Cyrus Poonawalla bought this Lincoln house in Mumbai dgtl
Cyrus Poonawalla
অম্বানীর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ৭৫০ কোটি টাকায় এই মার্কিন দূতাবাস কিনে নেন পুনাওয়ালারা
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:৩৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
কোভিড-টিকা ঘিরে চর্চার আগে পুনাওয়ালাদের কথা জানা লোকের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। তা সে সিরাম যতই উৎপাদন সংখ্যার বিচারে অন্যতম বৃহৎ টিকা নির্মাতা হোক। কিন্তু তা বলে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনের কথা অজানা ছিল না কর্পোরেট দুনিয়ার।
০২১৬
মাত্র ৩০ বছরে সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও-র দায়িত্ব নিয়েছেন আদার পুনাওয়ালা। কোভিড-টিকা নিয়ে চর্চায় বারবারই এখন তাঁর কথা সংবাদে উঠে আসছে। তবে কয়েক বছর আগেও এক বিষেষ কারণে শিরোনামে আসেন পুনাওয়ালারা। বিশাল টাকার বিনিময়ে ঐতিহ্যশালী লিঙ্কন হাউস ওরফে ওয়াঙ্কানার হাউস কিনে নেন তাঁরা। মূলত বসবাসের জন্যই প্রাসাদটি কিনেছিলেন।
০৩১৬
১৯৫৭ সালে দেনার দায়ে ডুবে ওয়াঙ্কানার রাজপ্রাসাদটি মার্কিন সরকারের কাছে ৯৯৯ বছরের জন্য লিজ দেন রাজা প্রতাপ সিংহজি ঝালা। বিনিময়ে মেলে ১৮ লক্ষ টাকা। বহু বছর এই রাজপ্রাসাদই মার্কিন দূতাবাস হিসাবে পরিচিত ছিল মুম্বইবাসীর কাছে। দূতাবাস স্থানান্তরিত হওয়ায় সেই রাজপ্রাসাদের হাতবদল হল আবার।
০৪১৬
২০১১ সালে ঐতিহ্যশালী এই রাজপ্রাসাদ থেকে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে বান্দ্রা-কুর্লা কমপ্লেক্স অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আরও একবার বিক্রির জন্য বাজারে উঠে আসে এই প্রাসাদ। এ বার দাম ধার্য হয় ৮৫০ কোটি টাকা।
০৫১৬
৪ বছর ধরে বিস্তর দর কষাকষির পর ২০১৫ সালে বিক্রি হয় এই প্রাসাদ। ৭৫০ কোটি টাকা দিয়ে লিঙ্কন হাউস ওরফে ওয়াঙ্কানার হাউস কিনে নেন পুণের বিখ্যাত ব্যবসায়ী সাইরাস পুনাওয়ালারা। সাইরাস সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান।
০৬১৬
সিরাম ইনস্টিটিউট মূলত বাচ্চাদের ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা। সাপের কামড়ের প্রতিরোধক তৈরির সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানও হল এই সিরাম ইনস্টিটিউট। ১৯৬৬ সালে সাইরাস নিজেই কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
০৭১৬
প্রতিষেধকের ব্যবসার চৌহদ্দির বাইরে যদি আর কোথাও পুনাওয়ালা পরিবারের সদস্যদের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়, তবে তা অবশ্যই রেসের মাঠে। ঘোড়া তাঁদের ‘প্যাশন’।
০৮১৬
প্রথমে ঘোড়ার রক্তের সিরাম জোগান দিতেন বিভিন্ন টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাকে। সেখান থেকেই প্রতিষেধকের ব্যবসায় পা রাখার ভাবনা। ১৯৬৭ সালে প্রথম তৈরি করলেন টিটেনাসের টিকা। তার পরে একে একে প্রতিষেধক যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস, পোলিয়ো-সহ বিভিন্ন অসুখের। বাকিটা ইতিহাস।
০৯১৬
সাইরাসের কেনা এই বাড়ি এই মুহূর্তে ভারতের সবচেয়ে বেশি দামে কেনা বাড়ি হিসাবে গণ্য করা হয়। ২ একর জমির উপর তৈরি ৫০ হাজার বর্গফুটের এই বিশালাকার প্রাসাদটি মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি এলাকায় ভুলাভাই দেশাই রোডে অবস্থিত।
১০১৬
এক সময়ে মার্কিন দূতাবাস থাকার কারণে এই প্রাসাদের বিষয়ে বিশেষ কিছু জানাতে নারাজ সাইরাসের বড় ছেলে আদার। তিনি জানান, তাঁরা এই বাড়িটিকে নিজেদের বাসস্থান হিসাবেই ব্যবহার করবেন। এই বাড়িটি গ্রেড-৩ হেরিটেজের তকমা পেয়েছে বহু বছর আগেই।
১১১৬
১৯৩৩ সালে এই রাজপ্রাসাদটি তৈরি করেন ব্রিটিশ স্থপতি ক্লড ব্যাটলি। প্রাসাদটি ওয়াঙ্কানারের তৎকালীন রাজা মহারাণা রাজ শ্রী অমর সিংহজির আমলে তৈরি হয় এবং দেশভাগের সময় তিনি ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে ওয়াঙ্কানারকে আলাদা প্রদেশ হিসাবে দাবি ছেড়ে গুজরাতের অন্তর্ভূক্ত হন। তাঁর মৃত্যুর পর রাজা হন তাঁর ছেলে প্রতাপ সিংহজি ঝালা ।
১২১৬
প্রতাপ সিংহজি ঝালা দেনা ও করের দায়ে ডুবে বাধ্য হয়ে মার্কিন সরকারের কাছে ৯৯৯ বছরের জন্য এই প্রাসাদকে লিজ দেন। বিগত কয়েক দশক ধরে এই জমির ক্রমবর্ধমান দাম দেখে রাজ পরিবারের আফশোস করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। প্রতাপ সিংহের ছেলে দিগ্বিজয় সিংহ ঝালা বর্তমানে ওয়াঙ্কানারের রণজিৎ বিলাস প্যালেসে থাকেন।
১৩১৬
রাজপ্রাসাদ ও তার থেকে পরিবর্তিত হয়ে এককালীন মার্কিন দূতাবাসটি সাইরাস পুনাওয়ালা কিনে নিলেও তার দখল নেওয়া সহজ ছিল না। কারণ ২০১৫ সালে পুনাওয়ালারা বাড়িটি কেনার পরই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফ থেকে দাবি করা হয় যে এই জমিটি তাদের, তাই সাইরাস যেন এই জমিটি ছেড়ে দেন। সাইরাসও ছাড়াও পাত্র ছিলেন না।
১৪১৬
আইনি জটের পাশাপাশি ওই বাড়ি হাতে পেতে প্রবল পরাক্রমী মুকেশ অম্বানীদের সঙ্গেও নাকি পাঞ্জা কষতে হয়েছিল তাঁদের।
১৫১৬
এই বাড়িটি ছাড়াও পুণেয় তাঁদের ফার্ম হাউস রয়েছে। সেটিও আক্ষরিক অর্থে প্রাসাদ। কমলা রঙের ইটালিয়ান মার্বেলের মেঝে। দেওয়ালে ভ্যান গঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কিংবদন্তি শিল্পীর দুর্মূল্য ছবি। বাড়িতে লাগানো অধিকাংশ তাকলাগানো ঝাড়বাতি রাজা-মহারাজার কাছে কেনা।
১৬১৬
বড় ছেলে আদারের গাড়িশাল রোলস রয়েস, ফেরারি, মার্সিডিজ়, বেন্টলি, ল্যাম্বরঘিনি, হামারের মতো মহার্ঘ ব্র্যান্ডের আধুনিকতম মডেলে ঠাসা। সঙ্গে ‘ভিন্টেজ’ গাড়ির চোখ কপালে তোলা সম্ভার। আর ঘোড়াশালে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বহু রেসের ট্রফি জেতা অগুনতি ঘোড়া।