জাতীয় কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ। ফাইল চিত্র।
শুধু তৃণমূল কংগ্রেসের নামটাই উচ্চারণ করা হল না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরে রবিবার জাতীয় কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসকে নাম না করে নিশানা করা হল। আদানি-কাণ্ড নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রণকৌশলের দিকে ইঙ্গিত করে আজ জাতীয় কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ কটাক্ষ করে বললেন, “কিছু বিরোধী দল রয়েছে, যারা সংসদে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের ঘরে গিয়ে বৈঠকে বসে। কিন্তু তার পরে যা কাজকর্ম করে, সেগুলো শাসক দলের পক্ষে যায়।”
আদানি-কাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি-র তদন্তের দাবির থেকেও তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্তে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। সে দিকে ইঙ্গিত করে জয়রাম বলেন, “কিছু বিরোধী দল বলেছিল, সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত চাই। সেটাও রাজনৈতিক পদক্ষেপ ছিল, যাতে প্রধানমন্ত্রী এর থেকে বেঁচে যান।” কংগ্রেসের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবিত কমিটি শুধুমাত্র শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের স্বার্থরক্ষার দিকটি দেখবে। কিন্তু জেপিসি হলে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শিল্পপতি গৌতম আদানির ‘সম্পর্ক’ও তদন্তে উঠে আসবে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দু’দিন আগেই মেঘালয়ে গিয়ে ‘কংগ্রেসের মতাদর্শটা কী’ বলে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কেরলে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্রিপুরায় সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের নীতি নিয়েও কটাক্ষ করেছিলেন। জাতীয় স্তরে বিরোধী জোটে কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেই নেতৃত্বের বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন।
অভিষেকের এই মন্তব্যের পরেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির পুরনো জোটের কথা মনে করান। আজ জয়রাম বলেছেন, “কংগ্রেসই একমাত্র দল, যারা বিজেপির সঙ্গে কখনও সমঝোতা করেনি। বিজেপি সম্পর্কে আমাদের নীতি দু’মুখো নয়। আমাদের একটাই মুখ। আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে।” বিরোধী জোটের নেতৃত্ব নিয়ে জয়রাম বলেন, “আমাদের কারও শংসাপত্রের প্রয়োজন নেই যে, আমাদের বিরোধী জোটের নেতৃত্ব করতে হবে। কারণ কংগ্রেসকে ছাড়া কোনও বিরোধী জোট সফল হবে না।”
কংগ্রেসের এই মন্তব্যের পরে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, “আমরা সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে জোর দিয়েছিলাম, কারণ লোকসভা-রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি-তে বিজেপির সাংসদদেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে। বিজেপির সাংসদই চেয়ারম্যান হবেন। নাম-কে-ওয়াস্তে অনেক বিরোধী দল থাকবে। কিন্তু সত্যিকারের বিরোধীর সংখ্যা থাকবে ২০ শতাংশ।” সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্তের বিরোধিতা করা মানে বিচারবিভাগের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করা বলেও তাঁর মত। সুখেন্দুবাবু বলেন, “বামফ্রন্ট জমানা ও তার আগে পশ্চিমবঙ্গে হাজার হাজার কংগ্রেস কর্মী সিপিএমের হাতে খুন হওয়ার পরে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের হাত মেলানোটা মতাদর্শ নয়, দ্বিচারিতা।” বিজেপির সঙ্গে অতীতে তৃণমূলের হাত মেলানো নিয়ে সুখেন্দুবাবু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিপিএম থেকে হটানোর জন্য বিজেপির সাহায্য নিয়েছিলেন। কারণ সে সময় কংগ্রেস সিপিএমের বি-টিম হয়ে গিয়েছিল।”
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার শনিবার কংগ্রেসকে বিরোধী জোটের বিষয়ে পদক্ষেপ করতে আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ভারত জোড়ো যাত্রা খুবই ভাল হয়েছে। এ বার কংগ্রেসকে বিরোধীদের সঙ্গে জোট নিয়ে বসতে হবে। জোট হলে বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে ১০০-র কম আসনে আটকে যাবে। জয়রাম আজ বলেছেন, “আমরা নীতীশের বক্তব্যকে স্বাগত জানাচ্ছি। রায়পুরে কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশনে ২০২৪-এর লোকসভা ভোট, বিরোধী জোট নিয়ে আলোচনা হবে। তার আগে ২০২৩-এর বিধানসভা ভোটগুলিতেও লড়তে হবে। শক্তিশালী কংগ্রেস ছাড়া বিরোধী ঐক্য অসম্ভব।” তাঁর যুক্তি, নির্বাচনের আগে জোট হবে না পরে, সে সব নিয়ে প্লেনারি অধিবেশনে আলোচনা হবে। তামিলনাড়ুর মতো অনেক রাজ্যে কংগ্রেস ভোটের আগেও জোট করেছে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস বিজেপি বিরোধী জোটে রয়েছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশন শুরু হচ্ছে। কংগ্রেস সভাপতি পদে মল্লিকার্জুন খড়্গে নির্বাচিত হওয়ার পরে প্লেনারি অধিবেশনে ২০২৪-এর রণকৌশল প্রধান বিষয় হয়ে উঠবে। ভোটারদের কাছে পৌঁছতে প্লেনারির মূল মন্ত্র হবে ‘হাত সে হাত জোড়ো’। কংগ্রেসের সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতা কে সি বেণুগোপাল আজ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক প্রস্তাবে বিরোধী জোট নিয়ে আলোচনা হবে। ১৫ হাজার প্রতিনিধি অংশ নেবেন। তাঁদের মধ্যে ১৩৩৮ জন এআইসিসি-র নির্বাচিত প্রতিনিধি। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের জন্য নির্বাচন হলে এঁরাই ভোট দেবেন। যদিও কংগ্রেসের সিংহভাগ নেতাই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচন চাইছেন না বলে দলীয় সূত্রের খবর। বেণুগোপাল বলেন, “প্লেনারি অধিবেশনের প্রথম দিনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।” সনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে আজীবন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে জল্পনাও খারিজ করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy