সীতারাম ইয়েচুরি। — ফাইল চিত্র।
১৯৬৪ সালে সিপিআই থেকে সিপিএম তৈরির পর বহু সময়ে, বহু রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে দলে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। হয়েছে ভোটাভুটিও। প্রতিবারই দেখা গিয়েছে, কেরল ও বঙ্গ সিপিএম থেকেছে উল্টো মেরুতে। কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে বাংলা এবং কেরলের ‘সাঁড়াশি চাপে’ সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি। যার ফলস্বরূপ, বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকে সিপিএমের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠে পড়ল।
সিপিএম সূত্রে খবর, সোমবার দুপুর পর্যন্ত দলের অন্দরে যা ‘বোঝাপড়া’, তাতে বুধবার দিল্লিতে এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের বাড়িতে অনুষ্ঠিতব্য চলা ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকে সিপিএমের তরফে কেউ থাকছেন না। সিদ্ধান্তে বিরাট কোনও বদল না হলে ওই কমিটির ১৪ নম্বর সদস্য হিসাবে সিপিএম দলের কারও নামও জানাবে না বুধবারের বৈঠকের জন্য। প্রথম বৈঠকের পর সেই নাম সিপিএম জানাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে বলেই খবর।
সোমবার সকালে সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্য আনন্দবাজার অনলাইনকে স্পষ্টই বলেন, ‘‘আমরা (সমন্বয় কমিটির জন্য) কোনও নাম দিইনি।’’ বুধবারের আগে কি দেবেন? তাঁর সরাসরি জবাব, ‘‘না।’’ কিন্তু তার পরে? এই প্রশ্নে ধোঁয়াশা রেখে তিনি বলেন, ‘‘সেটা জানি না।’’ তবে সিপিএমের কেউ না থাকলেও সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা বুধবারের বৈঠকে থাকবেন বলে জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় স্তরের নেতা পল্লব সেনগুপ্ত। বাম শরিকদের মধ্যে আরএসপিও সমন্বয় কমিটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। আরএসপির এক সর্বভারতীয় নেতা সোমবার জানিয়েছেন, সিপিএমের তরফে তাঁদের একপ্রকার জানিয়েই দেওয়া হয়েছে যে, একে গোপালন ভবন কোনও প্রতিনিধি পাঠাবে না পওয়ারের বাড়ির বৈঠকে।
‘ইন্ডিয়া’র শেষ বৈঠকটি হয়েছিল মুম্বইয়ে। সেই বৈঠকেই ১৪ জনের সমন্বয় কমিটি তৈরি হয়। কিন্তু নাম ছিল ১৩ জনের। বৈঠকের শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছিলেন, ‘‘১৪ নম্বর জায়গাটি সিপিএমের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, পরে তাঁরা নাম দেবেন।’’ মুম্বইয়ের বৈঠক হয়েছিল ১ সেপ্টেম্বর। সমন্বয় কমিটিও গঠিত হয়েছিল সেইদিনই। তার পরে ১০ দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু নাম জানায়নি সিপিএম। অথচ প্রচার, গবেষণা, সামাজিক মাধ্যম সংক্রান্ত ‘ইন্ডিয়া’র যে ‘সাব কমিটি’গুলি তৈরি হয়েছে, সেখানে সিপিএমের প্রতিনিধি রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ওই কমিটির সদস্য তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তৃণমূলের সঙ্গে একই জোটে এবং বৈঠকে থাকা নিয়ে ইতিমধ্যেই দলের অন্দরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সিপিএমে। সেই ‘বিড়ম্বনা’ এড়াতেই কি কমিটির প্রথম বৈঠক কার্যত এড়িয়েই যাচ্ছে সিপিএম? ঘটনাচক্রে, ওই বৈঠকের দিনই অভিষেককে ডেকে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ফলে অফিষেক ওই বৈঠকে থাকতে পারবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অভিষেক নিজেই ডাক পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে তিনি যাবেন না সময় চেয়ে নেবেন, তা নিয়ে সোমবার পর্যন্ত তাঁর তরফে কিছু জানানো হয়নি।
কেন সিপিএম সমন্বয় কমিটিতে কাউকে পাঠাতে চাইছে না?
প্রথমত, আলিমুদ্দিন স্ট্রিট কোনও ভাবেই চায় না, তৃণমূলের সঙ্গে মঞ্চ ভাগাভাগি হোক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ইয়েচুরির ছবি নিয়ে ক্ষুব্ধ নিচুতলার কর্মীরা। তাঁদের বোঝানোর জন্য রাজ্য সিপিএম বিশেষ কর্মসূচি হিসাবে ‘পাঠচক্র’ অনুষ্ঠিত করেছিল শাখায় শাখায়। যেখানে বিবিধ প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়েছিল নেতাদের। ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটিতে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবে অভিষেক থাকায় সেখানে গেলে নতুন করে ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বাংলার নেতাদের। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, পরিচিত কোনও মুখকে না পাঠিয়ে দলের এমন কোনও পলিটব্যুরোর সদস্যকে সিপিএম ওই কমিটির সদস্য করে পাঠাতে পারে, যাঁর বাংলায় তেমন পরিচিতি নেই। কিন্তু গোল বেধেছে অন্য জায়গায়। সূত্রের খবর, কেরল রাজ্য কমিটি আবার স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা চায় না যে কংগ্রেসের সঙ্গে দল কোথাও এক মঞ্চে থাকুক। কারণ, কেরলে শাসক সিপিএমের বিরোধীদল কংগ্রেসই। সেই রাজ্যের ‘বাস্তবতা’র কথা তারা দলকে জানিয়েছে। ফলে কারণ আলাদা হলেও বাংলা-কেরলের জোড়া চাপে পড়তে হয়েছে ইয়েচুরিদের।
সিপিএম নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় অবশ্য বলছেন, তাঁরা মনে করেন না সর্বভারতীয় স্তরে কোনও সমন্বয় কমিটির প্রয়োজন রয়েছে। মুম্বই বৈঠকে ওই কমিটি গঠনের ব্যাপারে ইয়েচুরি আপত্তিই জানিয়েছিলেন বলে খবর। সিপিএমের বক্তব্য, আসন সমঝোতা হবে প্রতিটি রাজ্যের ‘বাস্তবতা’ মেনে। মুম্বইয়ের বৈঠকেও তাই ‘যতদূর সম্ভব’ সমঝোতার কথা বলে রাখা হয়েছে। এই যেখানে বাস্তব, সেখানে সেখানে সর্বভারতীয় স্তরে সমন্বয় কমিটি গড়ার অর্থ কী? অনেকের মতে, সিপিএম ‘ইন্ডিয়া’তে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ লাইনে থাকতে চাইছে। লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে, তত রাজ্যে রাজ্যে কর্মসূচি করা হবে বলে ঠিক হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’র মুম্বই বৈঠকে। তারপর প্রকাশিত হতে পারে যৌথ ইস্তেহারও। তখন সিপিএম কী করবে? কৌতূহল বাড়ছে তা নিয়েও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy