Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Haryana Assembly Election 2024

হরিয়ানার কুর্সি দখলে টানাটানি দলিত ভোট নিয়েই

হরিয়ানার ভোটে বরাবরই জাঠ ও জাঠ ছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের ভোটের হিসাব কষা হয়। কিন্তু এ বার হরিয়ানার ভোটে প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে দলিত ভোট।

বৃহস্পতিবার হরিয়ানার কার্নালে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে এক মঞ্চে কুমারী শৈলজা।

বৃহস্পতিবার হরিয়ানার কার্নালে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে এক মঞ্চে কুমারী শৈলজা। —নিজস্ব চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:১০
Share: Save:

প্রথম দৃশ্য: উত্তরপ্রদেশের নাগিনার সাংসদ চন্দ্রশেখর আজ়াদ তাঁর দল আজ়াদ সমাজ পার্টির একমাত্র সাংসদ। এই দলিত নেতা গোটা হরিয়ানায় কপ্টারে চেপে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। তাঁর দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে দুশ্যন্ত চৌটালার জননায়ক জনতা পার্টি বা জেজেপি।

দ্বিতীয় দৃশ্য: উত্তরপ্রদেশের রাজনীতির প্রধান দলিত নেত্রী, বিএসপি প্রধান মায়াবতী হরিয়ানায় অভয় চৌটালার আইএনএলডি ওরফে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দলের সঙ্গে জোট করেছেন। তিনি হরিয়ানায় প্রচারে গিয়ে বলছেন, আইএনএলডি ক্ষমতায় এলে এক জন দলিত উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন।

তৃতীয় দৃশ্য: আজ হরিয়ানার কার্নালে রাহুল গান্ধীর প্রচারে একই মঞ্চে হাজির কংগ্রেসের জাঠ নেতা ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা ও দলিত নেত্রী কুমারী শৈলজা। হরিয়ানায় দশ বছর পরে বিজেপি সরকারকে হটিয়ে কংগ্রেসকে ক্ষমতায় আসতে হলে ভোটবাক্সে হরিয়ানার জাঠ ও দলিত ভোট এককাট্টা হওয়া জরুরি। যেমনটা লোকসভা নির্বাচনে হয়েছিল। আর সেই কারণে হুডা ও শৈলজার একসঙ্গে প্রচারে নামাও জরুরি। টিকিট বিলি নিয়ে ক্ষুণ্ণ শৈলজা গত দু’সপ্তাহ প্রচার থেকে দূরে সরে ছিলেন। আজ শৈলজা হরিয়ানায় রাহুলের প্রচারে হুডার সঙ্গে একই মঞ্চে হাজির হওয়ায় স্বস্তিতে কংগ্রেস শিবির।

চতুর্থ দৃশ্য: হরিয়ানায় ১৭টি আসন তফসিলি জাতি বা দলিতদের জন্য সংরক্ষিত। বিজেপি এ বার দলিতদের মধ্যেও যে সব সম্প্রদায় তুলনামূলক ভাবে বেশি দমিত, সেই সম্প্রদায় থেকে ৯ জনকে প্রার্থী করেছে। বিজেপি মনে করছে, দলিতদের মধ্যে এই বঞ্চিত তফসিলি জাতিগোষ্ঠীভুক্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি। প্রভাবশালী দলিতদের ভোট কংগ্রেসের দিকে গেলেও বঞ্চিত দলিতদের ভোট বিজেপির
দিকে আসবে।

হরিয়ানার ভোটে বরাবরই জাঠ ও জাঠ ছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের ভোটের হিসাব কষা হয়। কিন্তু এ বার হরিয়ানার ভোটে প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে দলিত ভোট। লোকসভা নির্বাচনে জাঠ ভোটের সঙ্গে দলিত ভোটও কংগ্রেসের কাছে এসেছিল। নরেন্দ্র মোদী চারশোর বেশি আসনে জিতে ক্ষমতায় ফিরলে সংবিধান বদলে দেওয়া হবে বলে দলিতদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। তার উপরে বেকারত্ব, সেনায় মাত্র চার বছরের নিয়োগের অগ্নিবীর প্রকল্প, চাষিদের সমস্যা নিয়েও দলিতদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। হরিয়ানায় জাঠদের সংখ্যা জনসংখ্যার ২৫%। দলিতদের ভাগ প্রায় ২১%। দুই ভোটব্যাঙ্কের সিংহভাগ কংগ্রেসের ঝুলিতে পড়ায় লোকসভা ভোটে হরিয়ানার দশটি আসনের মধ্যে পাঁচটি আসন কংগ্রেস বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। এর মধ্যে তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত দু’টি আসনও ছিল। এ বার বিজেপি মনে করছে, জনসংখ্যার ৩৩% ওবিসি-দের সমর্থন বিজেপির দিকে থাকলেও জাঠ-দলিত ভোট কংগ্রেস পেলে ক্ষমতা হাতছাড়া হবে। তাই দলিত ভোটে ভাগ
বসানোও জরুরি।

এই প্রেক্ষিতে উত্তরপ্রদেশের দুই দলিত নেতা-নেত্রী হরিয়ানায় প্রচারে নামায় কংগ্রেস মনে করছে, তাঁরা আসলে বিজেপির হয়েই কংগ্রেসের দলিত ভোট কাটতে চাইছেন। বিজেপির অঙ্গুলিহেলনেই জেজেপি ও আইএনএলডি উত্তরপ্রদেশের দলিত নেতানেত্রীদের হরিয়ানায় ভোটের প্রচারে নিয়ে এসেছে। বিশেষত দুশ্যন্ত চৌটালা কিছু দিন আগে পর্যন্তও হরিয়ানা বিজেপি সরকারের শরিক ও উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। বিজেপির জনপ্রিয়তায় ভাটার টান দেখে বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেন। এখন তিনি দলিত নেতা চন্দ্রশেখরের সঙ্গে জোট করেছেন। কংগ্রেস মনে করছে, ৮ অক্টোবর হরিয়ানার ফল প্রকাশের পরে জেজেপি, আইএনএলডি বিজেপির সঙ্গে জোট করতে পারে।

হরিয়ানায় নরেন্দ্র মোদী প্রচারে গিয়েও দলিত ভোটকে পাখির চোখ করছেন। তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কংগ্রেসের আমলে ২০০৫ ও ২০১০ সালে দলিতদের উপরে হামলা হয়েছিল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি উদয় ভানের পাল্টা যুক্তি, ‘‘মোদী এখন ১৫ বছর আগের ঘটনা মনে করিয়ে দিতে চাইছেন। তাঁর নিজের আমলে দেশে দলিতদের উপরে কেন অত্যাচার হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী আগে তার জবাব দিন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy