সংস্কারের পথে হাঁটতে গিয়ে একদা শরিকের সঙ্গে বিচ্ছেদও পরোয়া করেনি কংগ্রেস। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি এবং রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে ইউপিএ সরকার ছেড়েছিল তৃণমূল। বিরোধী আসনে বসে অর্থনৈতিক দিশা নিয়ে বিভ্রান্ত সেই কংগ্রেসই। মোদী জমানার সংস্কারে সায় দেবে, নাকি বিরোধিতা করবে? সংসদের শীতকালীন অধিবেশন আসন্ন। তার আগে এ ব্যাপারে দলের প্রবীণদের সঙ্গে আলোচনায় বসেও সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না রাহুল গাঁধী। কারণ সংস্কারের প্রশ্নে আড়াআড়ি বিভক্ত দল।
কেন্দ্রে মোদী সরকারের গঠনের পর থেকেই কংগ্রেসে এই বিতর্ক চলছে। কারণ, সংসদের প্রথম অধিবেশনেই বিমা বিল পেশ করে সরকার। তখনই এই প্রশ্ন উঠেছিল। নীতিগত ভাবে বিরোধিতার জন্য তাদের কাছে পথ খোলা ছিল না। কারণ, বিমা বিল পাশ করাতে উদ্যোগী ছিলেন মনমোহন-চিদম্বরমরাই। তবু নতুন বিল খতিয়ে দেখার অছিলায় তা আপাতত আটকানোর চেষ্টা করেছে কংগ্রেস। কিন্তু এ ভাবে কত দিন? কংগ্রেসও জানে যে, শীতকালীন অধিবেশনেও পণ্য ও পরিষেবা কর, জমি বিল, কয়লা খনি বণ্টন অর্ডিন্যান্সের মতো সংস্কারের কর্মসূচিগুলিকে অগ্রাধিকার দেবে সরকার। তখন কী করবে দল?
এই ভাবনা থেকেই পি চিদম্বরম, কপিল সিব্বল, সলমন খুরশিদ, জয়রাম রমেশ, অমরেন্দ্র সিংহ, মণিশঙ্কর আইয়ার, কে ভি টমাসের মতো নেতাদের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠকে বসেন রাহুল। সূত্রের খবর, সংস্কারের প্রশ্নে সায় দিয়ে উদার অর্থনীতির পক্ষে সওয়াল করেন চিদম্বরম, জয়রাম রমেশ, সলমন খুরশিদ, কপিল সিব্বলরা। উল্টো মত দেন মণিশঙ্কর আইয়ার, অমরেন্দ্র সিংহ, কে ভি টমাস, এ কে অ্যান্টনি, শাকিল আহমেদরা।
চিদম্বরম-সিব্বলদের বক্তব্য, গত পাঁচ বছর ধরে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ লগ্নি, পেট্রোলের মূল্যে বিনিয়ন্ত্রণ, পণ্য ও পরিষেবা কর চালুর ভাবনা, ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের মতো বিষয়ে গলা ফাটিয়েছে দল। উত্তরপ্রদেশে কৃষকদের নিয়ে জনসভা করে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ লগ্নির সুফল বোঝানোর চেষ্টা করেছেন খোদ রাহুল। এখন বিরোধিতা করলে নেতিবাচক বার্তা যাবে।
কিন্তু আপত্তি তোলেন অ্যান্টনি, টমাস, মণিশঙ্কররা। অ্যান্টনি বলেন, সংস্কার করতে গিয়েই হাত পুড়িয়েছে কংগ্রেস। রাহুলকে তিনি বলেন, কংগ্রেস যখন ভর্তুকি ছাঁটাই করেছে, তখন রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে সরকার বিরোধী রাজনীতি করেছে বিজেপি। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করে কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মনে সাফল্যের সঙ্গেই ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন অরুণ জেটলিরা। ফলে কংগ্রেসেরও আগামী পাঁচ বছর সেই রাজনীতিই করা উচিত।
মণিশঙ্কর বলেন, কংগ্রেস কখনওই ঢালাও সংস্কারের মতাদর্শে চলেনি। অতীতে পচমঢ়ী অধিবেশনে অর্থনৈতিক প্রস্তাব রচনায় সময়ে মনমোহন সিংহ যখন অর্থনীতিকে পুরোটাই বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখনও প্রবল বিরোধিতা হয়েছিল। মনমোহনের মত ছিল, কোনও নিয়ন্ত্রণ না রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণ করা হোক। কিন্তু প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রবীণ নেতারা আপত্তি করেন। শেষ পর্যন্ত ভারসাম্য রাখা হয়। অ্যান্টনিদের দাবি, সংস্কারের বিরোধিতার পাশাপাশি একশো দিনের কাজ, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাইয়েরও বিরোধিতা করতে হবে। ইউপিএ জমানায় পাশ হওয়া জমি অধিগ্রহণ আইনের শর্ত লঘু করলেও আন্দোলনে নামা উচিত কংগ্রেসের।
প্রশ্ন হল, কংগ্রেসের মধ্যে যদি এতটাই সংস্কার বিরোধিতা থাকে, তা হলে ইউপিএ জমানায় ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্ত কী ভাবে নিয়েছিলেন মনমোহনরা। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, মন্দার যুক্তি দিয়ে সনিয়া-রাহুলের সম্মতি আদায় করেছিলেন মনমোহন-চিদম্বরম। তা ছাড়া সরকারে থাকায় শিল্পমহলেরও বিপুল চাপ ছিল। তাই বিরোধিতার স্বর শোনা যায়নি। কিন্তু এখন সে দায় নেই। ফলে সংস্কার বিরোধী আওয়াজ জোরালো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy