করোনার জেরে দেশে মোট মৃত্যু বেড়েই চলেছে।
দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭ থেকে ৮ লক্ষে পৌঁছেছিল চার দিনে। ৮ থেকে ৯ লক্ষে পৌঁছতে সময় লাগল তিন দিনেরও কম। এমনকি আজ রাতের আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে, ভারতে মোট রোগীর সংখ্যা ৯ লক্ষ ৩৪ হাজারেরও বেশি।
সংক্রমণের গতিবিধি বুঝতে সম্প্রতি দেশ জুড়ে ‘সেরো সার্ভে’ চালিয়েছিল আইসিএমআর। আজ এক সাক্ষাৎকারে দেশের প্রথম সারির ভাইরোলজিস্টদের অন্যতম, তথা শান্তি স্বরূপ ভাটনাগর পুরস্কারজয়ী শাহিদ জামিল বলেছেন, ওই সেরো-সার্ভে নির্ভুল হলে ভারতে এই মুহূর্তে ১৪ থেকে ১৫ কোটি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।
দেশে যথেষ্ট করোনা পরীক্ষা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন ছিল গোড়া থেকেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর মতে, করোনা সংক্রমণের হার কমাতে হলে পরীক্ষা বাড়াতে হবে। প্রতি দশ লক্ষ জনসংখ্যায় রোজ ১৪০টি পরীক্ষা হওয়া বাঞ্ছনীয়। আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানিয়েছে, এই মুহূর্তে দেশে প্রতি দশ লক্ষে গড়ে ২০১ জনের পরীক্ষা হচ্ছে, যা হু-এর বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। ২২টি রাজ্যে করোনা-পরীক্ষার সংখ্যা জাতীয় গড়ের চেয়েও বেশি। শীর্ষে গোয়া (১০৫৮), তার পরে দিল্লি (৯৮৭)। বড় রাজ্যগুলির মধ্যে জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি পরীক্ষা হচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশ (২৬০), মধ্যপ্রদেশ (২৪৯) ও রাজস্থানে (২৩৫)। জাতীয় গড়ের নীচে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাতের মতো রাজ্য।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
পরীক্ষার প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি রাজেশ ভূষণ আজ বলেন, ‘‘বেশ কিছু রাজ্য এখনও অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। আমরা তাই ওই রাজ্যগুলিকে রোজ প্রতি দশ লক্ষে ১৪০টি করে পরীক্ষা করতে বলেছি।’’ স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গত চব্বিশ ঘণ্টায় গোটা দেশে ২,৮৬,২৪৭টি পরীক্ষা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ২০ লক্ষ ৯২ হাজার ৫০৩টি। দিল্লি আইআইটি-র তৈরি করা সুলভ মূল্যের আরটি-পিসিআর কিটের আগামিকাল উদ্বোধন করবেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক এবং প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় ধোতরে।
আরও পড়ুন: চাবাহার প্রকল্পে ধাক্কা ভারতের, নেপথ্যে চিন
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, গোটা বিশ্বের তুলনায় ভারতে পজ়িটিভ রোগীর হারও অনেক কম। বিশ্বে যেখানে প্রতি দশ লক্ষে গড়ে ১৬৩৮ জন আক্রান্ত হচ্ছেন, সেখানে ভারতের গড় হল ৬৫৭। যদিও যে ভাবে দিনে তিরিশ হাজারের কাছাকাছি মানুষ রোজ সংক্রমিত হচ্ছেন, তাতে এই সপ্তাহেই দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দশ লক্ষ ছাপিয়ে যাবে বলে দাবি করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমিত ২৮,৪৯৮ জন, মৃত ৫৫৩ জন। কেন্দ্র জানিয়েছে, নতুন আক্রান্তদের ৮৬ শতাংশই দশটি রাজ্যের বাসিন্দা। পঞ্চাশ শতাংশের ঠিকানা তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্র। বাকি রাজ্যগুলি হল কর্নাটক, দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ তেলঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত ও অসম।
বিশ্বে কোভিডে মৃত্যুহার শতকরা ৪.৬ হলেও ভারতে তা ২.৬। কিন্তু মৃত্যুহারে জাতীয় গড়ের চেয়ে উপরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কর্নাটক, বিহারের মতো রাজ্যগুলি। তাই ওই রাজ্যগুলির চিকিৎসকদের সঙ্গে দিল্লির এমসের আইসিইউ-তে নিযুক্ত চিকিৎসকদের সরাসরি কথা বলিয়ে অভিজ্ঞতা বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজেশ ভূষণ।
জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি সভাপতি রবীন্দ্র রায়না কোভিড পজ়িটিভ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ এবং বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রাম মাধব গৃহ-নিভৃতবাসে গিয়েছেন। বিহারে আজ ফের লকডাউনের ঘোষণা করেছে নীতীশ কুমার সরকার। ভূষণ জানিয়েছেন, কেন্দ্র আর দেশব্যাপী লকডাউনের পথে হাঁটবে না। তবে তিনি মেনে নিয়েছেন, ‘‘বেশ কিছু স্থানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। কিন্তু সেখানে সামান্য ঢিলে দিতেই ফের পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যার ফলে বেশ কিছু রাজ্য প্রয়োজনভিত্তিক লকডাউন করেছে।’’ আজ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সংক্রমণ রুখতে পারস্পরিক দূরত্বের বিষয়টিতে জোর দেওয়ার পাশাপাশি কন্টেনমেন্ট জ়োনে বেশি করে পরীক্ষা করা, বাড়ি-বাড়ি ঘুরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সংক্রমিতদের উপরে নজর রাখার কথা বলা হয়েছে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy