সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।
ছেড়ে আসা মুশকিল। আবার ধরে রাখার মাসুল দিতে হচ্ছে নিজেদের! বিজেপি-বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে এখন এমনই প্রবল বিড়ম্বনায় সিপিএম! এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার কোনও পথও কার্যত নেই বলেই তারা মনে করছে।
প্রয়াত হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের পরম্পরা ধরে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বরাবরই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে জোট রাজনীতির প্রবক্তা। এ বারের লোকসভা নির্বাচনের আগের বছরে বিজেপি-বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ গড়ে ওঠার শুরু থেকেই তিনি এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। কিন্তু ভোটের পরে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ এবং দল হিসেবে সিপিএমের প্রাপ্তি সম্পূর্ণ দু’রকম। বিজেপিকে এ বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার আগেই আটকে দিতে পেরেছে ‘ইন্ডিয়া’। লোকসভায় বিজেপির শক্তি কমিয়ে আনা গিয়েছে, নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় সরকার হয়েছে এনডিএ শরিকদের উপরে নির্ভর করে। কিন্তু সিপিএম তাদের দুই প্রধান রাজ্য কেরল ও বাংলায় খালি হাতে ফিরেছে! কেরলে বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ের ফায়দা নিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস আর বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচনের পরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া’র সফল হওয়ার পিছনে বামেদেরও ভূমিকা আছে কিন্তু তার জন্য মাসুল দিতে হয়েছে দলকেই! এই চর্চা ছড়িয়ে পড়েছে দলের নানা স্তরেই।
কেরলের ফল নিয়ে এ বার বেশিই হতাশ সিপিএম নেতৃত্ব। তিন বছর আগে দক্ষিণী এই রাজ্যে নজির গড়ে ক্ষমতায় ফিরেছিল পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বে এলডিএফ সরকার। কিন্তু তার পরেও লোকসভা নির্বাচনে এসে দলের ঝুলিতে সেই মাত্র একটি আসন! বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় ভোট কমেছে প্রায় ১০%। সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘বিজেপি-বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’র মুখ হবেন রাহুল গান্ধী আবার সেই রাহুলের বিরুদ্ধেই মানুষ আমাদের ভোট দেবেন— এই দু’টো একসঙ্গে হয় না! বিজেপিকে হারিয়ে কেন্দ্রে বিকল্প সরকার হলে তার নেতৃত্বে যখন কংগ্রেসই থাকবে, সেটা ধরে নিয়েই মানুষ ভোট দিয়েছেন। এটা আমাদের বুঝতে হবে। আবার অন্য কিছু করার উপায়ও নেই!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে, কেরলে যেমন কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সমঝোতা সম্ভব নয়, তেমনই বাংলায় তৃণমূলের হাত ধরারও প্রশ্ন নেই। তাই এই গোলকধাঁধা থেকে বেরোনোরও পথ নেই!
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের মতে, ‘‘বিজেপির বিরুদ্ধে সব দলকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার কথা আমরা বহু দিন আগে থেকে বলেছি। কিন্তু যে দু’টো রাজ্যে আমাদের মূল লড়াই, সেই কেরল ও বাংলায় পুরোপুরি ‘ইন্ডিয়া’কে সামনে রাখা যায়নি। খণ্ডিত ভাবে লড়াই হয়েছে। বাংলায় একা লড়েও মমতার দল মানুষের ভরসা পেয়েছে। কেরলে কংগ্রেসের উপরে মানুষ আস্থা রেখেছেন কেন্দ্রে সরকার গড়ার প্রশ্নে।’’ বাংলার এক নেতার সংযোজন, ‘‘এই রাজ্যে যদি আমরা একটা-দু’টো আসনে জয়ী হতে পারতাম, তা হলে একটা জায়গা তৈরি হত। কিন্তু সেটা কিছুই হয়নি! রাতারাতা মানুষ আবার আমাদের দিকে আসবেন, এটা মনে করার কোনও জায়গা কোথায়?’’
সিপিএম সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের প্রবণতার নিরিখে বিচার করলে আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা ও কেরল, দুই রাজ্যেই ‘ইতিবাচক’ কিছু দেখা যাচ্ছে না, এমন আলোচনাই রয়েছে দলের অভ্যন্তরে। এর পরে কেরলে ক্ষমতা ধরে রাখা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আর বাংলায় আসন লাভের আশা এখনও দুরূহ দেখাচ্ছে। এমতাবস্থায় কৃষক, শ্রমিক, ক্ষেতমজুর সংগঠনে নজর এবং শ্রেণি আন্দোলনে জোর দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা চালাতে চান সিপিএম নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy