নিজামুদ্দিনে করোনা সংক্রমণের খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: পিটিআই।
কেরল, মহারাষ্ট্রের পরে এ বার কি দিল্লি নতুন ‘হটস্পট’! করোনা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগের আবহে প্রশ্নটা উঠেই গেল।
আজ এক দিনে নিজামুদ্দিন এলাকার প্রায় ৩০০ সন্দেহভাজনের করোনা-পরীক্ষা করা হয়েছে দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে। কাল ওই এলাকার ছ’জন সংক্রমিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দিল্লির স্বাস্থ্য দফতর। পরবর্তী সংক্রমণ রুখতে প্রশাসনের নির্দেশে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে ওই এলাকার বড় সংখ্যক মানুষকে। শুধু নিজামুদ্দিনের কারণেই দেশের করোনা-লড়াই অনেকটা কঠিন হয়ে গেল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তেলঙ্গানা সরকারের দাবি, ওই জমায়েত থেকে ফিরেই ছ’জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে রাজ্যে। যদিও সোমবার রাত ১১টা ৫৬ পর্যন্ত পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাইটে তেলেঙ্গানায় করোনায় মৃতের সংখ্যা ১!
মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে এলাকার এক মসজিদে জমায়েতের ডাক দিয়েছিল তবলিঘি জামাত। তাতে দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার মানুষ ছিলেন। পুলিশ জানায়, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব থেকেও অনেকে আসেন সেখানে।
জামাতের অনুষ্ঠানে ছিলেন কাশ্মীরের এক ধর্মপ্রচারকও। অনুষ্ঠানের দিন কয়েক আগে শ্রীনগরে করোনায় এক জনের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, সম্প্রতি শ্রীনগরে ওই ব্যক্তির মৃত্যু ও আর এক কাশ্মীরবাসীর সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা, আন্দামানে সংক্রমণ ও হায়দরাবাদে ১১ জন ইন্দোনেশীয়ের শরীরে ভাইরাস পাওয়ার যোগসূত্র হিসেবে উঠে আসছে জামাতের ওই অনুষ্ঠান। দেখা যায়, সংক্রমিত সবাই ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন। এর পরেই নড়ে বসে প্রশাসন। দেখা গিয়েছে, শ্রীনগরে ফেরার আগে ওই ধর্মপ্রচারক উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর সংস্পর্শে ক’জন এসেছিলেন, তা-ও খতিয়ে দেখছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ ছাড়া ওই অনুষ্ঠানের শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্দেশে ২৫টিরও বেশি বাস ছেড়েছিল। সেই বাসে কারা ছিলেন, তাঁদের গন্তব্য কোথায়, তাঁরা কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, সেই খোঁজও শুরু হয়েছে কাল থেকে। নিজামুদ্দিন এলাকা জুড়ে চলছে ড্রোন নজরদারিও। সূত্রের খবর, পুলিশ ওই মসজিদের মৌলানার বিরুদ্ধে এফআইআর করবে ।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই জমায়েতে অন্তত ১২০০ দক্ষিণ ভারতীয় উপস্থিত ছিলেন। দেশজোড়া লকডাউন শুরুর আগে গত সোমবার ওই ব্যক্তিদের দিল্লি বিমানবন্দরে ছেড়ে আসা হয়েছিল, যাতে তাঁরা ঘরে ফিরতে পারেন। কিন্তু পুলিশ পরে জানতে পারে, গোটা দলটাই নিজামুদ্দিনে ফিরে আসে। বর্তমানে ওই দলটি-সহ প্রায় ২০০০ জন গাদাগাদি করে ছ’তলার একটি ডর্মিটরিতে রয়েছে। যাঁদের মধ্যে প্রায় ৩০০ বিদেশিও আছেন। এঁদের মধ্যে এক জনও সংক্রমিত হয়ে থাকলে, তা গোটা দলে ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা। পুলিশ জানিয়েছে, এমনিতেই নিজামুদ্দিন ঘনবসতিপূর্ণ। তাই সামান্য ভুলচুকে গোটা এলাকায় গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই কারণে চিকিৎসক, পুলিশের দল গোটা এলাকাটি ঘিরে রেখেছে। আজ ওই এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি দল। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব অাগরওয়াল বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে যে স্থান থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, সেখানকার সব ব্যক্তির বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হয়। পরে বাফার জ়োনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করা হয়। কারও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকলেই তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্দেহভাজনদের ১৪ দিন গৃহবন্দি রাখার নিয়ম।
ক্ষুব্ধ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, আগামী দিনে লকডাউনের সময়ে কোনও ধর্মীয় জমায়েত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংক্রমণ এড়াতে পরস্পরের সঙ্গে দূরত্ব রাখার প্রচার চালাচ্ছে কেন্দ্র। কিন্তু কিছু যুবক, যাঁরা নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে ধর্মের দোহাই দিয়ে পরস্পরকে আলিঙ্গন করার ভিডিয়ো বানাচ্ছেন ও বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে সেগুলি প্রচার করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পরিস্থিতি আঁচ করে আজই তাদের ট্রমা সেন্টার শুধুই করোনা-হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছে
দিল্লি এমস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy