অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ। —ফাইল চিত্র।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের জেরে উদ্ভূত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে গরিবদের রক্ষা করা ও তাঁদের খাদ্যের অধিকার নিয়ে তৎপর হলেন অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ। গরিবদের সঙ্কট নিরসনে ‘খাদ্যের অধিকার অভিযান (ঝাড়খণ্ড)’ নামে একটি সংগঠন বেশ কিছু প্রস্তাব রেখেছে ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন সরকারের কাছে। বেলজিয়ামে জাত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ দ্রেজ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ঝাড়খণ্ডের গরিবদের কথা ভেবে প্রস্তাবগুলি দেওয়া হলেও, এটি শুধু এক রাজ্যের বিষয় নয়। অন্যান্য রাজ্যের সরকারেরও বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দেওয়া ও অবিলম্বে পদক্ষেপ করা উচিত বলে মনে করেন দ্রেজ।
‘খাদ্যের অধিকার অভিযান (ঝাড়খণ্ড)’ এক বিবৃতিতে লিখছে, করোনাভাইরাস ঝাড়খণ্ডকে দ্বিগুণ বিপদে ফেলেছে। এক তো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা। তার উপরে অর্থনৈতিক সঙ্কট। বিভিন্ন রাজ্যে কাজকর্ম করছিলেন, এমন শ্রমিকেরা বিপুল সংখ্যায় ফিরে আসছেন নিজ-রাজ্যে। মহারাষ্ট্রের মতো কিছু রাজ্য থেকে করোনা-সংক্রমণ নিয়ে ফিরছেন তাঁদের একাংশ। এটি চিন্তার একটি দিক। অন্য উদ্বেগের দিকটি হল, কাজকর্ম নেই এঁদের হাতে। খাবার-দাবার বিক্রি করতেন যাঁরা, তাঁদের ব্যবসা বন্ধ। অর্থনীতিতে মন্দা যত বাড়বে, আরও বেশি পেশায় তার ধাক্কা এসে লাগবে। মানুষজন ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হওয়ায়, অনেকের জীবন ক্রমেই আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। সংগঠনটির দাবি, ‘‘এই পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ড সরকারকে দ্রুত করোনা ছড়ানো ঠেকাতে হবে। তার সঙ্গে অবশ্যই ঝাড়খণ্ডের গরিব মানুষগুলির পাশে দাঁড়াতে হবে। সময়টাই এখন সবচেয়ে দামি। তাই ক্ষুধা ও চরম দারিদ্র থেকে মানুষকে বাঁচানোর যে সরকারি প্রকল্পগুলি বর্তমানে রয়েছে, সেগুলিকে এখন যথা সম্ভব বেশি কাজে লাগানোই হবে উপযুক্ত পথ।’’
‘খাদ্যের অধিকার অভিযান (ঝাড়খণ্ড)’ যে পদক্ষেপগুলির কথা বলেছে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে:
১) বিধবা ও প্রবীণদের অবিলম্বে তিন মাসের সামাজিক সুরক্ষা পেনশন অগ্রিম দেওয়া হোক। সবচেয়ে বিপন্ন তাঁরাই। ঝুলে থাকা আবেদনের দ্রুত নিষ্পত্তি করে সরকার এই প্রকল্পের সুবিধা আরও বেশি মানুষের মধ্যে প্রসারিত করুক। ২) স্কুল-পড়ুয়া, গর্ভবতী ও প্রসুতিদের রেশন বা রান্না করা খাবার (ভাত, ডাল, ডিম সেদ্ধ) পৌঁছনো নিশ্চিত করুক সরকার। স্কুল-অঙ্গনওয়াড়ি বন্ধ থাকলেও কিছু সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সেগুলিতে রান্না ও বণ্টনের ব্যবস্থা চালু রাখা যেতে পারে। ৩) সঙ্কট না-কাটা পর্যন্ত সাময়িক ভাবে গণবণ্টন ব্যবস্থা (পিডিএস)-এ রেশনের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হোক। যাঁদের রেশন কার্ড নেই বা আবেদন ঝুলে রয়েছে— তাঁদের কাছে দ্রুত পিডিএসের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হোক। সংশ্লিশ্ট প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা আরও মসৃণ করা হোক। দুর্নীতিগ্রস্ত রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হোক অবিলম্বে। ৪) এনরেগায় মজুরি ১৭১ টাকা থেকে বাড়িয়ে অন্তত কৃষকদের ন্যূনতম মজুরির সমান অর্থাৎ ২৭৫ টাকা করা হোক দ্রুত। সঙ্কটের পর্বে তফসিলি জাতি ও জনজাতির জব-কার্ডধারীদের কাজ না-থাকলেও ৩০ দিনের মজুরি থেকে প্রথমে এক-চতুর্থাংশ এবং পরে অর্ধেক দেওয়া হোক বেকার ভাতা হিসেবে। ৫) রাজ্যের সব শ্রমিক-কর্মীকে সাপ্তাহিক আয়-সহায়তা ভাতা দেওয়ার কথাও ভাবতে পারে সরকার।
আরও পড়ুন: এক নজরে: করোনা রুখতে নতুন যা যা ব্যবস্থা নেওয়া হল রাজ্যে
ঝাড়খণ্ডে এখন জেএমএম-কংগ্রেস জোট সরকার। কেন্দ্রে বিজেপি। তবু কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে এগোলে পিডিএস সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলি রাজ্য সরকারের পক্ষে সহজ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করিয়ে দিয়েছে সংগঠনটি। এরই পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের প্রসার রোধে উপযুক্ত সংখ্যায় প্রশিক্ষিত নার্স ও ডাক্তারের বন্দোবস্ত করারও আহ্বান জানিয়েছেন খাদ্যের অধিকার অভিযান (ঝাড়খণ্ড)-এর আহ্বায়ক এ নন্দপ্রসাদ। দ্রেজ তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy