Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Inauguration of Ram Mandir in Ayodhya

‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ নিয়ে বাড়ছে বিতর্ক, ফের সরব শঙ্করাচার্য

পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী দু’দিন আগেই অভিযোগ করেছিলেন, রামমন্দির ঘিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আচরণ ‘উন্মাদের লক্ষণ’।

ram temple

অযোধ্যার রামমন্দির। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৯
Share: Save:

অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে কেন্দ্রের সরকার তথা বিজেপির সঙ্গে শঙ্করাচার্যদের সংঘাত আরও তীব্র হল। সনাতন ধর্মীয় রীতি মেনে রাম মন্দিরে রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ হচ্ছে না বলে শঙ্করাচার্যদের সুরে সরব হল নির্মোহী আখড়াও।

পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী দু’দিন আগেই অভিযোগ করেছিলেন, রাম মন্দির ঘিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আচরণ ‘উন্মাদের লক্ষণ’। অযোধ্যায় আগামী ২২ জানুয়ারি রাম মন্দিরের উদ্বোধনে তিনি যাবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পাল্টা বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, কংগ্রেসের সুরে কথা বলছেন শঙ্করাচার্য। গঙ্গাসাগরে সোমবার তার জবাবে আবার শঙ্করাচার্য বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের আমলে আমি যখন কিছু বলতাম, তখন কি জনসঙ্ঘের হয়ে বলতাম? আমার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের যোগ নেই। এটা মোদী, যোগী (যোগী আদিত্যনাথ), সনিয়া (সনিয়া গান্ধী) প্রত্যেকে জানেন।’’ রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ নিয়ে আড়ম্বর বেশি হচ্ছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে শঙ্করাচার্য অবশ্য বলেছেন, এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর মতামত চাইলে তিনি জানাবেন।

পুরীর শঙ্করাচার্য, উত্তরাখণ্ডের জ্যোতিষপীঠের শঙ্করাচার্যের পরে নির্মোহী আখড়াও অভিযোগ করেছে, রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’য় ‘রামানন্দী’ সনাতন ঐতিহ্য মানা হচ্ছে না। তাদের দাবি, রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’য় তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন রামমন্দির কর্তৃপক্ষ। রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলায় অন্যতম মামলকারী ছিল নির্মোহী আখড়া। অযোধ্যায় নির্মোহী আখড়ার এক পদস্থ কর্মকর্তার মতে, রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’য় ৫০০ বছরের যে ঐতিহ্য, তা মানা হচ্ছে না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রামলালার পুজো চিরকাল রামানন্দীর ঐতিহ্য মেনে হয়ে এসেছে। কিন্তু শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রে ট্রাস্ট এ বার একটি মিশ্র ঐতিহ্য অনুসরণ করছে। এটা একে বারেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বলেছিলাম, প্রথা মেনে রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ হোক। কিন্তু আমাদের বক্তব্যকে উপেক্ষাই করা হয়েছে। ’’

উত্তরাখণ্ডের জ্যোতিষপীঠের শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ রবিবারই সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ‘‘আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু শাস্ত্র বলছে, প্রতিষ্ঠা তখনই সম্ভব, যখন মন্দির সম্পূর্ণ হয়। কারণ, মন্দির হল ঈশ্বরের দেহ। দেহ সম্পূর্ণ না হলে তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় কী ভাবে?’’ জ্যোতিষপীঠের শঙ্করাচার্যের ব্যাখ্যা, মন্দির যদি দেহ হয়, তবে তার চূড়ার শীর্ষ বিন্দুটি বা শিখর হল ঈশ্বরের চোখ। মাথার গম্বুজটি ঈশ্বরের মাথা। মন্দিরের মাথায় যে পতাকা ওড়ে, তা হল ঈশ্বরের চুলের প্রতীক। অথচ রাম মন্দিরে এর কোনওটিই সম্পূর্ণ হয়নি। তাই ঈশ্বরের দেহ সেখানে অসম্পূর্ণ। সেই অসম্পূর্ণ দেহে ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’র অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার অর্থ জেনেশুনে শাস্ত্র লঙ্ঘনে সায় দেওয়া।

গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন নিয়ে বাংলার রাজ্য সরকারের অবশ্য প্রশংসাই করেছেন পুরীর শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ। তিনি বলেন, ‘‘গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজনে বাংলার সরকার বোধ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। বাংলার সরকার সীমার মধ্যে থেকে এই মেলার কজ করেছে। অযথা হস্তক্ষেপ করে মেলার মর্যাদা বিকৃত করার চেষ্টা হয়নি। পরম্পরা মেনেই মেলা হয়েছে।’’ রাম মন্দির নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেই সীমা মানছেন না বলেই আগে দাবি করেছিলেন শঙ্করাচার্য।

বিজেপির দিক থেকে তাঁর প্রতি যে আক্রমণ এসেছে, তার প্রেক্ষিতে এ দিন গঙ্গাসাগরে শঙ্করাচার্য বলেছেন, ‘‘যার কথায় লোভ, ভয় এবং উদ্বেগ থাকে, তার কথার কোনও প্রভাব পড়ে না। আমার কথায় লোভ, ভয় এবং উদ্বেগ নেই। তাই আমার কথার প্রভাব পড়ে। ক্ষমতার পরিবর্তন হয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘অতীতে আমার সঙ্গে যাঁরা টক্কর নিয়েছেন, তাঁরা চুরমার হয়ে গিয়েছেন!’’ এই প্রসঙ্গে পি ভি নরসিংহ রাও, জ্যোতি বসু, মুলায়ম সিংহ যাদব এবং লালুপ্রসাদ যাদবের উদাহরণ টেনে ধর্মগুরুর দাবি, ‘‘এঁরা আমার সঙ্গে টক্কর নিয়েছিলেন। আমাকে কিছু করতে হয়নি। এঁরা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গিয়েছেন।’’ তাঁর এই মন্তব্যের মধ্যে বিজেপির প্রতিই প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি আছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Ayodhya Ram Mandir Ayodhya Ram Temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE