—প্রতীকী চিত্র।
মহারাষ্ট্রের বিধানসভায় কংগ্রেসের ধূলিসাৎ হওয়া এবং পশ্চিমবঙ্গের ছ’টি উপনির্বাচনে ‘ছক্কা’ হাঁকানোর পরে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, দুর্নীতির অভিযোগ আর ভোট জয়ের চাবিকাঠি হতে পারে না। দলীয় সূত্রে খবর, শনিবার বিভিন্ন রাজ্যের ভোটের ফল প্রকাশের পরে রবিবার রাতে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতাকে এ কথা জানায় তৃণমূল।
সূত্রের খবর, সংসদ শুরু হওয়ার আগের রাতে অর্থাৎ রবিবার কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা ফোন করেন তৃণমূলের এক সংসদীয় নেতাকে। বলেন, “আদানি ঘুষ-কাণ্ড এখন দেশের সবচেয়ে বড় বিষয়। এই বিষয়টিকে নিয়ে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সরকারকে কাঁপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস তথা ‘ইন্ডিয়া’ জোট।” ওই কংগ্রেস নেতা তৃণমূলকেও এই বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ঝাঁপাতে আহ্বান জানান। সূত্রের খবর, তখনই তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আদানি-কাণ্ডকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও বিষয় বলেই মনে করছেন না তাঁরা। দুর্নীতি এমন কোনও বিষয় নয়, যা ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে।
সোমবার সকালে (অর্থাৎ শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিন) কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সংসদীয় অফিসে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের বৈঠকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণও রবিবার রাতে তৃণমূলকে দেন সেই কংগ্রেস নেতা। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সোমবার তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। ফলে যাওয়া সম্ভব নয়। পাশাপাশি এ কথাও বলা হয় যে, তৃণমূল মনে করছে না দুর্নীতি প্রথম এমন তিনটি বিষয়ের মধ্যেই পড়ে, যা মানুষের ভোটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে থাকা বিষয় যেমন মূল্যবৃদ্ধি, নারী নির্যাতন, বেকারত্বকে অধিবেশনে তুলে এনে বিজেপি সরকারকে নিশানা করা অনেক কার্যকরী। প্রসঙ্গত, আজও খড়্গের ঘরে বসে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের কৌশল বৈঠক। যেখানে উপস্থিত ছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও। কিন্তু তাতে যোগ দেয়নি তৃণমূল। বলা হয়েছে, আদানি নিয়ে কোনও বিরোধী কৌশলের মধ্যেই তারা নেই।
আজ দুপুরে সংসদীয় দলের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিষয়গুলিকেই’ চিহ্নিত করেছেন। সাংসদদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, আগামী ২০ ডিসেম্বর (শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিন) পর্যন্ত এই বিষয়গুলিতেই নোটিস দিয়ে আলোচনায় আনার চেষ্টা করে যেতে হবে। আদানি নিয়ে কোনও মুলতুবি নোটিস দেওয়া যাবে না, অথবা কংগ্রেসের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে আদানি-কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ করা যাবে না। যে বিষয়গুলি নিয়ে সংসদে সরব হওয়ার কথা বলেছেন তিনি সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে আগে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনা। এ ছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, কৃষকদের সারে ভর্তুকি, মণিপুরের হিংসার মতো বিষয়গুলি রয়েছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আড়াই মাস আগে পাশ হওয়া ‘দ্য অপরাজিতা উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড’ (ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০২৪’-টি যেন দ্রুত রাষ্ট্রপতি সই করেন সে জন্যও দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। রাষ্ট্রপতির কাছে সময় চাওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, আদানি ঘুষ কাণ্ড নিয়ে আমেরিকার অভিযোগের বিষয়টি সামনে এসেছে মহারাষ্ট্রের নির্বাচনের পরে। কিন্তু সে রাজ্যে প্রায় প্রতিটি জনসভায় গিয়েই রাহুল গান্ধী আদানি, অম্বানীদের প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, “মোদী এদের বিপুল ঋণ মাফ করে দিয়েছেন, অথচ কৃষকদের সামান্য ঋণ মাফ করেন না। তিনি ধনপতিদের হাতের পুতুল।” তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “মহারাষ্ট্রের নির্বাচনের ফল সামনে আসার পরে আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যাই যে ভোট জেতার অস্ত্র হিসেবে আদানি বা দুর্নীতি কোনও কাজেরই নয়।’ তবে এখনই ইন্ডিয়া মঞ্চের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলতে চাইছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। বরং তাঁদের বক্তব্য, “প্রতিটি দল আলাদা। তাদের দৃষ্টিকোণও পৃথক হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা চাই না কোনও একটি বিষয় নিয়ে হাঙ্গামা করে সংসদ অচল করে রাখা হোক। তা হলে মানুষের সঙ্গে জড়িত অন্য বিষয়গুলির প্রতি অন্যায় করা হয়।”
প্রসঙ্গত আদানি কাণ্ডের যৌথ সংসদীয় কমিটির দাবি তুলে আজও প্রথম দিনের মতোই দু’টি কক্ষই দু’বারের মুলতুবির পরে গোটা দিনের জন্য অচল হয়ে যায়। এই সপ্তাহে অধিবেশন চলা কঠিন হতে পারে বলে মত রাজনীতিকদের। তবে আজ রাজ্যসভার বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে তৃণমূল-সহ বিরোধীরা একমত হয়েছে সংবিধান নিয়ে দু’দিন আলোচনা করতে। তৃণমূলের বক্তব্য, সংবিধান নিয়ে আলোচনার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি দলই নিজ নিজ রাজনৈতিক আক্রমণ শানাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy