দু’চোখ বন্ধ তাঁর। আর হাত দু’টো নমস্কারের ভঙ্গিতে বুকে জড়ো করে রাখা। রাশি রাশি মালা গলায়। কপালে বিভূতি আর লাল কুমকুমের সজ্জা। মুখে অদ্ভুত প্রশান্তি। মঠের প্রকাণ্ড হলঘরটার চেয়ারে যেন বসে থাকতে থাকতেই ধ্যানস্থ হয়ে গিয়েছেন কাঞ্চী পীঠের প্রধান শঙ্করাচার্য জয়েন্দ্র সরস্বতী।
আজ শুক্লা ত্রয়োদশী। ‘জগৎগুরু’ যে মারা গিয়েছেন, প্রথমটায় যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না ভক্তেরা। তবু বেলা বাড়তেই পীঠ উপচে পড়ার জোগাড়। ভক্তদের দেখা গেল, কেউ পায়ে লুটিয়ে পড়ে কাঁদছেন, তো কেউ টানা ছবি তুলেই চলেছেন। গুরুকে ‘শেষ দেখার’ আবেগ সামলাতে মঠের কর্তারাই এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘আপনারা শান্ত হোন। সবাইকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দিন। শঙ্করাচার্যের দেহ আজ পীঠেই থাকবে। কাল সকাল ৮টায় শুরু হবে তাঁর বন্দাবন প্রবেশ কার্যক্রম।’’
৮২ বছর বয়সে আজ সকাল ৯টায় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন কাঞ্চীর ৬৯তম প্রধান শঙ্করাচার্য সরস্বতী। মঠ জানিয়েছে, আজ সকালে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে কাঞ্চীপুরমের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। সেখানেই মারা যান তিনি। চেন্নাই থেকে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত কাঞ্চীর এই পীঠ আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আদি শঙ্করাচার্য। ১৯৯৪ থেকে মঠের প্রধান ছিলেন শঙ্করাচার্য জয়েন্দ্র সরস্বতী। তবে এই দায়িত্ব যে তিনি পেতে চলেছেন, সেটা ঠিক হয়ে গিয়েছিল তারও ৪০ বছর আগে। ১৯৫৪-য় জয়েন্দ্র তখন উনিশের যুবক। এ বার ৭০তম মঠ-প্রধান হিসেবে আসছেন বিজয়েন্দ্র সরস্বতী।
২০০৪-এ বরদারাজুপেরুমল মন্দিরের পরিচালক এ শঙ্কররামনকে খুনের অভিযোগে শঙ্করাচার্য জয়েন্দ্র সরস্বতীর সঙ্গে নাম জড়ায় তাঁর তৎকালীন সহযোগী এই বিজয়েন্দ্র সরস্বতীরও। মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে কাঞ্চীর পুলিশ দাবি করে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে মন্দির চত্বরেই কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল শঙ্কররামনকে। খুনের কারণ হিসেবে বলা বলা হয়, ঘটনার দিনকয়েক আগেই জয়েন্দ্র ও বিজয়েন্দ্রের দুর্নীতি প্রকাশ্যে এনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। ঘটনার দু’মাস পরে গ্রেফতার হন কাঞ্চীর ওই দুই সন্ন্যাসী। ২০০৫-এ জামিনও পেয়ে যান। তখনই প্রশ্ন ওঠে— তামিলনাড়ুর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা এঁদের শলাপরামর্শ মেনে চলতেন বলেই কি জামিন পেলেন শঙ্করাচার্য? ধর্মের সঙ্গে সে বার জড়ায় রাজনীতির তর্কও। ২০১৩-য় যদিও ওই মামলায় আদালত বেকসুর খালাস ঘোষণা করেন জয়েন্দ্র ও তাঁর ২২ সঙ্গীকে।
পাঁচ বছর পরে আজ পানসে সেই বিতর্কও। শঙ্করাচার্যের প্রয়াণে আজ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী-সহ অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy