Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kerala CPM

অর্থেই অনর্থ, সরকারকেই দুষছে কেরলের সিপিএম

একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্য কেরলে এ বারও ২০টি লোকসভা আসনের মধ্যে একটিতে জয়ী হয়েছে সিপিএম। সেই ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের মতোই।

পিনারাই বিজয়ন।

পিনারাই বিজয়ন। —ফাইল ছবি।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ০৮:৫৫
Share: Save:

রাজ্যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার কারণে লোকসভা ভোটে ফের তাঁদের ফল খারাপ হয়েছে, এই তত্ত্ব প্রকাশ্যে খারিজ করেছিলেন পিনারাই বিজয়ন। কিন্তু কেরলে সিপিএমের প্রাথমিক পর্যালোচনায় উঠে এল, সাধারণ, বিশেষত প্রান্তিক মানুষের স্বার্থবাহী নানা প্রকল্প আটকে যাওয়া এবং আর্থিক বিশৃঙ্খলার মাসুল এ বারের ভোটে দিতে হয়েছে। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নকে দায়ী না করলেও বাম সরকারের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সিপিএমেই। সূত্রের খবর, অর্থনৈতিক বিষয়ে রাজ্য সরকারের ‘পারফরম্যান্স’ নিয়ে সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে বহু নেতা এমন সরব হয়েছেন যে, তার জেরে দলের কাছে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী কে এন বালগোপাল। মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন এবং দলের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য সেই ইচ্ছায় সায় দেননি।

একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্য কেরলে এ বারও ২০টি লোকসভা আসনের মধ্যে একটিতে জয়ী হয়েছে সিপিএম। সেই ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের মতোই। আর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফের ভোট কমেছে প্রায় ১০%। কেরল থেকে এ বার প্রত্যাশা বেশি ছিল বলেই এই ফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিপিএমের পলিটব্যুরো। তার পরে দলের কেরল রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ও রাজ্য কমিটির টানা বৈঠকে এই ভরাডুবি নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়েছে।

সূত্রের খবর, রাজ্য সিপিএমের প্রাথমিক রিপোর্টে অর্থনৈতিক কারণকে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক-সহ বেশ কিছু অংশের মানুষের পেনশন এবং অন্যান্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা সেখানে কিছু দিন ধরেই বন্ধ হয়ে রয়েছে। জনকল্যাণমূলক কিছু প্রকল্প ঘোষণা হলেও তার কাজ এগোয়নি। কেরলে রাজ্য সরকারের ঋণ নেওয়ার ক্ষমতায় বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রশ্নেই ভোটের আগে দিল্লিতে ধর্না দিতে গিয়েছিলেন বিজয়নেরা। কেন্দ্রের ‘অসহযোগিতা’য় রাজ্যকে ভুগতে হচ্ছে, এই প্রচারেও ভোটে কাজ হয়নি।

স্বল্পবিত্ত মানুষের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা মিটিয়ে দিতে বাম সরকার কেন অগ্রাধিকার দেয়নি, সিপিএমের রাজ্য কমিটিতেও এই প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক নেতা। বৈঠকে হাজির থেকে অর্থনৈতিক বিষয়ে প্রবল সমালোচনা শুনে অর্থমন্ত্রী বালগোপালের মনে হয়েছে, দলের নেতাদেরই তাঁর উপরে আস্থা নেই! সিপিএম সূত্রের খবর, তিনি ইস্তফা দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন ও দলের রাজ্য সম্পাদক এম ভি গোবিন্দন তাঁকে নিরস্ত করেছেন। কেরলে বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে আরও আলোচনা হবে আগামী ২৮-৩০ জুন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে। আর এরই মধ্যে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের প্রাক্-বাজেট আলোচনায় গিয়ে বালগোপাল কেন্দ্রীয় বাজেটে কেরলের জন্য ২৪ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজের দাবি জানিয়ে রেখেছেন।

সরকারি কাজের সমালোচনার পাশাপাশিই কেরল রাজ্য কমিটির আলোচনায় উঠে এসেছে, এজাভা সম্প্রদায় এবং অনগ্রসর অংশের সমর্থনের একটা ভাগ বিজেপির দিকে চলে গিয়েছে। যা চিরাচরিত ভাবে বামেদের দিকে থাকতো। তারই পাশাপাশি খ্রিস্টান ভোটের একাংশ পেয়েছে বিজেপি। রাজ্যে তারা আসন পেয়েছে, ভোট বাড়িয়েছে। বিজেপির এই ‘অনুপ্রবেশ’কে গভীর চিন্তার কারণ বলে মনে করছে সিপিএম। আবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে কেন্দ্রে সরকার গড়ার প্রশ্নে কংগ্রেসের উপরে বেশি বিশ্বাস রাখায় মুসলিম ভোটের বড় অংশ রাহুল গান্ধীর দলের দিকে গিয়েছে। দু’দিক থেকেই ক্ষতি হয়েছে বামেদের। সিপিএমের অন্দরে মাথা তুলেছে অন্তর্ঘাতের অভিযোগও। কান্নুরের এক নামী নেতা দলে অভিযোগ করেছেন, কে কে শৈলজা ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রী-পদে ‘মুখ’ হতে পারেন বলেই ভাডাকারা আসনে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে!

তবে এ সব কিছুর পরেও প্রকাশ্যে বিজয়নেরই পাশে থাকছে দল। কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক গোবিন্দনের বক্তব্য, ‘‘মূল বিষয়টা হল, সরকার ও মানুষের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সেটা দ্রুত মেটাতে হবে। জনকল্যাণের প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বুথ স্তর থেকে জনসংযোগ বাড়াতে হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy