মহিলাকে ‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’র চেষ্টা সাইবার অপরাধীদের। প্রতীকী ছবি।
হাসপাতালের কাজে ব্যস্ত ছিলেন শগুফ্তা মালিক। তিনি পেশায় নার্স। উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের এক হাসপাতালে কর্মরত। প্রতি দিনের মতো নির্ধারিত সময়েই গত ৪ ডিসেম্বর কাজে এসেছিলেন শগুফ্তা। সকালের দায়িত্ব সেরে সবে মধ্যাহ্নভোজে বসেছিলেন। হঠাৎই তাঁর মোবাইল ফোনটা বেজে ওঠে। অচেনা নম্বর। খেতে খেতেই ফোনটা ধরেন তিনি। কয়েক সেকেন্ডের কথা। দরদর করে ঘামতে শুরু করলেন শগুফ্তা। হাত-পা যেন ঠান্ডা হয়ে আসছিল। চোখ বিস্ফারিত।
পাশে বসে থাকা সহকর্মী নার্স বিষয়টি লক্ষ করেন। ফোন ধরার পরই শগুফ্তার চেহারার রং বদলে গেল কেন, তা জানতেই জিজ্ঞাসা করেন, কোনও সমস্যা হয়েছে কি না। বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না শগুফ্তা। তাঁকে শান্ত করানোর চেষ্টা করেন সহকর্মী। একটু থিতু হতেই শগুফ্তা ফোনের ও পারের ব্যক্তির বক্তব্য তাঁকে জানান। শগুফ্তার ছেলে রুরকিতে পড়াশোনা করেন। যে অচেনা নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, এক ব্যক্তি নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে শগুফ্তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনার ছেলে রুরকিতে পড়াশোনা করে?’’ শগুফ্তা উত্তরে বলেন, ‘‘হ্যাঁ’’। তার পর আবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘‘আপনার ছেলের বয়স কত?’’ শগুফ্তা জানান, ২০ বছর।
তার পরের কথা শুনেই পায়ের তলার ‘মাটি সরে’ গিয়েছিল শগুফ্তার। ফোনের ওপারের অচেনা কণ্ঠস্বর তাঁকে বলেন, ‘‘আপনার ছেলে ধর্ষণের ঘটনায় ধরা পড়েছে। চার জনের মধ্যে আপনার ছেলেও রয়েছে।’’ এ কথা শুনে শগুফ্তা ওই ব্যক্তির কাছে অনুরোধ করেন, ছেলের সঙ্গে তিনি কথা বলতে চান। সঙ্গে সঙ্গে ‘ছেলের’ কণ্ঠস্বর শুনতে পান শগুফ্তা। কাঁদতে কাঁদতে ‘ছেলে’ বলতে থাকেন, ‘‘মা, আমাকে বাঁচাও।’’ তারক পরই আবার ওই ব্যক্তির কণ্ঠস্বর শোনা যায়। শগুফ্তাকে বলেন, ‘‘ছেলেকে আইনি ঝামেলা থেকে বাঁচাতে চাইলে এক লক্ষ টাকা দিন, কিংবা ৫০ হাজার টাকা।’’ শগুফ্তা তখন ওই ব্যক্তিকে জানান, তাঁর অ্যাকাউন্টে মাত্র ৬০০০ টাকা পড়ে রয়েছে। সেই টাকাটাই দিতে বলা হয় শগুফ্তাকে। তখন ফোনের ওপারে শগুফ্তা শুনতে পান কারা যেন বলছেন, ‘‘স্যর, দেখে তো মনে হচ্ছে ভাল পরিবারের ছেলে। এমনিই ছেড়ে দেবেন?’’ তার পরই ফোন কেটে যায়। আবার ফোন আসে কিছু ক্ষণের মধ্যে। তখন বলা হয়, ‘‘আপনার কাছে টাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, না কি ছেলের ভবিষ্যৎ? এখানে সংবাদমাধ্যমের লোকেরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনি টাকা দিলে ব্যবস্থা করা যাবে। না হলে জেলে যাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না।’’
শগুফ্তার কাছে সব শুনে তাঁর সহকর্মী বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, এটা ভুয়ো ফোন। তার পরই পরামর্শ দেন ছেলেকে ফোন করার জন্য। সহকর্মীর কথা শুনে ছেলেকে ফোন করেন শগুফ্তা। ছেলে ফোন ধরতেই জানান, তিনি ভাল আছেন। ম্যাঙ্গালুরুতে রয়েছেন। তাঁকে সব কথা জানান শগুফ্তা। তখন তাঁর ছেলে বলেন, এই তথ্য মিথ্যা। ছেলেকে ফোন করার পরই আশ্বস্ত হন তিনি। নির্ঘাত কোনও প্রতারকের পাল্লায় পড়েছেন বলে সন্দেহ হয় শগুফ্তার।
বেশ কিছু ক্ষণ পর আবার ফোন আসে শগুফ্তার কাছে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘‘টাকার ব্যবস্থা হল?’’ তখনই শগুফ্তা পাল্টা হুমকির সুরে জানান, তিনি ভুল লোককে বেছেছেন প্রতারণা করার জন্য। হুমকির সুর এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারককে পাল্টা জবাব দিতেই ফোনের ও পারের সুর নরম হয়ে যায়। ধরা পড়ে গিয়েছেন বুঝে এ বার ওই প্রতারক শগুফ্তাকে পাল্টা তাঁদের দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। গোটা ঘটনাটি পুলিশকে জানান শগুফ্তা। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এক সংবাদমাধ্যমকে এই প্রতারণার কাহিনি শুনিয়েছেন শগুফ্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy