লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে এখনও অনেক পথ হাঁটতে হবে ভারতকে। ছবি: পিটিআই
সময় ১৪৮ দিন।
বাকি ২৪ কোটি ১০ লক্ষের টিকাকরণ।
এখনও পর্যন্ত ১ মাসে হয়েছে ৯০ লক্ষের টিকাকরণ।
দেশে করোনার টিকাকরণ শুরু হয়েছিল ১৬ জানুয়ারি। এক মাস কেটে গেল। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে এখনও অনেক পথ হাঁটতে হবে ভারতকে। মাঝে প্রকোপ কমলেও ফের মহারাষ্ট্র ও কেরলে মাথাচাড়া দিচ্ছে সংক্রমণ। করোনার ব্রিটেন প্রজাতির পর এ বার ভারতে সন্ধান পাওয়া গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিলের প্রজাতিও। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি ফের সঙ্কটজনক হতে পারে যে কোনওদিন। সেই সঙ্কট থেকে একমাত্র মুক্তি দিতে পারে দ্রুত টিকাকরণ। কিন্তু কতদিনে? সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ড-এ এখনও পর্যন্ত ৮৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ২৩০ জনকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ডোজের টিকাকরণহয়েছে ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৩৩৯ জনের। আর এই পরিসংখ্যানই নতুন করে চিন্তা বাড়াচ্ছে। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ২৫ কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হবে। বর্তমানেমোটে ৩ থেকে ৪ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা গিয়েছে। বাকি পড়ে রয়েছে ৯৬-৯৭ শতাংশ। কিন্তু হাতে আছে মাত্র ১৪৮ দিন।
পৃথিবীর বৃহত্তম টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেও ভারত বাকিদের তুলনায় বেশ কিছুটা পিছিয়েই রয়েছে। যে দেশগুলি এগিয়ে আছে, সেগুলি ভারতের আগেই টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছিল।টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সে সব দেশের গতিও ভারতের থেকে বেশি। তালিকায় সবচেয়ে উপরে রয়েছে আমেরিকা। সেখানে ৫ কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। চিনে দেওয়া হয়েছে ৪ কোটির বেশি মানুষকে। ব্রিটেনে দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লক্ষের বেশি মানুষকে। তালিকায় পিছিয়ে থেকে ভারত এখনও পর্যন্ত ৯০ লক্ষ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে।
এ সবের মধ্যে প্রশ্ন একটাই। ৩১-৩২ দিনের মধ্যে ভারতে যেখানে মোটে ৯০ লক্ষ মানুষকে টিকা দেওয়া গিয়েছে, সেখানে পরবর্তী ১৪৮ দিনে কী ভাবে ২৫ কোটি মানুষকে এর আওতায় আনা সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে টিকাকরণযে হারে বাড়াতে হবে, তা খালি চোখে অসম্ভব বলেই মনে হয়।
টিকাকরণের খরচ
কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমান অর্থবর্ষের বাজেটে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে টিকাকরণের জন্য। এ ছাড়া মোট বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।এর মধ্যে ৩৬০ কোটি টাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাকরণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
সরকারের এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। যে অর্থের বিনিময়ে মোট ১ কোটি ৬৫ লক্ষকরোনার টিকা কিনেছে কেন্দ্র। এর মধ্যে ১ কোটি ১০ লক্ষ কোভিশিল্ডের ডোজ ও ৫৫ লক্ষ কোভ্যাক্সিনের ডোজ কিনেছে কেন্দ্র। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে করোনা প্রতিরোধের জন্য মোট ১২৩ কোটি টাকা অর্থ সাহায্য করেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের হিসাব অনুসারে ২ কোটি প্রথম সারির করোনা যোদ্ধার টিকা দিতে মোট খরচ হবে ৪৮০ কোটি টাকা। এ ছাড়াও টিকার জন্য আনুষাঙ্গিক খরচ হবে ১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা।
তবে শুধু সরকারি অর্থ বরাদ্দ করলেই তো হবে না। টিকা দেওয়ার গতি যদি বৃদ্ধি না পায়, তাহলে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো প্রতিদিনই আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। টিকাকরণ শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রথম সারির যোদ্ধাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, এমন তো নয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীই জানিয়েছেন, এর পর পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের করোনা টিকা দেওয়া হবে। ভারতে মৃত্যু হার কমিয়ে আনতে দ্রুত সেই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে কেন্দ্রকে। কিন্তু তার আগে প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ করা জরুরি।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ জানিয়েছেন, যে স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রথম সারির যোদ্ধাদের টিকা নেওয়া কথা, তার মধ্যে ৬১ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা গিয়েছে। কয়েকটি রাজ্য রয়েছে, যেগুলিতে টিকাকরণের পরিমাণ গড় টিকাকরণের পরিমাণের থেকে অনেকটাই কম। তিনি আশা করছেন, সেখানে দৈনিক টিকাকরণ বাড়লেই জাতীয় গড় বাড়বে।
মনে রাখতে হবে, ভারতে টিকাকরণের জন্য দু’টি টিকাকে জরুরি ক্ষেত্রে ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক নিষুক্ত বিশেষ কমিটি ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তারপর থেকে সরকারি উদ্যোগেই টিকাকরণ চলছে। তবে কোনও কোনও মহলের মতে যদি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হয়, তাহলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি টিকাকরণে যুক্ত করতে হবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও। তাহলেই হয়ত লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে দেশ। না হলে যে গতিতে টিকাকরণ হচ্ছে, তাতে জুলাইয়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হয়ে দাঁড়াবেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy