Advertisement
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus Lockdown

কিছু ছাড়ে সুরাহা দেখছে না শিল্পমহল

নাম-কে-ওয়াস্তে কিছু ছাড় দিয়ে অর্থনীতির হাল ফিরবে না বলে মন্তব্য করে শিল্পমহল ফের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াইয়ের দাবি তুলেছে।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০৫:২৩
Share: Save:

শরীরে অন্য রোগ থাকলে করোনাভাইরাস আরও মারাত্মক চেহারা নেয়। অর্থনীতির ক্ষেত্রেও সে কথা সত্যি। অতিমারির আগেই অর্থনীতির ঝিমুনি রোগ ধরেছিল। এ বার প্রায় পৌনে দু’মাসের লকডাউনের জেরে অর্থনীতির শরীরে অসুখ জাঁকিয়ে বসতে চলেছে বলেই শিল্পমহল থেকে অর্থনীতিবিদদের অভিমত। তাঁদের বক্তব্য, এই অসুখ কাটাতে হলে বড় শিল্প তো বটেই, ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্যও বিশেষ সুরাহা প্রয়োজন। এই অবস্থায় আজ মূলত কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সমস্যা নিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ কেন্দ্রীয় কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

তৃতীয় দফায় আরও দু’সপ্তাহ লকডাউন ঘোষণা করলেও তারই মাঝে যতটা সম্ভব আর্থিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে বেশ কিছু ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। কিন্তু শিল্পমহল মনে করছে, এই সব ছাড় দিয়েও লাভ কিছু হবে না। কেন?

কারণ, প্রথমত, কেন্দ্র বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দিলেও জেলা প্রশাসন ও পুলিশ যে সেই মতোই চলবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। রেড, গ্রিন, অরেঞ্জ জ়োনের কোথায়, কোন ক্ষেত্রে, কী কী ছাড়, তা নিয়ে এমনিতেই জটিলতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, জেলা প্রশাসনের হাতে ছাড় কমানোর ক্ষমতাও রয়েছে।

আরও পড়ুন: কতটা পাল্টাচ্ছে করোনা, দেখবে আইসিএমআর

দ্বিতীয়ত, এক দিকে আর্থিক কর্মকাণ্ডে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার বন্দোবস্ত হচ্ছে। তা হলে কাজ শুরু হবে কাদের দিয়ে? স্থানীয় শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মস্থলে যাওয়াটাও সমস্যার। কারণ, অধিকাংশ জায়গায় পরিবহণ ছাড় পায়নি। বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট বি বি চট্টোপাধ্যায়, ভারত চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এন জি খৈতানদের মতে, গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় অফিস খুললেও ক’জন কর্মী কাজে আসতে পারবেন তা নিশ্চিত নয়। সকলের জন্য গাড়ির বন্দোবস্ত করা বা তার ছাড়পত্র পাওয়ার অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাই নিয়ন্ত্রিত ভাবে হলেও কিছু গণ-পরিবহণ চালু করা দরকার।

তৃতীয়ত, শপিং মল, হোটেল-রেস্তঁরা, সিনেমা—এমন বহু ক্ষেত্র, যেখানে অনেক মানুষ কাজ করেন, সেখানে কোনও ছাড় নেই। চর্তুথত, দিল্লি-কলকাতা-মুম্বইয়ের মতো মেট্রো শহর ও অধিকাংশ বড় শহর ‘রেড জ়োন’-এ থাকায় সেখানে নির্মাণ, আবাসন বা অন্য কোনও কাজ শুরু হচ্ছে না।

ফলে নাম-কে-ওয়াস্তে কিছু ছাড় দিয়ে অর্থনীতির হাল ফিরবে না বলে মন্তব্য করে শিল্পমহল ফের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াইয়ের দাবি তুলেছে। বণিকসভা সিআইআই-এর ডিজি চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “অন্তত ৬ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ দরকার। জিডিপি-র ৩ শতাংশ। যাতে অর্থনীতির ইঞ্জিনে জ্বালানি মেলে।”

আরও পড়ুন: এক দিনে গোটা দেশে সংক্রমিত প্রায় আড়াই হাজার

এ দিনের বৈঠকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কৃষি ক্ষেত্রে নগদ এবং ঋণের জোগান বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছেন মোদী। বলেছেন, শিল্প ক্ষেত্রে আয়যোগ্য কাজের সুযোগ বাড়াতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে অর্থনীতির স্থিতাবস্থা। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে দ্রুত কাজ শুরু করার কথাও বলেছেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, গত চল্লিশ দিন ধরে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে আটকে রাখার পরে অর্থনৈতিক কাজকর্ম শুরুর মুখে কেন তাঁদের বাড়ি ফেরানো হচ্ছে? তা হলে নির্মাণ, আবাসন বা শিল্পে কাজ শুরু হবে কী করে? অ্যাসোচ্যামের পূর্বাঞ্চলীয় চেয়ারম্যান এস কে সামন্তের আশঙ্কা, বাড়ি চলে আসা পরিযায়ী শ্রমিকেরা যে হেতু চট করে কাজে ফিরতে পারবেন না, তাই কর্মী-সমস্যার মুখে পড়তে হবে তাঁদের উপরে নির্ভরশীল বহু শিল্পকে। একই মতের শরিক ফেডারেশন অব করোগেটেড বক্স ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোশিয়েসনের কর্তা অচ্যুত চন্দ্রও।

বামপন্থী কর্মী সংগঠনগুলির একাংশের দাবি, আসলে ওই শ্রমিকদের ক্ষোভ আর সামাল দেওয়া যাবে না আঁচ করেই তাঁদের ফেরানোর দায় রাজ্যগুলির উপরে চাপিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের প্রশ্ন, ‘‘বিনা পরীক্ষায়, বিনা আর্থিক সহায়তায় যদি তাঁদের বাড়িই ফেরানো হবে, তবে এত কষ্ট করে এত দিন আধপেটা খেয়ে, ত্রাণশিবিরে থাকতে বাধ্য করা হল কেন?”

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy