দেখভাল: নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় দাঁড়িয়ে থাকা বিমানের। নিজস্ব চিত্র
করোনা পরিস্থিতিতে দু’মাস বসে থাকার পরে অন্তর্দেশীয় বিমান চালু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই বিপর্যয়ের মুখে পাকিস্তান। ৯১ জন যাত্রী ও ৮ জন কর্মীকে নিয়ে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের বিমানটি গত শুক্রবার করাচিতে মুখ থুবড়ে পড়ার ঘটনার পরে এ দেশেও আশঙ্কা দানা বাঁধছে। লকডাউনের জেরে এ দেশে গত দু’মাস বসে ছিল যে বিমানগুলি, তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকঠাক হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আগামী ২৫ মে থেকে দেশে উড়ান চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এত দিন না ওড়ার জন্য ওই সব বিমানে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা যেতে পারে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।
ভারতের বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) অবশ্য আশ্বস্ত করে জানিয়েছে, গত দু’মাস ধরে বিমানগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। তার রিপোর্টও নিয়মিত জমা পড়েছে ডিজিসিএ-র কাছে। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তবেই কোনও বিমানকে আকাশে ওড়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
বিমান মন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন বিমান বসে থাকার ঘটনা ভারতে এই প্রথম নয়। এর আগে কিংফিশার সংস্থা বা জেট যখন তাদের পরিষেবা বন্ধ করেছিল, সে সময়ে তাদের বিমানগুলিরও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। তবে একসঙ্গে এতগুলি বিমান বসে থাকার ঘটনা আগে ঘটেনি।
মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রতিটি বিমান কী ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে, তার একটি নিয়মাবলী পাঠিয়ে দেয় সেই বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থা। সেই নিয়মাবলী অনুযায়ীই সেই সংস্থার তৈরি বিমানগুলি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়। আবার বিমানের বয়স বাড়লে তার দেখভালের জন্য রয়েছে আলাদা কিছু নিয়ম।
শনিবার ডিজিসিএ-র এক কর্তা জানিয়েছেন, বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ সাধারণত দু’ধরনের। কোনও বিমান যখন নিয়মিত উড়ছে, তখন তার দেখভাল করা হয় এক ভাবে। আর সেই বিমানই যখন দীর্ঘদিন বসে থাকে, তখন তার দেখাশোনা করার জন্য থাকে আলাদা নিয়ম। প্রথম ক্ষেত্রে প্রতি বার বিমান উড়ে কোথাও নামার পরে এক বার করে তার ইঞ্জিন পরীক্ষা করা হয়। পাশ করলে বিমানটি আবার অন্য গন্তব্যে উড়ে যায়। সারা দিন ওড়ার পরে রাতে কোনও বিমানবন্দরে নামলে সেখানেও আরও এক বার পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে এক বার করে ওই বিমানটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। আবার ১০০ ঘণ্টা ওড়ার পরেও ওই বিমানটির রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে।
কিন্তু গত দু’মাস ধরে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা বিমানগুলিকে প্রধানত সংরক্ষণ করে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছিল। একে বিমান পরিবহণের ভাষায় ‘প্রিজারভেশন মেন্টেন্যান্স’ বলা হয়। একটি উড়ান সংস্থার এক সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, সংরক্ষণ করার অর্থ ব্যাটারি সংযোগ খুলে ইঞ্জিন ঢেকে নিয়ে বিমানের সমস্ত চ্যানেল বা ফুটো বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সাত দিন পরে সমস্ত আবার লাগিয়ে ইঞ্জিন চালু করে পরীক্ষা চলে। ওই ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “গাড়ি দীর্ঘদিন বসে থাকলে যেমন মাঝেমধ্যে গাড়ি চালু করে দেখে নেওয়া হয় ইঞ্জিন ঠিক আছে কি না, অনেকটা সে রকমই।” সাত দিনের মাথায় পরীক্ষা করে আবার সংরক্ষণ শুরু হয়। ফের ১৫ দিন এবং ৩০ দিনের মাথায় এক বার করে সমস্ত চালু করে পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয়, বিমানের সব কিছু ঠিকঠাক আছে কি না। এই প্রতিটি পরীক্ষার তথ্য
ফাইলবন্দি করে পাঠানো হয় ডিজিসিএ-র কাছে। এই ভাবে সংরক্ষিত বিমান চাইলেই হঠাৎ করে ওড়ানো যায় না। তার জন্য কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা সময় দিতে হয় ইঞ্জিনিয়ারদের।
উড়ান সংস্থাগুলি সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী ২৫ মে আকাশে ডানা মেলার আগে আজ, রবিবার সমস্ত বিমান চালু করে দেখা হবে। এমনকি ট্যাক্সিওয়েতে নিয়ে গিয়ে বিমানগুলিকে গড়িয়েও পরীক্ষা করে নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy