ছবি: পিটিআই।
করোনা-সঙ্কট থেকে অর্থনীতিকে উদ্ধারের উপায়? এ বার মঙ্গলগ্রহে বেসরকারি সংস্থাও মহাকাশযান পাঠাতে পারবে!
রুটিরুজি হারিয়ে লাখে লাখে পরিযায়ী শ্রমিক শহর থেকে গ্রামের পথে হাঁটছেন। অর্থনীতির সব ক্ষেত্রেই কাজ হারানো মানুষের সংখ্যা রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দাবি উঠেছিল, এই সব মানুষের হাতে কিছু কেন্দ্র কিছু নগদ তুলে দিক। শনিবারও সে পথে না-হেঁটে আটটি ক্ষেত্রে ‘কাঠামোগত সংস্কার’-এর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল মোদী সরকার। ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার চতুর্থ দিনে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানালেন, এ বার বেসরকারি সংস্থাও মহাকাশ অভিযানে অংশ নিতে পারবে।
অর্থনীতিবিদ থেকে বিরোধীদের প্রশ্ন, কাঠামোগত সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু তার সঙ্গে অতিমারি মোকাবিলার কী সম্পর্ক? এখনই বা এ সব ঘোষণা কেন?
অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, “দেশকে আত্মনির্ভর হতে হলে আন্তর্জাতিক বাজারে কঠিন প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হওয়ার জন্যও তৈরি হতে হবে।’’ দিল্লির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি-র অর্থনীতিবিদ লেখা চক্রবর্তীর মন্তব্য, “আশু প্রয়োজনীয় ত্রাণের বদলে আজকের ঘোষণাগুলো আমার কাছে কর্পোরেট ক্ষেত্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বলে মনে হল।’’
আরও পড়ুন: সরকারি ঘোষণা স্বস্তি দিচ্ছে না বিমান ক্ষেত্রকে
আজ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা কমাতে ৪৯ শতাংশের বদলে ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত সরাসরি বিদেশি লগ্নিতে ছাড় দেওয়া ও অনেক ক্ষেত্রে আমদানি বন্ধ করা, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বেসরকারিকরণ, বিমানযাত্রার খরচ কমাতে বেসরকারি বিমান চলাচলের জন্য ভারতের আরও অনেকখানি আকাশপথ খুলে দেওয়ার মতো সংস্কার ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। অন্যান্য সংস্কারের সিদ্ধান্তের মধ্যে আরও আধ ডজন বিমানবন্দরকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া, বেসরকারি সংস্থার জন্য কয়লা ক্ষেত্র খুলে দেওয়ার মতো ঘোষণা আগেই হয়েছিল।
বিনিয়োগ বাড়াতে
• বিনিয়োগের ছাড়পত্রে গতি আনতে সচিবদের বিশেষ কমিটি।
• বিনিয়োগের জন্য প্রকল্প চিহ্নিত করা, লগ্নিকারী ও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে প্রত্যেক মন্ত্রকে আলাদা দফতর।
• বিনিয়োগ টানায় প্রতিযোগিতা বাড়াতে রাজ্যগুলির ক্রমতালিকা।
• সৌরবিদ্যুৎ-সহ বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রের জন্য ভর্তুকি প্রকল্প।
• রাজ্যের শিল্পতালুকগুলির উন্নতিতে প্রকল্প।
প্রতিরক্ষা
• প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে অনুমোদন ছাড়াই বিদেশি লগ্নি
৪৯% থেকে বাড়িয়ে ৭৪%।
• কিছু অস্ত্র ও সরঞ্জামের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা। তালিকা শীঘ্রই। সেগুলি শুধু দেশীয় সংস্থার থেকেই কিনতে হবে। লক্ষ্য, আমদানির খরচ কমানো।
• দেশীয় সংস্থার থেকে কাঁচামাল কেনায় পৃথক তহবিল।
• অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডকে কর্পোরেট করা হবে।
সামাজিক পরিকাঠামো
• হাসপাতাল-সহ সামাজিক পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার ভাগ ২০% থেকে বাড়িয়ে ৩০%। বরাদ্দ ৮১০০ কোটি টাকা।
মহাকাশ
• উপগ্রহ ও মহাকাশ
নির্ভর পরিষেবায় বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ।
• পরিষেবার উন্নতির জন্য ইসরোর পরিকাঠামো ব্যবহার করতে পারবে বেসরকারি সংস্থা।
ভারতকে বিমানের মেরামতি শিল্পের কেন্দ্র করে তুলতে আজ অর্থমন্ত্রী যে সব ঘোষণা করেন, তা-ও পুরনো। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আরও বিদেশি লগ্নি, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বেসরকারিকরণ করে অম্বানী বা আদানি গোষ্ঠীকে সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছে কি না, সে প্রশ্নও উঠছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “একটি সংস্থাই এর থেকে লাভবান হবে।’’ সেই সংস্থার নামের আদ্যক্ষর ‘এ’ দিয়ে শুরু ইঙ্গিত করে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এটা হল এ-নির্ভর ভারত।’’
আরও পড়ুন: দেশীয় উড়ান পরিষেবা চালু কি ২০ বা ২১শে?
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নিতে ছাড় বৃদ্ধিতে কতখানি লাভ হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ক্ষেত্র বিশেষে এমনিতেই ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নির ছাড় দেওয়া রয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার আলাদা বাজেট তৈরি হবে। কোন যুদ্ধাস্ত্র আমদানি করা হবে না, তার ‘নেগেটিভ লিস্ট’ তৈরি হবে।
অর্থনীতিবিদদের মত ছিল, করোনা-সঙ্কট ও লকডাউনের ধাক্কা থেকে অর্থনীতিকে উদ্ধার করতে কেন্দ্র সরকারি খরচ বাড়াক। মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দিক। তাতে বাজারের চাহিদা বাড়বে। শিল্পমহল ও অর্থনীতি, উভয়েরই লাভ হবে। তা না করে শুধুই কাঠামোগত সংস্কারে যে শিল্পমহলও সন্তুষ্ট নয়, তা স্পষ্ট। ফিকি-র সভানেত্রী সঙ্গীতা রেড্ডি সংস্কারের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করলেও বলেন, “আমরা মানুষের হাতে আরও নগদ টাকা তুলে দেওয়ার প্রত্যাশা করছি।’’ প্রতিরক্ষা সংস্থা ভারত ফর্জের কর্ণধার বাবা কল্যাণীর মন্তব্য, ‘‘সরকারের উচিত এ দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার বরাত দেওয়া। তা হলে দেশের কারখানা থেকে ছোট-মাঝারি শিল্পও চাঙ্গা হবে।’’ নির্মলার ঘোষণার পরে সঙ্ঘ পরিবারের বিএমএস অভিযোগ করে, প্রতিরক্ষা, কয়লার মতো ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ জাতীয় স্বার্থের বিরোধী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy