—প্রতীকী ছবি।
সনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল বেঁচে থাকতে নিয়মিত এই বাড়িতে ঢুঁ মারতেন। রাজস্থানের কংগ্রেস নেতা সচিন পাইলট যখন অশোক গহলৌতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে দল ছাড়তে উদ্যত, তখন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা পাইলটের সঙ্গে এই বাড়িতেই বৈঠকে বসেছিলেন। গত লোকসভা নির্বাচনের পরে কংগ্রেসের নতুন সাংসদদের সঙ্গে সনিয়া গান্ধী এই বাড়িতেই দেখা করেছিলেন। রাহুল গান্ধী বিধানসভা নির্বাচনের রণকৌশল নিয়ে রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে এই বাড়িতেই বৈঠক করেছেন।
খাতায়-কলমে বাড়ির ঠিকানা, দিল্লির ১৫, গুরুদ্বার রাকাবগঞ্জ রোড। কংগ্রেসের অন্দরমহলে এর নাম ‘ওয়ার রুম’। গত প্রায় দেড় দশক ধরে দিল্লিতে কংগ্রেসের এই যাবতীয় গোপন শলাপরামর্শের ঠিকানা এ বার হাতছাড়া হতে চলেছে। গুরুদ্বার রাকাবগঞ্জ রোডের সরকারি বাংলো এত দিন কংগ্রেস বা কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ কোনও সাংসদের নামে বরাদ্দ থাকত। সাংসদেরা থাকতেন অন্য জায়গায়। বাংলোয় ‘ওয়ার রুম’ চলত। এ বার তা বিজেপির সমর্থনে হরিয়ানা থেকে রাজ্যসভায় জিতে আসা নির্দল সাংসদ কার্তিকেয় শর্মার নামে বরাদ্দ হয়েছে। ফলে কংগ্রেসকে কংগ্রেসের ‘ওয়ার রুম' থেকেই বিদায় নিতে হবে।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, বিজেপি শিবির বহু দিন ধরেই তক্কে তক্কে ছিল, কী ভাবে এই সরকারি বাংলো থেকে কংগ্রেসকে ঠিকানাচ্যুত করা যায়। কংগ্রেসের 'ওয়ার রুম' থেকেই কংগ্রেসকে ঘরছাড়া করা হলে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া যাবে। সফল হতে চলেছে সেই উদ্দেশ্য। কংগ্রেসের ওয়ার রুম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মণীশ চতরথ বলেন, “যে সাংসদের নামে বাংলোটি বরাদ্দ ছিল, তাঁর মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই কিছু দিনের মধ্যে বাংলো ছেড়ে দিতে হবে।” কংগ্রেস সূত্রের খবর, ইউপিএ জমানার শুরুতে রাষ্ট্রপতি মনোনীত এক সাংসদের নামে এই বাংলোটি বরাদ্দ ছিল। তিনি দিল্লির বাসিন্দা বলে তাঁর বাংলোর প্রয়োজন পড়েনি। তার পরে বাংলো বরাদ্দ হয় রাজ্যসভায় মনোনীত হয়ে আসা অভিনেত্রী রেখার নামে। রেখাও কোনও দিন এই বাংলোয় থাকেননি। গত ছয় বছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের নামে বাংলোটি বরাদ্দ ছিল। আহমেদ পটেল ও মতিলাল ভোরা তাঁকে দলের জন্য বাংলো ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছিলেন। প্রদীপ তাই দিল্লি এলে সাংসদদের জন্য তৈরি একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে অতিথি হিসেবে থাকতেন। তাঁর রাজ্যসভার মেয়াদ ফুরোতে কংগ্রেসের অন্য কারও নামে এই বাংলো বরাদ্দ করা যায় কি না, সেই চেষ্টা করা হয়েছিল। তা সফল হয়নি। প্রদীপের সাংসদ হিসেবে মেয়াদ শেষের পরে আরও তিন মাস বাংলো রেখে দেওয়ার জন্য রাজ্যসভার আবাসন কমিটির কাছে আর্জি জানানো হয়েছিল। তা খারিজ হয়ে গিয়েছে।
কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, কংগ্রেসের ওই “ওয়ার রুম' অপেক্ষাকৃত নির্জন রাস্তায় অবস্থিত বলে অনেকের নজর এড়িয়ে গোপন বৈঠক করার সুযোগ ছিল। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি হোক বা দলের দুই বিবদমান নেতার সংঘাত মেটানোর চেষ্টা, কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপির দিকে পা বাড়ানো নেতাদের বোঝানো হোক বা অন্য দল থেকে কংগ্রেসে যোগ দিতে চাওয়া নেতাদের সঙ্গে দর কষাকষি— এই বাংলোকেই বেছে নেওয়া হত। কাজের প্রয়োজনে 'ওয়ার রুম'এ দু'টি অত্যাধুনিক কনফারেন্স রুম, একাধিক অস্থায়ী কেবিন, তথ্য- পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের পরিকাঠামো তৈরি হয়েছিল।
এ বার তা হলে কংগ্রেসের ‘ওয়ার রুম'-এর ভবিষ্যৎ কী হবে? কংগ্রেস নেতা মণীশ চতরথ বলেন, “আপাতত ওয়ার রুম ছেড়ে দিতে হবে। দু'তিন মাসের মধ্যে দিল্লির কোটলা মার্গে কংগ্রেসের নতুন সদর দফতরের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি। তার পরে সেখান থেকেই ওয়ার রুমের কাজ চলবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy