Advertisement
০৪ অক্টোবর ২০২৪

বারবার কেন ভ্যানিশ রাহুল, বিরোধী-খোঁচায় ফাঁপরে দল

চর্চায় ফের রাহুল গাঁধীর অন্তর্ধান রহস্য! আপাতত রাজধানীর রাজনৈতিক করিডরে এটি এক দিকে কংগ্রেসের শিরঃপীড়ার কারণ, অন্য দিকে বিজেপি তথা বিরোধী দলের হাতে একটি চমৎকার অস্ত্রবিশেষ।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০৩:১৭
Share: Save:

চর্চায় ফের রাহুল গাঁধীর অন্তর্ধান রহস্য!

আপাতত রাজধানীর রাজনৈতিক করিডরে এটি এক দিকে কংগ্রেসের শিরঃপীড়ার কারণ, অন্য দিকে বিজেপি তথা বিরোধী দলের হাতে একটি চমৎকার অস্ত্রবিশেষ।

মাঝে মাঝেই তিনি উধাও হয়ে যান। কোথায় গিয়েছেন, কবে ফিরবেন, কেন গিয়েছেন— এ সবের কোনও উত্তর থাকে না কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও। এমনকী, লোকসভা চলাকালীন গুরুত্বপূর্ণ বিল নিয়ে আলোচনার সময়ও তাঁর দীর্ঘ অনুপস্থিতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন ও টিপ্পনি ঠিকরে এলেও শুনতে না পাওয়ার
ভান করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না কংগ্রেস নেতাদের।

সেই রহস্যজনক অন্তর্ধান কাণ্ড সম্প্রতি দেখা গেল আবারও। গত মাসের ২০ তারিখ, নিজের ৪৬তম জন্মদিনের ঠিক পরেই একটি টুইটের মাধ্যমে দেশবাসীকে টা-টা করে চলে গেলেন রাহুল গাঁধী! কোথায় এবং কেন গেলেন, তা যথারীতি গোপনই রইল। গত ৩ তারিখ তিনি নিশ্চুপে রাজধানীতে ফিরে এলেও, এখনও কংগ্রেস নেতাদের কাছে স্পষ্ট নয় যে রাজনৈতিক ডামাডোলের এই বাজারে এত দিন কোথায় ছিলেন তাঁদের প্রিয় নেতা। টুইটে রাহুল শুধু লিখেছিলেন, “দেশের বাইরে যাচ্ছি অল্প কয়েক দিনের জন্য। যাঁরা গত কাল আমায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং দেখা করেছেন তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সত্যিই আপনাদের ভালবাসা পেয়ে আমি ধন্য।” ব্যস্, তার পর রাজধানীতে নানা রকম জল্পনা চললেও টানা দু’-হপ্তা কোনও খোঁজ মেলেনি কংগ্রেস সহসভাপতির। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর অবশ্য দাবি, তিনি লন্ডনের রাস্তায় রাহুলকে তাঁর এক ‘বিশেষ বন্ধুর’ সঙ্গে যেতে দেখেছেন।

রাজনৈতিক শিবিরের জোরালো গুঞ্জন, কোথায় যাচ্ছেন তা নিয়ে দলীয় সতীর্থদের বলে না গেলেও, দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মীদের নাকি জানিয়েছিলেন, তিনি ইস্তানবুল যাবেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাঁর এই ছুটির মেয়াদে ব্রেক্সিট থেকে ঢাকার গুলশন কাণ্ডের মত দুনিয়া কাঁপানো হরেক বিষয়ে রাহুলের টুঁ শব্দ পাওয়া যায়নি। কিন্তু হঠাৎই ইস্তানবুল বিমানবন্দরে জঙ্গি হামলার পর গভীর শোক এবং সমবেদনা প্রকাশ করে টুইট করেছিলেন রাহুল, ‘অজ্ঞাতবাস’ থেকেই। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, দুই আর দুই চার করলে এই সম্ভাবনাই তৈরি হয় যে, ওই টুইটটি করে একান্ত ঘনিষ্ঠদের বার্তা দিতে চেয়েছেন, যে তিনি ঠিক আছেন।

তবে তিনি ইস্তানবুলেই যান, কি জাপান-কাবুল— ধন্দ কিন্তু কাটছে না। অন্য দিকে কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত, জয়রাম রমেশ থেকে বিভিন্ন ছোটবড় নেতা ক্রমাগত নামতা পড়ার মতো করে বলে চলেছেন রাহুল দলের সভাপতি হচ্ছেনই। শুধু সময়ের অপেক্ষা। সনিয়া গাঁধী নিজেও স্থির করে রেখেছেন, রাহুলকে দলের শীর্ষপদটি অর্পণ করার জন্য। সব মিলিয়ে আসন্ন উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এই বছর একটা প্রত্যাশা দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল যে, রাহুলের জন্মদিনের উৎসব মঞ্চটিকে কাজে লাগিয়ে তাঁকে সভাপতিত্বে বরণ করে নেওয়া হবে।

কিন্তু কোথায় কী! সেই বিপুল প্রত্যাশার গুড়ে বালি গিয়ে জন্মদিনের রাতেই টুইট করে ছুটি কাটাতে বিমান ধরলেন রাজীব-পুত্র! শেষ পর্যন্ত দেখা গেল তিনি নিজেই যাকে বলেছেন ‘অল্প কয়েক দিনের জন্য’, সেটি দাঁড়ালো ১৪ দিনের নির্ভেজাল অবকাশে! বিজেপি নেতাদের কথায়, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসনে বসার পর থেকে আজ পর্যন্ত এক দিনও ছুটি নেননি। আর কংগ্রেস তাঁরই প্রতিপক্ষ হিসেবে যাঁকে তুলে ধরে প্রচার করছে, তার জীবনে তো ছুটিই ছুটি! জনসাধারণ সবটাই দেখছেন।’ আরও এক ধাপ এগিয়ে বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, “যখনই দেখা যায় দল বেগতিক, রাহুলবাবা উধাও হয়ে যান। সর্বত্রই যখন কংগ্রেসের গেল-গেল রব, তখন তাদের নেতার এই অর্ন্তধান আমরা আগেও দেখেছি।”

নাম জানাতে না চাওয়া এক কংগ্রেস নেতার কথায়, “তা-ও ভাল, উনি এ বার বলে-কয়ে গিয়েছেন। না হলে তো গত বারের মত অপদস্থ হতে হত সংসদে।” গত বার, অর্থাৎ ২০১৫ সালে টানা ৫৬ দিন অদৃশ্য ছিলেন রাহুল। সংসদ তোলপাড় করেছিলেন বিজেপি নেতারা। সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, এই ছুটিতে বরং রাহুল গাঁধী ভারতের ইতিহাসটা পড়ে ফিরুন! সে সময় সংসদে জমি বিল নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনায় তাঁর সেই অনুপস্থিতি নিয়ে বিরোধীরা টিপ্পনি কেটেছিলেন। প্রশ্ন উঠেছিল, কৃষকদের জমির লড়াই নিয়ে পদযাত্রা করা রাহুল আজ কোথায় লুকিয়ে পড়লেন?
অরুণ জেটলি বলেছিলেন, “প্রধানমন্ত্রী বিদেশযাত্রা করেন দেশের কাজে। রাহুল কোথায় যান ও কেন, তা
কেউ জানে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE