জয়রাম রমেশ। —ফাইল চিত্র।
জি২০ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ধর্মীয় বৈচিত্রকে সম্মান জানাচ্ছেন, দেখাচ্ছেন সহিষ্ণুতার প্রতি দায়বদ্ধতা। আর দেশে যখন বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, ভিড় জুটিয়ে খুন করা, নিশানা করা হয় সংখ্যালঘুদের, তাঁদের ধর্মস্থানে হামলার ঘটনা ঘটে— তখন সেই মোদী নীরব থাকেন বলে অভিযোগ তুলল কংগ্রেস। তাদের আক্রমণ, জি২০-র মঞ্চে সহিষ্ণুতা নিয়ে ‘দ্বিচারিতা’ এবং পরিবেশ নিয়ে ‘ভণ্ডামি’ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে ঐকমত্যে পৌঁছনোর যাবতীয় কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর— এই বলে আজ থেকেই মোদী-বন্দনায় নেমে পড়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতৃত্ব। উল্টো দিকে, আজ কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, ওই ঘোষণাপত্র ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে মোদীর বক্তব্যের সঙ্গে তাঁর কাজকর্মের কোনও মিল নেই। বরং মোদীর দ্বিচারিতা ফুটে উঠেছে।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের মন্তব্য, “স্বঘোষিত বিশ্বগুরুর দ্বিচারিতা চরমে পৌঁছেছে, তারই প্রমাণ মিলছে।” তাঁর অভিযোগ, আন্তর্জাতিক মঞ্চে মোদী মতবিনিময় ও সহিষ্ণুতার প্রতি দায়বদ্ধ বলে জানাচ্ছেন। কিন্তু দেশের মাটিতে মণিপুরে গোষ্ঠী সংঘর্ষ থামাতে তিনি কোনও পদক্ষেপ করতে নারাজ। চার মাস ধরে হিংসা চললেও তিনি সেখানে যাননি। জি২০-র ঘোষণাপত্রে ধর্মীয় বিদ্বেষের কঠোর নিন্দা করা হচ্ছে। কিন্তু মোদী ও তাঁর দল ভোটের মেরুকরণ করতে দেশের মাটিতে ধর্মীয় বিদ্বেষে মদত দিচ্ছে। রাহুল গান্ধীও প্যারিসে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, দলিত-সংখ্যালঘুদের উপরে হামলাই এখন ভারতের সব চেয়ে বড় সমস্যা, কেন্দ্রীয় সমস্যা।
আজ জি২০ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সকালে মোদী-সহ রাষ্ট্রনেতারা রাজঘাটে মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন। মোদী নিজে সকলকে সেখানে স্বাগত জানান। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব, সকলেই সেখানে ছিলেন। ওয়ার্ধার সেবাগ্রামে গান্ধী যেখান থাকতেন, সেই ‘বাপু কুটী’-র ছবি দিয়ে রাজঘাট সাজানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনেতাদের ‘বাপু কুটী’-র মাহাত্ম্য বুঝিয়ে দেন। তার পরে বাকিদের সঙ্গে তিনিও গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানান।
কংগ্রেস নেতারা কটাক্ষ করেছেন, নরেন্দ্র মোদী বিদেশি অতিথিদের নাগপুরে আরএসএসের সদর দফতরে নিয়ে যেতে পারেন না। বিদেশি অতিথিদের নিয়ে রাজঘাটেই যেতে হয়। কংগ্রেস সাংসদ মাণিকম টেগোরের মন্তব্য, “যে মতাদর্শ মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল, তাকেও মহাত্মার সামনে মাথা নত করতে হয়।”
জি২০ সম্মেলনের প্রথম দিন, গত কাল যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ হয়েছিল তার ৭৮তম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের ঘোষণা অনুযায়ী জি২০ গোষ্ঠীর সকলে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র, মতবিনিময় ও সহিষ্ণুতার প্রতি দায়বদ্ধ। ধর্মাচরণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে এই ঘোষণাপত্রে। ধর্মীয় বিদ্বেষ, ধর্মীয় প্রতীকের উপরে হামলার কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। জয়রামের বক্তব্য, স্বঘোষিত বিশ্বগুরু আন্তর্জাতিক মঞ্চে তিনি এ সবের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর দল হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ডে পরিকল্পিত ভাবে মেরুকরণের প্রচার চালাচ্ছে। ভারতের সামাজিক ঐক্য ভেঙে ফেলছে। প্যারিসে রাহুল মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপরে আঘাত নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, শুধু নাগরিক সমাজ নয়, তিনি নিজে এর ভুক্তভোগী। তাঁর বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা হয়েছে। মানহানির ফৌজদারির সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। ঠিক তত দিনই তাঁর কারাদণ্ড হয়েছিল, যত দিন হলে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায়।
জি২০-র মঞ্চে পরিবেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্যকে ‘ভণ্ডামি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন জয়রাম রমেশ। তাঁর অভিযোগ, মোদী সরকার এক দিকে অরণ্য ধ্বংস করে জীববৈচিত্র নষ্ট করছে। জঙ্গলের উপরে নির্ভর আদিবাসীদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী জি২০-র মঞ্চে পরিবেশ, জলবায়ু নিয়ে কথা বলছেন। মোদীর এই কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy