প্রথম সংক্রমণ থেকে দেশে মোট আক্রান্ত ছয় লক্ষে পৌঁছতে সময় লেগেছে ১৫৪ দিন। গ্রাফিক-শৌভিক দেবনাথ।
৩ জুন পেরিয়েছিল তিন লাখ। ২ জুলাই পেরলো ছয় লাখ। গত এক মাসে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ল তিন লক্ষ। এক লাখ থেকে দু’লাখ হয়েছিল ১৫ দিনে। দুই থেকে তিন ১০ দিনে। এ ভাবে লাখো আক্রান্ত বৃদ্ধির নিরিখে সময় কমতে কমতে মাত্র পাঁচ দিনে এক লাখ বেড়ে বৃহস্পতিবার দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছয় লাখ পার করল। আক্রান্ত বৃদ্ধির এই পরিসংখ্যান প্রশাসন থেকে বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকদের কপালে ভাঁজ ফেলতে যথেষ্ট। এখন দেশে লকডাউনের কঠোরতা উঠে গিয়েছে। রাস্তাঘাটে ভিড়ও বেড়েছে। তার উপর এ ভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে শেষ পর্যন্ত তা কোথায় গিয়ে থামবে, সেটাই এখন চিন্তার কারণ।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ হাজার ১৪৮ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল ছয় লক্ষ চার হাজার ৬৪১ জন।
আক্রান্ত বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে মোট মৃত্যু সাড়ে ১৭ হাজার পার করে ছুটছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪৩৪ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হল ১৭ হাজার ৮৩৪ জনের। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ৫৩ জনের। জুন জুড়ে রাজধানী দিল্লিতে মৃত্যু ধারাবাহিক ভাবে বেড়ে হয়েছে দু’হাজার ৮০৩। তৃতীয় স্থানে থাকা গুজরাতে মারা গিয়েছেন এক হাজার ৮৬৭ জন। গত মাসের শেষ দিক থেকে তামিলনাড়ুতেও ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছে করোনার জেরে প্রাণহানি। যার জেরে দক্ষিণের এই রাজ্যে মোট মৃত এক হাজার ২৬৪ জন। উত্তরপ্রদেশ (৭১৮), পশ্চিমবঙ্গ (৬৮৩) ও মধ্যপ্রদেশেও (৫৮১) মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া শতাধিক মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে রাজস্থান (৪২১), তেলঙ্গানা (২৬৭), হরিয়ানা (২৪০), কর্নাটক (২৫৩), অন্ধ্রপ্রদেশ (১৯৩), পঞ্জাব (১৪৯) ও জম্মু ও কাশ্মীর (১০৫)।
আক্রান্ত দ্রুত হারে বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটা বেশ স্বস্তিদায়ক। এখন দেশে সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা রোগীর সংখ্যা সক্রিয় করোনা আক্রান্তের (মোট আক্রান্ত থেকে মৃত ও সুস্থ হয়ে ওঠা বাদ দিয়ে) সংখ্যার চেয়ে বেশি। দেশে মোট আক্রান্তের অর্ধেকেরও বেশি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সুস্থ হওয়ার সংখ্যাটা বৃহস্পতিবার সাড়ে তিন লক্ষ পেরলো। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ৮৮১ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট তিন লক্ষ ৫৯ হাজার ৮৬০ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হলেন।
৩০ জানুয়ারি কেরলে দেশের প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। চিনের উহান থেকে ফিরেছিলেন সেই ব্যক্তি। তার পর কেটে গিয়েছে পাঁচ মাস। ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। কোনও কোনও রাজ্যে তা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি রুখে দিয়েছিল কেরল। কিন্তু মহারাষ্ট্রে তা বল্গাহীন ভাবেই বেড়েছে। গোড়া থেকেই এই রাজ্য কার্যত সংক্রমণের শীর্ষে ছিল। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, এই রাজ্য নিয়ে সারা দেশের শঙ্কা বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্ত হলেন এক লক্ষ ৮০ হাজার ২৯৮ জন। তামিলনাড়ু ও দিল্লিও পাল্লা দিয়ে এক লক্ষের দিকে এগোচ্ছে। তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত ৯৪ হাজার ৪৯ ও দিল্লিতে ৮৯ হাজার ৮০২। দেশের মোট সংক্রমণের মধ্যে ৬০ শতাংশই এই তিনটি রাজ্য থেকে।
৩৩ হাজার ২৩২ সংক্রমণ নিয়ে গুজরাত ও ২৪ হাজার ৫৬ আক্রান্ত নিয়ে উত্তরপ্রদেশ চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে। সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে কুড়ি হাজারের দিকে ছুটছে পশ্চিমবঙ্গ (১৯,১৭০), রাজস্থান (১৮,৩১২) ও তেলঙ্গানা (১৭,৩৫৭)। কর্নাটক (১৬,৫১৬), অন্ধ্রপ্রদেশ (১৫,২৫২), হরিয়ানা (১৪,৯৪১), মধ্যপ্রদেশ (১৩,৮৬১) ও বিহারেও (১০,২৪৯) বেড়ে চলেছে সংক্রমণ। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে অসম, জম্মু ও কাশ্মীর, ওড়িশা, পঞ্জাব, কেরলের মতো রাজ্যগুলি।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
লকডাউন উঠে যাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গেও সংক্রমণের হার বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬১১ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এ রাজ্যে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হলেন ১৯ হাজার ১৭০ জন। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মোট ৬৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজ্যে। সাড়ে ১২ হাজার আক্রান্ত সুস্থও হয়েছেন রাজ্যে।
প্রথম সংক্রমণ থেকে দেশে মোট আক্রান্ত ছয় লক্ষে পৌঁছতে সময় লেগেছে ১৫৪ দিন। আক্রান্তের গণ্ডিকে লক্ষ হিসাবে ভাগ করলে দেখা যাবে, শূন্য থেকে এক লক্ষে পৌঁছতে লেগেছিল ১১০ দিন। এই বৃদ্ধিকালের সময় দেশ জুড়ে জারি ছিল লকডাউন। কিন্তু এক লক্ষ থেকে সংক্রমণ দু’লক্ষে পৌঁছতে সময় নিল মাত্র ১৫ দিন। তিন লক্ষে ১০ দিন, চার লক্ষে ৮ দিন, পাঁচ লক্ষে ৬ দিন ও ছয় লক্ষে পাঁচ দিন। এক লক্ষ পৌঁছনোর সঙ্গে তিন বা চার লক্ষ পৌঁছনোর তুলনা হয় না। কিন্তু এই পরিসংখ্যান দেখিয়ে দিচ্ছে সংক্রমণ বৃদ্ধির গতি। দেশে এখন আনলকের শিথিলতা। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ায় বাজার-হাট, গণপরিবহণে লোকের ভিড় টের পাওয়া যাচ্ছে। যার জেরে অপরের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনাও বেড়েছে। পাশাপাশি দেশে প্রতি দিন নতুন করে আক্রান্ত হওয়া বাড়ছে। এই হারে যদি বাড়তে থাকে, তা হলে সাত লক্ষে পৌঁছতে আরও কম সময় লাগবে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ।
সংক্রমণ বৃদ্ধি, মৃত্যু উদ্বেগ বাড়ালেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের নিরিখে ভারত স্বস্তির জায়গাতেই রয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকার থেকে ভারতে মৃত্যুর হার অনেক কম। কেন কম, সেটা গবেষণার বিষয়। তবে এই পরিসংখ্যান স্বস্তিদায়ক। আবার দেশের মোট জনসংখ্যার হিসাবে সংক্রমণ ধরলে, ভারত বেশ ভাল জায়গায় রয়েছে। ইউরোপের কম জনসংখ্যার দেশগুলি যত সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, সেই তুলনায় ভারতে মোট আক্রান্ত এখনও অনেক কম। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা আমেরিকা ও ব্রাজিলের থেকে ভারতের মোট সংক্রমিতের ফারাকটা বিশাল। তবে তৃতীয় স্থানে থাকা রাশিয়ার অনেকটাই কাছে এসে গেল ভারত। মৃত্যুর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই। ব্রাজিল, আমেরিকা তো বটেই। স্পেন, ইটালি, ফ্রান্স, ব্রিটেনের মতো কম জনসংখ্যার দেশগুলির তুলনায় ভারতে মৃত্যু এখনও পর্যন্ত অনেকটাই কম।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy