সংক্রমণ ঠেকাতে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ছবি: পিটিআই।
করোনাভাইরাস রোধে কাল দেশজুড়ে ‘জনতা কার্ফু’। এই ভয়াল আতঙ্কের মোকাবিলায় যে সর্বাত্মক প্রয়াস চলছে, ‘জনতা কার্ফু’ তারই একটি অংশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে, অনেকে অভিমতও দিচ্ছেন, এর ফলে নাকি ‘ভাইরাস চেন’ ভেঙে যাবে। করোনাভাইরাস মানুষের দেহের আশ্রয় না পেয়ে ক্ষতিকারকক্ষমতাহারাবে। আসল বিষয়টি কী? এই পদ্ধতি কতটা কার্যকরী?
চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের (সিএনসিআই) মেডিক্যাল সুপার প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ শঙ্কর সেনগুপ্ত জানালেন, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস মানুষের শরীরের বাইরে বেশিক্ষণ বাঁচতে পারে না। তাই বাড়ির বাইরে না বেরলে, একে অন্যের সংস্পর্শে না এলে এই ভাইরাস ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়বে। তবে শঙ্করবাবু মনে করেন, ১৪ ঘণ্টা নয়, এই ভাইরাসের দাপট কমাতে টানা কিছু দিন এই ‘জনতা কার্ফু’র পন্থা অনুসরণ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘জনতা কার্ফু যদি আগামিকাল থেকে শুরু হয়ে টানা কেক দিন চলে তা হলে ভাইরাস সংক্রমণের এই চেন ভেঙে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।’’
তবে, বহু চেষ্টা সত্ত্বেও করোনাভাইরাসকে স্টেজ থ্রি-র আগে আটকানো খুব কঠিন। ইতিমধ্যে পুণের চল্লিশ উত্তীর্ণ এক মহিলার শরীরে সার্স কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বিশেষজ্ঞেরা আশঙ্কা করছেন, এটিই হয়তো দেশের প্রথম কমিউনিটি ট্রান্সমিটেড সার্স কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একমাত্র উপায়, বাড়ির বাইরে না যাওয়া ও বারে বারে হাত-মুখ ধুয়ে পরিচ্ছন্ন থাকা। বলছিলেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুকুমার মুখোপাধ্যায়।
জানাগিয়েছে, পুণের ৪১ বছর বয়সিওই মহিলা সরাসরি কোনও রোগীর সংস্পর্শে আসেননি। তবে তিনি নবী মুম্বইয়ের ভাসিতে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরেই আক্রান্ত হন। এই কথা আবার প্রমাণ হল যে কোভিড–২ করোনাভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে এবং এই জীবাণুর ধর্ম হল মানুষের থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়া। আমরা এখনও জানি না কার শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের জীবাণু আছে। অনেক সময় করোনাভাইরাস শরীরে থাকলেও রোগীর উপসর্গ দেখা দিতে কয়েকদিন সময় লাগে। সেক্ষেত্রে সর্দি হাঁচি না থাকলেও কিন্তু রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে, বললেন সুকুমার মুখোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে বাড়িতে থাকলেও অন্য মানুষজনের সংস্পর্শে না আসাই ভাল। কোনও রকম জমায়েত হলেই স্টেজ থ্রি-র বাড়বাড়ন্ত নিশ্চিত।
প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ শঙ্কর সেনগুপ্ত জানালেন, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) গাইডলাইন মেনে আমাদের দেশে করোনাভাইরাস সার্স কোভিড-১৯-এর বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে যে কোনও জমায়েত নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই প্যানডেমিক বা বিশ্ব মহামারী আটকে দেওয়ার এটাই অন্যতম উপায় বলে জানালেন শঙ্করবাবু। সে দিক থেকে দেখতে গেলে আগামিকালের ‘জনতা কার্ফু’ করেসার্স কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসকে আটকে দেওয়ার এক দৃঢ় পদক্ষেপ। ঠিক এই সিদ্ধান্ত নিয়েই ছোট্ট দেশ সিঙ্গাপুর কোভিড-১৯-কে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। সকলে এককাট্টা হয়ে চললে এই শতাব্দীর বিশ্বমহামারী আটকে দেওয়া সম্ভব।
বাড়িতে থাকার পাশাপাশি কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা আরও একবার জেনে রাখা যাক।
• হাঁচি-কাশির সঙ্গে বাতাসবাহিত হয়ে ছড়ানোর পাশাপাশি সর্দি বা লালা মারফৎ কোভিড-২ করোনাভাইরাসেরছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে। তাই মুখে, চোখে ও নাকে হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে। তাই খাওয়ার আগে তো বটেই, নাক ঝাড়া, হাঁচি ও কাশির পর পরই সাবান বা হ্যান্ড স্যনিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে রগড়ে ধুয়ে নেওয়া দরকার।
• কাজের প্রয়োজনে বা অন্য কারণে বাইরে যেতে হলে মুখে মাস্ক বেঁধে নিন। সর্দি বা হাঁচি হলে অবশ্যই নাক মুখে চাপা দিন।
• যদি জ্বর, সর্দিকাশি, শ্বাসকষ্ট, মাথা ও গা-হাত-পা ব্যথার মতো উপসর্গ থাকে তবে সাবধান হন। বিশেষ করে যদি বিদেশ থেকে আসেন বা বিদেশ থেকে এসেছেন এমন কারও সংস্পর্শে আসেন তবে অবশ্যই ডাক্তারকে সেকথা জানান।
• কোভিড -১৯ পরীক্ষার পাশাপাশি অন্যদের মধ্যে যাতে অসুখ ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে সবাইকে। ভাইরাল ফিভার হলে ফেলে না রেখে অবশ্যই ডাক্তার দেখান।
• বাড়ির অন্যদের থেকে দূরে থাকুন। নিতান্ত দরকার না হলে বাড়ির বাইরে যাবেন না।
• উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস বা অন্যান্য অসুখ থাকলে অবশ্যই নির্দিষ্ট ডোজের ওষুধ খেয়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
• কয়েকটা দিন বাইরের কাজ বন্ধ রেখে যদি এই মারণ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করা যায়, তবে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেরই তা মেনে চলা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy