লোকসভায় প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
লোকসভায় প্রথম বক্তৃতা করলেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। আর তা করলেন বিরোধী শিবিরের তরফে সংবিধান-বিতর্কের সূচনা করে। শুক্রবার দুপুরে ওয়েনাড়ের সদ্যনির্বাচিত কংগ্রেস সাংসদের বক্তৃতায় ভারতীয় সংবিধানের রূপকারদের তালিকায় তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সব শেষে এল জওহরলাল নেহরুর নাম।
সংবিধান গ্রহণের ৭৫তম বর্ষ নিয়ে শুক্রবার দুপুর থেকে দু’দিনের আলোচনা শুরু হয়েছে সংসদের দুই কক্ষে। সরকারপক্ষের তরফে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বিতর্কের সূচনা করেন। তার পরেই বলতে ওঠেন প্রিয়ঙ্কা। স্পিকারকে সম্বোধন করে প্রথমেই সম্মান জানান ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সংসদ ভবনে জঙ্গি হানায় নিহত নিরাপত্তাকর্মীদের প্রতি। পরের বাক্য থেকেই শুরু হয় সরকারকে নিশানার পালা।
বিআর অম্বেডকর, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী এবং নেহরু সংবিধান রচনা ও প্রণয়নের মাধ্যমে ভারতবাসীকে যে ‘ন্যায়ের রক্ষাকবচ’ (ঘটনাচক্রে এ বারের লোকসভা ভোট প্রিয়ঙ্কার দাদা রাহুলের নেতৃত্বে ‘পাঁচ ন্যায়ে’র প্রতিশ্রুতি দিয়েই লড়েছিল কংগ্রেস) দিয়েছিলেন, গত এক দশকে নরেন্দ্র মোদীর জমানায় পরিকল্পিত ভাবে তা দুর্বল করা হচ্ছে বলে আধ ঘণ্টার বক্তৃতায় বার বার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। উন্নাও ও হাথরসের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড, সম্ভল থেকে মণিপুর পরিস্থিতি -- এ সব নিয়ে দুষেছেন শাসকদলকে। তাঁর পরিবারের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে শাসক শিবিরের অভিযোগের জবাবও দিয়েছেন শানিত ভাষায়। কখনও বিজেপি সাংসদদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘সব দোষ কি একা নেহরুর?’’ কখনও জরুরি অবস্থা এবং ইন্দিরা গান্ধীর প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘১৯৭৫ সালের জন্য তো ক্ষমা চাওয়া হয়েছিল। আপনারাও দেখে শিখুন। যে কাজ করেছেন তার জন্য ক্ষমা চান।’’
মোদীর জমানায় দেশে যে ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে, তা ব্রিটিশ জমানার সঙ্গে তুলনীয় বলে অভিযোগ করেছেন প্রিয়ঙ্কা। প্রথম বক্তৃতাতেই ‘মোদী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি’ গৌতম আদানির নাম তুলে বিজেপি সাংসদদের প্রবল বাধায় থমকাতে হয়েছে তাঁকে। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে বিধায়ক ভাঙিয়ে সরকার ফেলার কথা বলতে গিয়ে বিজেপির বাধার মুখে পড়ে সপাটে বলেছেন, ‘‘ভারতীয় সংবিধান কিন্তু সঙ্ঘের বিধান নয়।’’ এর পর স্পিকার ওম বিড়লাও তাঁকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘‘সংবিধান নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বিতর্ক সীমাবদ্ধ রাখুন।’’ সরকার পক্ষের এক সাংসদ তাঁকে নিশানা করে বলেছেন, ‘‘আপনি তো সংসদেই থাকেন না।’’ প্রিয়ঙ্কার জবাব দিয়েছেন, ‘‘আমি তো সংসদে মাত্র ১৫ দিন ধরে আসছি। মাত্র এক দিন ১০ মিনিটের জন্য প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন দেখেছি।’’
বিজেপির জমানায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি, পরিকল্পিত ভাবে ইতিহাসের পাঠ্য বদল, কৃষকবিরোধী নীতি, টাকা এবং ক্ষমতার জোরে বিভিন্ন রাজ্যে বিধায়ক ভাঙিয়ে নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটানোর মতো প্রসঙ্গ এসেছে প্রিয়ঙ্কার বক্তৃতায়। ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে টিপ্পনী ভেসে এলে সরাসরি সে দিকে তাকিয়ে বলেছেন, ‘‘ব্যালটে ভোট করিয়ে দেখুন না। কার কত সমর্থন স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশের আগরায় এক দলিত সাফাইকর্মীকে চুরির অভিযোগে থানায় পিটিয়ে খুনের অভিযোগের কথা বলার সময় সরকারপক্ষের এক সাংসদকে হাসতে দেখেন প্রিয়ঙ্কা। বক্তৃতা থামিয়ে তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি হাসছেন। বিষয়টি কিন্তু গুরুতর।’’
মোদীর জমানায় সংবিধান ‘জ্বলছে’ বলেও অভিযোগ করেন ওয়েনাড়ের সাংসদ। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য. ‘‘লোকসভা ভোটে হারতে হারতে জিতে গিয়ে এঁরা (বিজেপি) বুঝেছেন সংবিধান বদলের চেষ্টা হলে বিপদ।’’ নাম না-করে মোদীকে খোঁচা দিয়ে প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘জাতগণনার দাবি ওঠার পরে এঁদের যুক্তি ছিল গরু-মহিষ ছিনিয়ে নেবে। মঙ্গলসূত্র চুরি করে নেবে।’’ পরিকল্পিত ভাবে সংরক্ষণ ব্যবস্থা বাতিলের চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। প্রিয়ঙ্কা লোকসভায় তাঁর বক্তৃতা শেষ করেছেন সংবিধানের নীতিবাক্য, ‘সত্যমেব জয়তে’ বলে। তার ঠিক আগেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘ইতিহাস বলেছে, ভারত বেশি দিন কাপুরুষদের হাতে থাকেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy