শাহি স্নানে উপচে পড়ছে ভিড়। ছবি: নেটমাধ্যম থেকে সংগৃহীত।
নোভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে দেশে দৈনিক সংক্রমণ প্রায় ২ লক্ষ ছুঁইছুঁই। তা নিয়ে সরকার বিধিনিষেধ মেনে চলায় জোর দিলেও, কুম্ভমেলার জনস্রোতে লাগাম টানতে নারাজ উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তীরথ সিংহ রাওয়ত। তাঁর যুক্তি, ‘‘মানুষের স্বাস্থ্য অবশ্যই গুরুত্ব পাবে। তাই বলে ধর্মকে অবহেলা করতে পারব না।’’ গত বছর দিল্লির নিজামউদ্দিন মরকজের ধর্মীয় সমাবেশের সঙ্গে কুম্ভমেলাকে এক গোত্রে ফেলতেও নারাজ তীরথ। তাঁর মতে, ‘‘কুম্ভমেলায় যাঁরা এসেছেন তাঁরা কেউ বাইরের নন, আমাদের নিজেদের লোক।’’
কুম্ভের দ্বিতীয় শাহি স্নানের জন্য সোমবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ২৮ লক্ষ মানুষ হরিদ্বার পৌঁছেছেন। তার জন্য কোভিড বিধিনিষেধ কার্যকর করতে হিমশিম খাচ্ছে রাজ্য সরকার। কুম্ভ ফেরত তীর্থযাত্রীরা সংক্রমণ বয়ে আনতে পারেন বলে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছে মহারাষ্ট্র সরকার। কুম্ভমেলা কোভিড সংক্রমণের ‘সুপারস্প্রেডার’ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। কিন্তু কুম্ভমেলার সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িয়ে রয়েছে বলে তা আটকানোর প্রশ্ন নেই বলে সাফাই দিয়েছেন তীরথ।
মঙ্গলবার একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আয়োজিত আলোচনাসভায় যোগ দেন তীরথ। সেখানে নিজামউদ্দিন মরকজের সঙ্গে কুম্ভমেলার তুলনা টানলে তিনি বলেন, ‘‘কুম্ভ এবং মরকজের তুলনা চলে না। একটি বদ্ধ জায়গায় মরকজের আয়োজন হয়েছিল। কুম্ভমেলা হচ্ছে খোলা জায়গায়, গঙ্গার সুবিস্তৃত ঘাটে। তা ছাড়া কুম্ভমেলায় যে পুণ্যার্থীরা ভিড় করেছেন, তাঁরা কেউ বাইরের লোক নন, আমাদের নিজের লোক। মরকজের সময় কোভিড সম্পর্কে সে ভাবে সচেতনতা তৈরি হয়নি মানুষের মধ্যে। চালু হয়নি বিধিনিষেধও। মরকজে শামিল লোকজন কত দিন বদ্ধ জায়গায় ঢুকেছিলেন, কেউ জানত না। সেই তুলনায় এখন মানুষ কোভিড নিয়ে অনেক সচেতন। ১২ বছরে এক বার কুম্ভমেলা হয়। এর সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষের ধর্মীয় আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। কোভিড চ্যালেঞ্জের মধ্যে বিধি নিষেধ মেনে সফল ভাবে মেলা পরিচালনা করাই আমাদের লক্ষ্য।’’
কুম্ভমেলায় যোগদানকারী হাজার হাজার মানুষ গঙ্গার ঘাটে স্নান করছেন, এমন ছবি ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। তার পরেই গত দু’দিনে শুধুমাত্র হরিদ্বারেই নয়া সংক্রমণ ১০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। গোটা উত্তরাখণ্ডকে ধরলে সোম থেকে মঙ্গল, এই ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১ হাজার ৯২৫ জন সংক্রমিত হয়েছেন সেখানে। মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে তীরথ বলেন, ‘‘সংক্রমণ বেড়েছে মানছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে চলছি আমরা। সুস্থতাও বাড়ছে। মেলাপ্রাঙ্গনে মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। হরিদ্বারে পা রাখার আগে সীমানায় সকলের কোভিড পরীক্ষা হচ্ছে। র্যানডম টেস্টিংয়ের ব্যবস্থাও করেছি।’’
তবে মেষ সংক্রান্তি উপলক্ষে বুধবার আরও একটি শাহি স্নানের আয়োজন হচ্ছে হরিদ্বারে। তার পরেও রাত্রিকালীন কার্ফুর সময়সীমা খানিকটা কমিয়েছে উত্তরাখণ্ড সরকার। আগে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কার্ফু চালু হলেও, কুম্ভ ঘিরে উৎসবের কথা মাথায় রেখে তার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy