প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মৌন! কিন্তু সুষমা স্বরাজ ও বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারির অভিযোগের ঢোল পিটিয়েই চলেছে বিরোধীরা!
ধারাবাহিকের আজকের পর্বে কংগ্রেস টেনে বের করল রাজস্থানের ঢোলপুর প্রাসাদের হস্তান্তর নিয়ে কিছু নথি। তাদের অভিযোগ, সরকারি মালিকানাধীন এই প্রাসাদটিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি করেছেন বসুন্ধরা। তার পর তাঁর পুত্র তথা বিজেপি সাংসদ দুষ্মন্ত সিংহ ও বিতর্কিত ক্রিকেট-কর্তা ললিত মোদী মিলে প্রাসাদটিকে ‘রাজ নিবাস প্যালেস’ নামে একটি বিলাসবহুল হেরিটেজ হোটেলে রূপান্তরিত করেছেন। বসুন্ধরার বিরুদ্ধে নয়া এই বিতর্ক উস্কে দেওয়ার পাশাপাশি আজ ফের প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘ঠিক এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দুর্নীতি-প্রশ্নে তিনি বিজেপি বা এনডিএ সদস্যদেরও রেয়াত করবেন না। বলেছিলেন, ‘না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা’! কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাকের ডগাতেই দিব্যি খাওয়াদাওয়া চলছে বিজেপিতে!’’
কংগ্রেসের এই অভিযোগ খণ্ডন করতে বিজেপির কোনও কেন্দ্রীয় নেতা অবশ্য আসরে নামেননি। তবে বসুন্ধরার ঢাল হয়ে সাংবাদিকদের জবাব দেন রাজস্থান রাজ্য বিজেপির সভাপতি অশোক পারনামি। তাঁর দাবি, এটা সরকারি সম্পত্তি নয়, বসুন্ধরা-পুত্র দুষ্মন্ত সিংহেরই সম্পত্তি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে পারনামি বলেন, ‘‘ব্যাপারটা আদতে রাজঘরানার অন্দরমহলের বিবাদ। বসুন্ধরা ও তাঁর প্রাক্তন স্বামী হেমন্ত সিংহের বিবাহ বিচ্ছেদের সময় সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে টানাপড়েন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। আড়াইশো কোটির বেশি টাকা মূল্যের সেই সম্পত্তির বিবাদ শেষ পর্যন্ত মেটে। তখন হেমন্ত নিজেই দুষ্মন্ত সিংহকে ঢোলপুর প্রাসাদের মালিকানা ছেড়ে দেন। তাই কংগ্রেসের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’
প্রশ্ন হল, ঢোলপুর প্রাসাদ হঠাৎ কেন প্রাসঙ্গিক?
ঢোলপুর প্রাসাদ নিয়ে তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে এ দিন কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ যে অভিযোগ করেছেন, তাতে বসুন্ধরার সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে ললিত মোদীকেও। জড়ানো গিয়েছে বসুন্ধরা-পুত্র দুষ্মন্তকেও। রমেশের অভিযোগ, ললিত মোদী কালো টাকার কারবার, বিদেশি মুদ্রা লেনদেনে অনিয়ম-সহ একাধিক আর্থিক দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত এবং ফেরার। এবং সরকারি পদের অপব্যবহার করে তাঁকে পালিয়ে থাকতে সাহায্য করেছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। রমেশের কথায়, ‘‘সুষমার স্বামী-কন্যার বিরুদ্ধে ললিত মোদীর থেকে আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একই ভাবে বসুন্ধরার সঙ্গে ললিতের আর্থিক স্বার্থ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তাই যে ভালমানুষি বা ব্যক্তিগত স্তরে ললিত মোদীকে সাহায্যের কথা সুষমা, বসুন্ধরা বলছেন, তা সাজানো গল্প! আসল ব্যাপারটা হল নিতান্তই পাওনাগণ্ডার!’’
কৌশলগত ভাবে কংগ্রেস এখন সুষমার তুলনায় বসুন্ধরার ইস্তফা নিয়ে বেশি চাপ দিচ্ছে। কারণ, একে তো বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ সুষমাকে কিছুটা আড়াল করলেও বসুন্ধরার ক্ষেত্রে তা করছেন না। তা ছাড়া বসুন্ধরার সঙ্গে ললিত মোদীর যোগের একাধিক প্রমাণ নিত্যদিন সামনে আসছে। পাশাপাশি বিজেপির বসুন্ধরা-বিরোধী অংশ যথেষ্টই সক্রিয়। যদিও এ দিনই সঙ্ঘের তাত্ত্বিক নেতা গোবিন্দাচার্য এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সুষমা এবং বসুন্ধরা দু’জনেরই পদত্যাগ করা উচিত। এ নিয়ে কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদ টুইটারে মন্তব্যও করেছেন। কিন্তু কংগ্রেস আপাতত বসুন্ধরার দিকেই বেশি নজর দিচ্ছে। দলের একটি অংশের বক্তব্য, দু’টো বিষয় নিয়ে এক সঙ্গে ময়দানে না নেমে একটা একটা করে উইকেট ফেলার চেষ্টা করাই ভাল।
সেই কৌশলেই আজ বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারির ঢোলে ফের কাঠি দিয়েছে কংগ্রেস। জয়রামের বক্তব্য, বসুন্ধরার সঙ্গে ললিত মোদীর আর্থিক স্বার্থ কতটা গভীর, তা স্পষ্ট। তাঁর কথায়, ‘‘আগেই জানা গিয়েছে, ললিত মোদীর কোম্পানি আনন্দ হোটেলস প্রাইভেট লিমিটেড মরিশাসের একটি ভুঁইফোড় সংস্থা থেকে ২১ কোটি টাকা লগ্নি জোগাড় করেছিল। তার পর ললিতের ওই সংস্থা বসুন্ধরা-পুত্র দুষ্মন্তের হোটেল ব্যবসায় (নিয়ন্ত হেরিটেজ হোটেল) সাড়ে ১১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। শুধু তাই নয়, দুষ্মন্ত সিংহের নিয়ন্ত হেরিটেজ হোটেলের দশ টাকা দামের এক-একটি শেয়ার পিছু ললিত দিয়েছিলেন প্রায় ৯৬ হাজার টাকা।’’ একই সঙ্গে রমেশের দাবি, ‘‘দু’বছর আগে রাজস্থান বিধানসভা ভোটের সময় বসুন্ধরা যে হলফনামা দিয়েছিলেন, তাতেও স্পষ্ট লেখা ছিল, নিয়ন্ত হেরিটেজ হোটেলের ৩৩৮০টি শেয়ার রয়েছে তাঁর। আবার এখন দেখা যাচ্ছে, ঢোলপুর হোটেলের মালিকানা পরিবর্তন করে ললিত মোদীর সঙ্গে হোটেল তৈরি করেছেন বসুন্ধরা ও দুষ্মন্ত।’’
নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে দু’টি হলফনামা, খাজনার কাগজ এবং দু’টি জবানবন্দি প্রকাশ করে কংগ্রেস নেতাদের দাবি, ১৯৫৪ সালে ঢোলপুর ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। ঢোলপুরের তৎকালীন রাজা, রাণা উদয়ভান সিংহ তথা বসুন্ধরার দাদাশ্বশুর ব্যক্তিগত মালিকানায় কিছু সম্পত্তি রেখে বাকিটা সরকারকে দান করেন। তার পর থেকেই ঢোলপুর প্রাসাদ সরকারি সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ২০১০ সাল পর্যন্ত পাওয়া ৬টি নথি প্রমাণ করে, ঢোলপুর প্রাসাদ সরকারের অধিকারেই ছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে প্রাসাদের মালিকানা পরিবর্তন করে ব্যক্তিগত মালিকানায় নিয়ে আসেন বসুন্ধরা। তাঁর ছেলে দুষ্মন্ত ও ললিত মোদী মিলিত ভাবে সেটিকে একটি বিলাসবহুল হেরিটেজ হোটেলে রূপান্তরিত করেছেন। এ ব্যাপারে আদালতে দেওয়া বসুন্ধরার প্রাক্তন স্বামী হেমন্ত সিংহের একটি বিবৃতির প্রতিলিপিও আজ প্রকাশ করে কংগ্রেস। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৮০ সালের ১১ নভেম্বর হেমন্ত আদালতকে জানান, প্রাসাদটি এখন সরকারের সম্পত্তি। তা ছাড়া ২০০৫ সালে আদালতে দেওয়া এক হলফনামাতেও সে কথা স্বীকার করে নেন স্বয়ং বসুন্ধরা। পরবর্তী কালে খাজনা আদায় সংক্রান্ত কাগজপত্রেও তার উল্লেখ রয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বসুন্ধরা মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন প্রাসাদটির মালিকানা বদল করতে সক্রিয় হন। তার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরবর্তী কালে কার্যসিদ্ধি করেন।
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের এই অভিযোগের কিছু পরে আসরে নামে রাজস্থান বিজেপি। পাল্টা কাগজপত্র দেখায় তারাও। এই শিবিরের নেতা হিসেবে পারনামির দাবি, ‘‘সরকারি পরিকাঠামো তৈরির জন্য কয়েক বছর আগে ঢোলপুর প্রাসাদের এক পাশের জমি অধিগ্রহণ করে রাজস্থান প্রশাসন। সে জন্য সরকার থেকে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয় দুষ্মন্তকে।
এর পরেও কংগ্রেস এ কথা বলে কী করে?’’
পাল্টা জবাবে জয়রাম বলেন, ‘‘অনিয়ম যে এ ক্ষেত্রে হয়েছে, সন্দেহ নেই। তা ছাড়া মূল ব্যাপার হল, ললিত মোদীর সঙ্গে লেনদেন। তা কি অগ্রাহ্য করতে পারছেন বসুন্ধরা? বরং এ দিক-ও দিক করে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন! কিন্তু হাতেগরম কাগজপত্র যখন রয়েছে, তখন মানুষকে বোকা বানানো এত সহজ হবে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy