Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19

শেষ ছ’দিনে এক লক্ষ! মহারাষ্ট্রেই আক্রান্ত দেড় লক্ষাধিক

গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৫৫২ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল পাঁচ লক্ষ আট হাজার ৯৫৩ জন।

প্রথম সংক্রমণ থেকে দেশে মোট আক্রান্ত পাঁচ লক্ষে পৌঁছতে সময় লেগেছে ১৪৯ দিন। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

প্রথম সংক্রমণ থেকে দেশে মোট আক্রান্ত পাঁচ লক্ষে পৌঁছতে সময় লেগেছে ১৪৯ দিন। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২০ ১০:০৭
Share: Save:

দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেল। এক থেকে দুই লাখ ১৫ দিন। দুই থেকে তিন ১০ দিন। তিন থেকে চার ৮ দিন। চার থেকে পাঁচ লাখে পৌঁছতে লাগল মাত্র ৬ দিন। এ ভাবেই দেশে বেড়েছে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা। দ্রুত হারে আক্রান্ত বৃদ্ধির এই পরিসংখ্যান প্রশাসন থেকে বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকদের কপালে ভাঁজ ফেলতে যথেষ্ট। এখন দেশে লকডাউনের কঠোরতা উঠে গিয়েছে। লোকাল ট্রেন, মেট্রো এবং আন্তর্জাতিক উড়ান বাদে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় পুরোটাই চালু। তাই রাস্তাঘাটে ভিড়ও বেড়েছে। তার উপর এ ভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে শেষ পর্যন্ত তা কোথায় গিয়ে থামবে, সে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার কারণ রয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৮ হাজার ৫৫২ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এক দিনে আক্রান্তের নিরিখে যা সর্বোচ্চ। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল পাঁচ লক্ষ আট হাজার ৯৫৩ জন।

আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুও ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৮৪ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হল ১৫ হাজার ৬৮৫ জনের। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে সাত হাজার ১০৬ জনের। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানী দিল্লিতে মৃত্যু ধারাবাহিক ভাবে বেড়েছে। করোনার প্রভাবে সেখানে মোট দু’হাজার ৪৯২ জনের মৃত্যু হল। তৃতীয় স্থানে থাকা গুজরাতে মারা গিয়েছেন এক হাজার ৭৭১ জন। চলতি মাসে তামিলনাড়ুতেও ধারাবাহিক ভাবে বাড়ল করোনা প্রাণহানি। যার জেরে বেশ কয়েকটি রাজ্যকে টপকে তালিকার উপরের দিকে উঠে এসেছে দক্ষিণের এই রাজ্য। সেখানে এখনও অবধি ৯৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পরই তালিকায় রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (৬৩০), পশ্চিমবঙ্গ (৬১৬) ও মধ্যপ্রদেশ (৫৪৬)। এ ছাড়া শতাধিক মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে রাজস্থান (৩৮০), তেলঙ্গানা (২৩৭), হরিয়ানা (২১১), কর্নাটক (১৮০), অন্ধ্রপ্রদেশ (১৪৮) ও পঞ্জাব (১২২)।

৩০ জানুয়ারি কেরলে দেশের প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। চিনের উহান থেকে ফিরেছিলেন সেই ব্যক্তি। তার পর কেটে গিয়েছে চার মাসেরও বেশি। ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। কোনও কোনও রাজ্যে তা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি রুখে দিয়েছিল কেরল। কিন্তু মহারাষ্ট্রে তা বল্গাহীন ভাবেই বেড়েছে। গোড়া থেকেই এই রাজ্য কার্যত সংক্রমণের শীর্ষে ছিল। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, এই রাজ্য নিয়ে সারা দেশের শঙ্কা বেড়েছে। দেড় লক্ষ সংক্রমণ ও সাত হাজারের উপর মৃত্যু নিয়ে দেশের শীর্ষে রয়েছে সে। গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ হাজার ২৪ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্ত হলেন এক লক্ষ ৫২ হাজার এত জন। দিল্লিতেও রোজদিন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বেশ দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে সেখানে। এখনও অবধি মোট আক্রান্ত ৭৭ হাজার ২৪০ জন আক্রান্ত হয়েছেন দেশের রাজধানীতে। তৃতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত ৭৪ হাজার ৬২২ জন। চতুর্থ স্থানে থাকা গুজরাতে মোট আক্রান্ত ৩০ হাজার ৯৫ জন।

উত্তরপ্রদেশও আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। সেখানে মোট আক্রান্ত ২০ হাজার ৯৪৩ জন। করোনা সংক্রমণের হিসাবে এর পর রয়েছে রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্নাটক। এই সব রাজ্যগুলি ১০ হাজারের গণ্ডি পার করে এগিয়ে চলেছে। রাজস্থান (১৬,৬৬০), পশ্চিমবঙ্গ (১৬,১৯০), হরিয়ানা (১২,৮৮৪), মধ্যপ্রদেশ (১২,৭৯৮), তেলঙ্গানা (১২,৩৪৯), অন্ধ্রপ্রদেশ (১১,৪৮৯) ও কর্নাটকে (১১,০০৫) জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

লকডাউন শিথীল হতে পশ্চিমবঙ্গেও বাড়ছে সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৪২ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এ রাজ্যে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হলেন ১৬ হাজার ১৯০ জন। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মোট ৬১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজ্যে।

প্রথম সংক্রমণ থেকে দেশে মোট আক্রান্ত পাঁচ লক্ষে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ১৪৯ দিন। আক্রান্তের গন্ডিকে লক্ষ হিসাবে ভাগ করলে দেখা যাবে, শূন্য থেকে এক লক্ষে পৌঁছতে লেগেছিল ১১০ দিন। এই বৃদ্ধিকালের সময় দেশ জুড়ে জারি ছিল লকডাউন। কিন্তু এক লক্ষ থেকে সংক্রমণ দু’লক্ষে পৌঁছতে সময় নিল মাত্র ১৫ দিন। তিন লক্ষে ১০ দিন, চার লক্ষে ৮ দিন ও পাঁচ লক্ষে ৬ দিন। এক লক্ষ পৌঁছনোর সঙ্গে দু’লক্ষ বা তিন লক্ষ পৌঁছনোর তুলনা হয় না। কিন্তু এই পরিসংখ্যান দেখিয়ে দিচ্ছে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রবণতা।

করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে আক্রান্তের সংস্পর্শে এলে এই রোগ ছড়ায়। তাই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে, সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। সে জন্যই সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেশে এখন লকডাউনের কড়াকড়ি নেই। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ায় বাজার-হাট, গণপরিবহনে বেড়েছে লোকের ভিড়। বেড়েছে একে অপরের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনাও । দেশে প্রতিদিন নতুন করে আক্রান্ত হওয়া বাড়ছে। এই হারে যদি বাড়তে থাকে তাহলে ছয় লক্ষে পৌঁছতে আরও কম সময় লাগবে।

সংক্রমণ বৃদ্ধি, মৃত্যু উদ্বেগ বাড়ালেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের নিরিখে ভারত স্বস্তির জায়গাতেই রয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকার থেকে ভারতে মৃত্যুর হার অনেক কম। কেন কম, সেটা গবেষণার বিষয়। তবে এই পরিসংখ্যান স্বস্তিদায়ক। আবার দেশের মোট জনসংখ্যার হিসাবে সংক্রমণ ধরলে, ভারত বেশ ভাল জায়গায় রয়েছে। ইউরোপের কম জনসংখ্যার দেশগুলি যত সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, সেই তুলনায় ভারতে মোট আক্রান্ত অনেক কম। সারা বিশ্বে জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হলেও সংক্রমণের নিরিখে ভারত এখনও চতুর্থ স্থানে। যদিও প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা আমেরিকা ও ব্রাজিলের থেকে ভারতের মোট সংক্রমিতের ফারাকটা বিশাল। মোট মৃত্যুর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই। ব্রাজিল, আমেরিকা তো বটেই। স্পেন, ইটালি, ফ্রান্স, ব্রিটেনের মতো কম জনসংখ্যার দেশগুলির তুলনায় ভারতে মৃত্যু এখনও অনেক কম।

এর পাশাপাশি ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটা বেশ স্বস্তিদায়ক। এখন দেশে সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা রোগীর সংখ্যা সক্রিয় করোনা আক্রান্তের (মোট আক্রান্ত থেকে মৃত ও সুস্থ হয়ে ওঠা বাদ দিয়ে) সংখ্যার চেয়ে বেশি। দেশে মোট আক্রান্তের অর্ধেকেরও বেশি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সুস্থ হওয়ার সংখ্যাটা ইতিমধ্যেই তিন লক্ষ ছুঁইছুঁই। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ২৪৪ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট দু’লক্ষ ৯৫ হাজার ৮৮১ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হলেন।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid-19 Coronavirus Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE