গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
উদ্বেগজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের শনিবারের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৪০ হাজার ৯৫৩ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ১৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৮৪। গত এক সপ্তাহের মধ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কখনও ২ হাজার, কখনও ৪ হাজার এবং আবারও ৭ হাজারও বেড়েছে। যা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হয়েছে কেন্দ্রের। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ১৮৮ জনের। যার মধ্যে ৭০ জন মহারাষ্ট্রের। দেশে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৫৫৮। সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩.৮৬ শতাংশ।
গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রেখে রাজ্যগুলোকে কোভিডবিধি ঠিকমতো পালন করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পলের মতে, অনেকেই কোভিডবিধি ঠিক মতো পালন করছেন না। কোভিডবিধি ভেঙে বিয়েবাড়ি, সামাজিক অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। সেখানে ভিড় বাড়াচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই হয়তো করোনায় আক্রান্ত, কিন্তু উপসর্গহীন। আর সেই ‘সুপারস্প্রেডার’দের থেকেই থেকেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তাঁর কথায়, “আমাদের এ বিষয় নিয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত। এই সময়ে জমায়েত এড়ানোই ভাল।” এরই মধ্যে ৪ রাজ্য এবং ১টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিধানসভা ভোট। যেখানেও যথেচ্চ জমায়েত হচ্ছে। যা চিন্তা বাড়াচ্ছে।
দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মহারাষ্ট্রের। এই রাজ্যে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ২৫ হাজার ৬৮১ জন। যা গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন আক্রান্তের মধ্যে ৬২ শতাংশ। এই রাজ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে যে শুক্রবারই মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে জানিয়েছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে একমাত্র পথ লকডাউন। তিনি বলেছেন, “আগামী দিনে লকডাউন ছাড়া বিকল্প কোনও রাস্তা দেখছি না। কিন্তু আমার বিশ্বাস রাজ্যের মানুষ কোভিডবিধি মেনে চলবেন এবং সরকারকে এ কাজে সহযোগিতা করবেন।” গত বছরের সেপ্টেম্বরে মহারাষ্ট্রে এই পর্যায়ে পৌঁছেছিল সংক্রমণ।
ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে উদ্ধব সরকার। নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে থিয়েটার এবং সিনেমা হলগুলিতে ৫০ শতাংশের বেশি দর্শককে অনুমতি দেওয়া যাবে না। কোনও অডিটোরিয়াম, থিয়েটারে রাজনৈতিক কর্মসূচি করা যাবে না। বেসরকার অফিসগুলোতে ৫০ শতাংশের বেশি কর্মী নিয়ে কাজ করা যাবে না। ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই নির্দেশিকা জারি থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি পঞ্জাব, কেরল এবং কর্নাটকেও প্রতি দিন সংক্রমণ হাজার ছাড়াচ্ছে। পঞ্জাবে আবার ২ হাজার ছাড়িয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। শুক্রবার পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ নির্দেশ দিয়েছেন, শনিবার থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হবে। বাড়িতে ১০ জনের বেশি অতিথিকে স্বাগত জানানো যাবে না। আগামী ২ সপ্তাহ বাড়িতেই যাতে কাজকর্ম করা যায়, রাজ্যবাসীর কাছে সেই আবেদনও জানিয়েছেন অমরেন্দ্র। রাজ্যের ১১টি জেলায় ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হওয়ায় সেখানে সমস্ত সামাজিক অনুষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। রাত ৯টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত এই জেলাগুলোতে কার্ফু জারি করা হবে রবিবার থেকে।
পশ্চিমবঙ্গেও করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৩৫৭ জন। যা ২৪ জানুয়ারির পর সবচেয়ে বেশি। ওই দিন রাজ্যে ৩৮৯ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। স্বাস্থ্য দফতরের উদ্বেগ বাড়িয়ে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের বেশ কয়েটি জেলাতেও দৈনিক সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী।
দেশে যখন এক দিকে, করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, পাশাপাশি বাড়ছে টিকাকরণের সংখ্যাও। শুক্রবার পর্যন্ত মোট ৪ কোটি ২০ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩৯২ জন মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে খবর। গত ২৪ ঘণ্টায় টিকাকরণ হয়েছে ২৭ লক্ষ ২৩ হাজার ৫৭৫ জনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy