ছবি এএফপি।
প্রতিষেধক নেওয়ার ফলে এক স্বেচ্ছাসেবক অসুস্থ হয়ে পড়ায় ব্রিটেনে তাদের পরীক্ষা সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা। যার প্রভাব পড়ল ভারতেও। ভারতে সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি প্রতিষেধক কোভিশিল্ডের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হওয়ার কথা ছিল। ব্রিটেনের ওই ঘটনার উল্লেখ করে আজ রাতে সিরামকে পাঠানো নোটিসে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) জানতে চেয়েছে, ব্রিটেনে যেখানে নিরাপত্তাজনিত কারণে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেখানে ভারতে কেন তা চালু থাকবে? যত ক্ষণ না রোগীর সুরক্ষার বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, তত ক্ষণ কেন সিরামকে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রশ্নে ছাড়পত্র দেওয়া হবে? জবাবে সিরাম বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সংস্থা সরকারের সমস্ত নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য।
একেবারে গোড়া থেকেই প্রতিষেধকের দৌড়ে প্রথম তিনটি নামের মধ্যে রয়েছে অক্সফোর্ডের কোভিশিল্ড। মানবদেহে সেটির প্রয়োগের প্রথম দু’টি পর্ব নির্বিঘ্নে হলেও, মানবদেহে তৃতীয় দফার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সময় ব্রিটেনের এক স্বেচ্ছাসেবক হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার পরেই অ্যাস্ট্রাজেনেকা এক বিবৃতিতে জানায়, তৃতীয় পর্বের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের এক স্বেচ্ছাসেবক হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ায় আপাতত ব্রিটেনে ওই প্রয়োগ সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হচ্ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, স্বচ্ছতার স্বার্থে একটি নিরপেক্ষ কমিটিকে দিয়ে সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখার জন্য স্বেচ্ছায় ওই প্রয়োগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থা জানিয়েছে, প্রতিষেধক প্রয়োগের পরে, যেখানে স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ব্যাখাতীত অসুস্থতা দেখা যায়, সেখানেই প্রয়োগ থামিয়ে দেওয়ার মতো রুটিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন ভারতে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয়/তৃতীয় পর্বের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ভবিষ্যত কী হতে চলেছে? আজ দুপুরে অবশ্য সিরাম বিবৃতি দিয়ে জানায়, “ব্রিটেনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ নিয়ে কিছু বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সে দেশে সাময়িক ভাবে ওই প্রয়োগ বন্ধ হয়েছে এবং আমরা আশা করছি দ্রুত তা শুরু হবে। ভারতে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রশ্নে বলা যায়, তা চালু রয়েছে এবং কোনও ধরনের সমস্যা নেই।”
কিন্তু ছবিটি পাল্টে যায় রাতের মধ্যে। কেন ব্রিটেনে অ্যাস্ট্রাজেনেকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বন্ধ করেছে, তা সিরাম সংস্থার কাছে জানতে চায় ডিসিজিআই। একই সঙ্গে ব্রিটেনে এক স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে ওই প্রতিষেধকের প্রয়োগে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে কেন তাদের সিরাম কিছু জানায়নি— এই প্রশ্নও তুলেছে ডিসিজিআই। ডিজিসিআই-এর প্রধান ভি জি সোমানি সিরামকে পাঠানো নোটিসে বলেছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা যে সুরক্ষাজনিত কারণে বিভিন্ন দেশে যে তাদের প্রয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানায়নি সিরাম। একই সঙ্গে ওই প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে মানবদেহে যে ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দিয়েছে, সে বিষয়েও কোনও তথ্য জমা দেওয়া হয়নি। অথচ সেই তথ্য সুরক্ষার দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ না করে বাজারে কোভিড টিকা নয়, জানাল তিন মার্কিন ওষুধ কোম্পানি
শো-কজ নোটিসে আরও বলা হয়েছে, গত ২ অগস্ট দেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রশ্নে সিরামকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। তাই যত দিন রোগীদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত না-হওয়া যায়, তত দিন সেই ছাড়পত্র কেন সাসপেন্ড করা হবে না? জবাবে সিরাম বিবৃতিতে জানিয়েছে, সংস্থা ডিসিজিআই-এর নিয়ম মেনেই কাজ করছে। এখনও পর্যন্ত প্রয়োগ থামিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়নি। যদি সুরক্ষাজনিত প্রশ্নে ডিসিজিআই-এর কোনও প্রশ্ন থাকে তা হলে সংস্থা তাদের নির্দেশ ও প্রোটোকল মেনে চলবে।
ঘটনাচক্রে ভারতেও মানবদেহে কোভিশিল্ডের তৃতীয় পর্বের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হতে গিয়ে আটকে গিয়েছে। দেশের ১৭টি কেন্দ্রে ১৬০০ স্বেচ্ছাসেবকের উপর ওই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হওয়ার কথা। গত সপ্তাহেই ওই প্রয়োগ শুরু হওয়ার কথা ছিল চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিকাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সংস্থায়। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, গবেষণা শুরু করার আগে ডেটা সেফটি অ্যান্ড মনিটরিং বোর্ড (ডিএসএমবি)-এর ছাড়পত্রের অভাবে পিজিআইএমআর-এর প্রয়োগ থমকে যায়। বাড়তি তথ্যও চাওয়া হয় পিজিআইএমআর-এর কাছে। গত কাল নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পল জানান, আশা করা যাচ্ছে এই সপ্তাহেই ওই প্রয়োগ শুরু করা সম্ভব হবে। িন্তু ব্রিটেনের প্রয়োগ বন্ধের খবর আসায় জল্পনা শুরু হয় এ দেশের কোভিশিল্ডের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আজ ব্রিটেনের ঘটনার প্রেক্ষিতে সিরাম বিবৃতিতে বলেছে,
অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতে প্রাথমিক ভাবে কোভিশিল্ডের প্রায় ১০০ কোটি ডোজ় তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সিরামের। যা একাধিক নিম্ন আয়ের দেশে সরবরাহ করা ছাড়াও ভারতে ব্যবহার করার কথা রয়েছে। নিয়মানুযায়ী মানবদেহে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ভারতে সম্পন্ন হলে, তবেই কোনও কোনও বিদেশি টিকা এ দেশে ব্যবহারের ছাড়পত্র পেতে পারে।
সেই মতো কোভিশিল্ডকে গত মাসে ভারতে তৃতীয় পর্বের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছিল ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া। ভারতে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সিদের দু’টি ধাপে কোভিশিল্ডের টিকা দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম টিকাটি দেওয়ার প্রায় চার সপ্তাহের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ়টি দিয়ে প্রতিষেধকের প্রভাব দেখার কথা গবেষকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy