ছবি: সংগৃহীত।
বিতর্কের মাঝে দলের রাজ্য সম্পাদককে অসুস্থতাজনিত ছুটিতে পাঠানো হয়েছে সদ্য। বিধানসভা ভোটের আগে এ বার কেরলে মুখ্যমন্ত্রী পদেও মুখ বদলের ভাবনা উঠে এল সিপিএমে। তবে এমন গুরুতর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব দিক ভেবে সতর্ক হয়েই পা ফেলতে চায় তারা।
কেরলে সোনা ও মাদক পাচার চক্রের কাজকর্ম নিয়ে বিতর্ক চলছে কয়েক মাস ধরে। ইডি, এনআইএ, এনসিবি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা সম্ভাব্য সব দিক নিয়ে তদন্ত করছে। এরই মধ্যে সোনা পাচার-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত স্বপ্না সুরেশের একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে স্বপ্নাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, তদন্ত সংস্থা তাঁকে রাজসাক্ষী করার ‘প্রস্তাব’ দিয়েছে, বিনিময়ে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগসাজশের কথা বয়ানে বলতে হবে। ইডি-র হাতে ধৃত কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সচিব এম শিবশঙ্করও এর আগে আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন, তদন্তকারীরা তাঁকে একটি নির্দিষ্ট ‘চিত্রনাট্যে’ পরিচালনা করতে চাইছেন। স্বপ্নার অডিয়ো ক্লিপ নিয়ে হইচই হতেই সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, বিধানসভা ভোটের আগে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ‘রাজনৈতিক স্বার্থে’ ব্যবহার করছে। প্রকাশ্যে এই অবস্থান বজায় রাখলেও তলায় তলায় অন্য কৌশলও ভাবা হচ্ছে সিপিএম শিবিরে।
বাংলায় কুড়ি বছর আগে সিপিএমকে ‘বঙ্গোপসাগরে ফেলা’র ডাক দিয়ে বিরোধীরা যখন মহাজোট গড়েছিল, সেই সময়ে জ্যোতি বসুকে সরিয়ে ভোটের কয়েক মাস আগে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। শেষ পর্যন্ত সেই নির্বাচন সিপিএম উতরে গিয়েছিল নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে রেখেই। কেরলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই ‘মডেল’ কাজে লাগানো যায় কি না, ভাবনা সেই প্রশ্নেই।
সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা, ‘চাপ বা টোপ’ দিয়ে হলেও কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কাউকে দিয়ে সত্যিই মুখ্যমন্ত্রীর নাম বলিয়ে নেওয়া হলে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। তার চেয়ে আগাম চাল দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে পিনারাই বিজয়নের বদলে নতুন কাউকে এনে বিরোধীদের মাত করা যেতে পারে। দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরির পাশাপাশি কেরল শিবিরের এক প্রভাবশালী নেতাও দলের অন্দরে এই প্রস্তাবে সায় দিচ্ছেন। ইডি-র হাতে ছেলের গ্রেফতারের ঘটনার পরে কেরলে রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন ‘অব্যাহতি’ নিয়েছেন। দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশেরও মুখ্যমন্ত্রী-মুখ পরিবর্তন করে চমক দিতে আপত্তি নেই। পাঁচ বছর অন্তর কেরলে সরকার বদলানোই রেওয়াজ। চমক এনে সেই ধারা বদলানো যায় কি না, তা ভাবছেন রাজ্যের নেতাদের একাংশও।
দলীয় সূত্রের খবর, করোনা মোকাবিলায় দেশে-বিদেশে প্রশংসা কুড়নো স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজাকে মুখ্যমন্ত্রী পদে নিয়ে আসতে আগ্রহী কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ। কেরল রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ আবার শিল্প ও ক্রীড়ামন্ত্রী ই পি জয়রাজনকে দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী। দু’জনেই কেরলের সিপিএম রাজনীতিতে প্রবল প্রভাবশালী ‘কান্নুর লবি’র প্রতিনিধি। তবে এ সব ভাবনা শুরু হলেও বিজয়ন নিজে এখনও দলের অন্দরে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছাপ্রকাশ বা ইঙ্গিত কিছুই দেননি বলে সূত্রের খবর।
সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের অভিসন্ধির বিরুদ্ধে কেরলে আমরা লড়াই করছি। তা ছাড়া, পিনারাই শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন, দলেরও গুরুত্বপূর্ণ নেতা। কোডিয়ারির পরে পিনারাইও সরে দাঁড়ালে আগেই হার স্বীকারের বার্তা যাবে কি না, সেই সব দিক ভাল করে ভেবে নিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy