(বাঁ দিকে) প্রয়াত ক্যাপ্টেন অংশুমানের স্ত্রী স্মৃতি। প্রয়াত ক্যাপ্টেন অংশুমান সিংহ (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
পুত্রের মরণোত্তর সম্মান ‘কীর্তি চক্র’ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে পঞ্জাবের গুরদাসপুরে চলে গিয়েছেন পুত্রবধূ। এমনই অভিযোগ তুলেছেন প্রয়াত ক্যাপ্টেন অংশুমান সিংহের বাবা-মা। প্রসঙ্গত, গত ৫ জুলাই মরণোত্তর সম্মান ‘কীর্তি চক্র’ তুলে দেওয়া হয়েছিল প্রয়াত ক্যাপ্টেন অংশুমানের মা এবং স্ত্রীর হাতে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সেই সম্মান তুলে দেন ক্যাপ্টেনের পরিবারের হাতে।
এ বার পুত্রবধূর বিরুদ্ধেই পুত্রের মরণোত্তর সম্মান ‘কীর্তি চক্র’, পুত্রের ছবি, নথি এবং ক্যাপ্টেনের যাবতীয় স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে চলে যাওয়ার অভিযোগ তুললেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। ইন্ডিয়া টিভি টুডে-কে প্রয়াত ক্যাপ্টেনের বাবা রবি প্রতাপ সিংহ জানিয়েছেন, পুত্রবধূ তাঁদের বাড়ি ছেড়ে শুধু চলে যাননি, নিজের স্থানীয় ঠিকানাও বদলে নিয়েছেন।
তাঁর কথায়, “অংশুমানের সম্মতিতেই স্মৃতির সঙ্গে ওর বিয়ে দিয়েছিলাম। বিয়ের পর পর নয়ডায় আমার মেয়ের বাড়িতে থাকছিল পুত্রবধূ। ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই যখন আমরা অংশুমানের মৃত্যুর খবর পেলাম, ওদের লখনউয়ে আসতে বলেছিলাম। ছেলের শেষকৃত্য করেছিলাম গোরক্ষপুরে। কিন্তু সমস্ত আচার-রীতি শেষ হওয়ার পরই গুরদাসপুরে ফিরে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে থাকে স্মৃতি।” ক্যাপ্টেনের বাবা আরও জানিয়েছেন, এর পরই নয়ডায় বাপের বাড়িতে চলে যান পূত্রবধূ। সেখানে যাওয়ার সময় অংশুমানের ছবি, যাবতীয় নথি, পোশাক— সব কিছু সঙ্গে নিয়ে যান। তাঁর আরও অভিযোগ, রাষ্ট্রপতির দেওয়া পুত্রের মরণোত্তর সম্মানও নিয়ে গিয়েছেন পুত্রবধূ স্মৃতি।
রবির কথায়, “যখন অংশুমানকে মরণোত্তর কীর্তি চক্র দেওয়া হয়েছিল, আমার স্ত্রী এবং পুত্রবধূ সেই সম্মান গ্রহণ করে। পুত্রের মরণোত্তর সম্মানকে ছুঁয়েও দেখার সুযোগ হল না।” একই অভিযোগ শোনা গিয়েছেন অংশুমানের মায়ের কণ্ঠেও। রাষ্ট্রপতি ভবনে ৫ জুলাইয়ের সম্মানপ্রদান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পুত্রবধূর বিরুদ্ধে অনুযোগের সুর ধরা পড়ে তাঁর গলায়। ক্যাপ্টেনের মা মঞ্জু সিংহ বলেন, “৫ জুলাই সম্মানপ্রদান অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। যখন অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে আসছিলাম, সেনা অফিসারদের অনুরোধে ছেলের মরণোত্তর সম্মান ছুঁয়ে দেখেছিলাম। কিন্তু তার পরই স্মৃতি আমার হাত থেকে সেই সম্মান নিয়ে নেয়।”
সেনার মেডিক্যাল সার্ভিসের অফিসার ছিলেন অংশুমান। মাস পাঁচেক আগে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের কিছু দিন পরে সিয়াচেনে বদলি হন। স্মৃতি এবং অংশুমান পরস্পরকে কলেজ জীবন থেকে চিনতেন। প্রেমও সে সময় থেকেই। যে দিন ঘটনা ঘটে, তার আগে স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় ফোনে কথা বলেছিলেন। স্মৃতি জানিয়েছেন, সেই ফোনে নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সন্তান নেওয়ার ভাবনা ইত্যাদি বহু বিষয় নিয়ে কথা হয়েছিল। ঠিক তার দিন দুয়েক পরই ফোনে আসে খারাপ খবর। ক্যাপ্টেন অংশুমান আর নেই। প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি স্মৃতি। তার পর জানতে পারেন সিয়াচেনের সেনাছাউনির গোলাবারুদের স্তূপে আগুন লেগে যাওয়ায় তিন সহকর্মী ও চিকিৎসার যন্ত্রপাতি বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ক্যাপ্টেন অংশুমান। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে মরণোত্তর কীর্তি চক্র নেওয়ার পর স্মৃতি বলছিলেন, ‘‘এখনও অনেক সময়ই বিশ্বাস হয় না ও নেই। কিন্তু যখন দেখি এই কীর্তি চক্রটা, তখন বিশ্বাস করতে বাধ্য হই ও সত্যিই আর নেই। তবে ও তো সত্যিকারের ‘হিরো’…।’’ ক্যাপ্টেনের পরিবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর অবশ্য স্মৃতির প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy