিরের ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও প্রায় চার জন চাপা রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুক্রবার হিমাচল প্রদেশ সরকারের তরফে ভারী বর্ষণে ক্ষতির মুখে পড়া রাজ্যে বিপর্যয় নেমে এসেছে বলে ঘোষণা করেছে। রবিবার থেকে পাহাড়ি রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভূমিধস নেমেছে শিমলা-সহ বেশ কয়েকটি জেলায়। হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু জানিয়েছেন, জোরকদমে উদ্ধার অভিযান চলছে। রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সাহায্যের চেষ্টা করছে।
বিগত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে হিমাচল প্রদেশের শিমলা, কাংড়া এবং মান্ডি জেলার বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত। ২৪ জুন হিমাচলে বর্ষার মরসুম শুরুর পর থেকে, সে রাজ্যে ১১,৬৩৭টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গিয়েছে বহু গ্রাম, চাষের জমি। এমনকি, বদ্রীনাথ, কেদারনাথ যাওয়ার রাস্তাও ধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিধসের কারণে রাজ্যের প্রায় ৭০০-রও বেশি রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রায় ৪০৮টি ট্রান্সফরমার পুড়ে গিয়েছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে ১৪৯টি জল সরবরাহ প্রকল্প। যার ফলে বিভিন্ন এলাকায় জলের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। বিপন্ন হয়ে পড়েছে হিমাচলের জনজীবন।
রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সূত্রে খবর, হিমাচল প্রদেশের বহু জায়গায় পর্যটক এবং স্থানীয়েরা আটকে রয়েছেন। তবে উদ্ধারকাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি উদ্ধারকাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা এবং স্থানীয় প্রশাসনও। হেলিকপ্টার এবং মোটরবোটের মাধ্যমেও উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী সুখু আরও জানিয়েছেন, বর্ষার তাণ্ডবে হিমাচলের যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি। যা মেরামত করতে সময় লাগবে এক বছরেরও বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy