বারাক ওবামার বদলে জন এফ কেনেডি।
লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় বারাক ওবামার আদলে নরেন্দ্র মোদী বলতেন, ‘‘ইয়েস উই ক্যান ডু। ইয়েস উই উইল ডু ইট।’’ আর আজ সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে কেনেডির অনুকরণ করে বলছেন, ‘‘সরকার মানুষের জন্য কাজ তো করবেই। কিন্তু মানুষকেও দেশের জন্য কাজ করতে হবে।’’ ঠিক যে ভাবে কেনেডি বলেছিলেন, ‘‘জিজ্ঞাসা করবেন না, আপনার দেশ আপনার জন্য কী করতে পারে, জিজ্ঞাসা করুন আপনি দেশের জন্য কী করতে পারবেন?’’
দু’বছরে নজরকাড়া বদল কি তবে এটাই?
তা না হলে উত্তরপ্রদেশের সাহারাণপুরে এসে দু’বছরের রিপোর্ট কার্ড পেশ করার সময় প্রধানমন্ত্রী এ বারেও দাবি করতে পারলেন না, সুদিন (অচ্ছে দিন) এসে গিয়েছে। আর সে কারণেই বোধহয় সরকারের সাফল্যের ফর্দ দেওয়ার সময় বিরোধীদের প্রতি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ব্যঙ্গ-কটাক্ষ উহ্যই থেকে গেল। বরং বললেন, সরকারের কাজে তীক্ষ্ণ নজর থাকলে ভাল।
অথচ যে ভোটমুখী রাজ্য উত্তরপ্রদেশকে মোদী নিজের দু’বছরের সাফল্য মেলে ধরার জন্য বেছে নিয়েছিলেন, সেখানে উৎসাহের কোনও ঘাটতি ছিল না। মানুষ মুখিয়ে ছিল মোদীর মুখ থেকে ঝাঁঝালো বক্তৃতা শুনতে। গত বার সরকারের এক বছর পূর্ণ হওয়ার সময়েও যে ঝাঁঝ ছিল মোদীর শরীরের ভাষায়। কিন্তু এ বারে এক বার বলেই ক্ষাম্ত হলেন, ‘‘দেশ বদলাচ্ছে, কিন্তু কিছু লোকের মস্তিষ্ক বদলাচ্ছে না।’’
কিন্তু মোদী জানেন, দু’বছরের রিপোর্ট কার্ড পেশ করার থেকেও এখন সামনে বড় চ্যালেঞ্জ উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন। তাই নিজেকে ‘ইউপিওয়ালা’ বলেই শুরু করলেন বক্তৃতা। তারপর একে একে গরিব, শোষিত, বঞ্চিত, কৃষক, পীড়িত, মহিলাদের জন্য এ যাবৎ ঘোষিত প্রকল্পের ফিরিস্তি। গত বারের মতো এ বারেও কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করলেন দু’বছরে দুর্নীতিমুক্ত সরকার দেওয়ার। উত্তরপ্রদেশেরই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কৃষক মুখ রাজনাথ সিংহকেও তই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। এ সবের মধ্যে নতুনত্ব শুধু একটাই। চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান, প্রতি মাসের ৯ তারিখে গরিব অন্ত্বঃস্বত্বা মহিলাকে বিনামূল্যে চিকিৎসা করা। আর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবসরের বয়স ৬৫ করার ব্যাপারে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘোষণা।
তবে এ সবের মধ্যে ঘুণাক্ষরেও উচ্চারণ করলেন না ‘অচ্ছে দিন’-এর কথা। যে শব্দগুচ্ছকে মূলধন করে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মোদী। তবে বরাবরের মতো সকলের জন্য উন্নয়নের কথা বলেছেন। জাত-পাত-ধর্মের ঊর্ধে উঠে উন্নয়নের কথা বলেছেন। কিন্তু দু’বছর পূর্তির মঞ্চ হিসেবে সাহারাণপুর বেছে নেওয়ার পিছনে অনেকে অন্য গন্ধ পাচ্ছেন। কয়েক বছর আগে এই সাহারণপুর এলাকাই উত্তপ্ত হয়েছিল গোষ্ঠী সংঘর্ষে। মোদী নিজে না বললেও রাজনাথ আজ হাল্কা করে ছুঁয়ে গিয়েছেন রামের প্রসঙ্গ। আর মোদীর কপ্টার ধুলো উড়িয়ে মাটি ছোঁয়ার আগে মঞ্চ থেকেই বার বার উঠে এসেছে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি। আর এই মঞ্চ থেকেই ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনি তুলেছেন মোদী।
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ কালই বলেছিলেন, উত্তরপ্রদেশে দলের জমি তৈরি আছে। সেটিকেই আরও ঝালিয়ে নিতে হবে। দু’বছরকে সামনে রেখেই এ বারে উত্তরপ্রদেশের যাবতীয় রণনীতি তৈরি হচ্ছে। মোদী আজ এ রাজ্যের চিনি কলগুলিকেও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কৃষকদের উপর কোনও অনাচার বরদাস্ত করা হবে না। আগামী ১৫ দিনে মোদী সরকারের প্রায় ৩০ জন মন্ত্রী রাজ্যের কোণে কোণে গিয়ে ‘কার্পেট বম্বিং’ করবেন। আজ দু’বছর পূর্তির নামে সেই যুদ্ধেরই সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy