বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার কাজ শুরু করে দিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। ফাইল চিত্র।
সংসদের অধিবেশন শেষ হতেই বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার কাজ শুরু করে দিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। একই সঙ্গে বিরোধী জোটের ফাটলও প্রকাশ্যে চলে এল।
সূত্রের খবর, মল্লিকার্জুন খড়্গে বিরোধী ঐক্য নিয়ে ডিএমকে প্রধান তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, জেডিইউ-র নেতা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। কী ভাবে বিরোধী জোটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, অন্যান্য দলকে কী ভাবে বিরোধী জোটে টেনে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে বাকিদের মত জানতে চেয়েছেন খড়্গে। আগামী কয়েক দিনে তিনি অন্য দলগুলির সঙ্গেও কথা বলবেন।
২০২৪-কে পাখির চোখ করে মূলত দু’টি সূত্র মেনে বিরোধী ঐক্য গড়তে চাইছেন খড়্গে। এক, লোকসভা নির্বাচনের আগেই কোনও আনুষ্ঠানিক বিরোধী জোট বা মঞ্চ তৈরির বদলে যত বেশি সম্ভব আসনে সমঝোতা বা বোঝাপড়ার চেষ্টা হবে। দুই, যেহেতু আনুষ্ঠানিক বিরোধী জোট হবে না, তাই সেই জোটের কে নেতা বা মুখ হবেন, তা নিয়েও বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়া হবে। সূত্রের খবর, অনেক বিরোধীরই আপত্তি রয়েছে বুঝে কংগ্রেস আগেভাগে রাহুল গান্ধীকে বিরোধী জোটের নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করবে না। নিজেদের মধ্যে বিবাদ এড়িয়ে যাওয়া হবে। রাহুল গান্ধী নিজে খড়্গের বাড়িতে বিরোধী নেতাদের কাছে এই আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাভারকর নিয়ে মন্তব্যের জেরে এনসিপি, উদ্ধব ঠাকরের আপত্তি রয়েছে বুঝে রাহুল নিজেও নমনীয় অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বিরোধী জোটের সলতে পাকানো শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী জোটের মধ্যে মতান্তরও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার আদানি-কাণ্ড নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও কারচুপির অভিযোগ নিয়ে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। এই হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ও অন্য দলগুলি যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি-র দাবিতে সংসদ অচল করে রেখেছিল। কিন্তু পওয়ারের মতে, ওই রিপোর্ট দেখে তাঁর মনে হয়েছে, নির্দিষ্ট একটি কর্পোরেট গোষ্ঠীকে নিশানা করা হচ্ছে।
রাহুল গান্ধী আজও আদানি-কাণ্ড নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বিজেপি এত মরিয়া হয়ে আদানিকে বাঁচাতে চাইছে? উল্টো দিকে পওয়ারের মতে এই বিষয়টিকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে তদন্তের দাবিকে সমর্থন করলেও জেপিসি-র বদলে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত যথেষ্ট বলে পওয়ার মনে করেন।
কংগ্রেস সভাপতির বিরোধী জোট তৈরির চেষ্টার গোড়াতেই পওয়ারের এই মন্তব্য গোটা প্রক্রিয়ায় জল ঢেলে দিচ্ছে বুঝতে পেরে কংগ্রেসকে আজ ফাটল বোজাতে মাঠে নামতে হয়েছে। কংগ্রেসের যুক্তি, আদানি নিয়ে ভিন্নমত হলেও বিজেপি-বিরোধিতায় এনসিপি পাশে থাকবে। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের পরে তৃণমূলও কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানোয় বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনের শেষ দিনে মোট ২০টি দল এককাট্টা হয়েছিল। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের মন্তব্য, “এনসিপি-র নিজের মত থাকতে পারে। কিন্তু বাকি ১৯টি সমমনস্ক বিরোধী দল নিশ্চিত যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত আদানি-কাণ্ড বাস্তব ও গুরুতর বিষয়। এনসিপি-সহ ২০টি সমমনস্ক বিরোধী দল বিজেপির হামলা থেকে গণতন্ত্র ও সংবিধানকে বাঁচাতে এককাট্টা হয়েছে। বিজেপির বিভাজনের নীতিকে হারাতেও এই ২০টি দল এককাট্টা।”
তৃণমূল কংগ্রেসও জেপিসি-র বদলে সুপ্রিম কোর্টের তদন্তের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে। জেপিসি-র দাবিতে বাজেট অধিবেশনের সময়ে বিরোধী দলের সাংসদদের মিছিলে তৃণমূল যেমন যোগ দেয়নি, তেমনই এনসিপি-ও মিছিল এড়িয়ে গিয়েছিল। আদানির সঙ্গে পওয়ারের পুরনো বন্ধুত্ব এর কারণ বলে মনে করেন কংগ্রেস নেতারা।
সংসদের অধিবেশন চলাকালীন খড়্গের বাড়িতে নৈশভোজে একাধিক দল কংগ্রেসকে বিরোধী জোট নিয়ে উদ্যোগী হতে বলেছিলেন। অধিবেশন চলাকালীন খড়্গে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে নিয়মিত বিরোধী দলের সংসদীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিছু দলের নেতারা খড়্গেকে পরামর্শ দেন, এ বার তিনি কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে অন্য দলের সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক করুন। খড়্গে সেই অনুযায়ীই উদ্যোগী হয়েছেন বলে কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy