Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পায়ে চিপ পায়রার, পাকিস্তানের চর কি

পথভোলা পায়রা নাকি পাক-গুপ্তচর! দড়িকে সাপ ভাবার মতো ভুল হয়েই থাকে। কিন্তু সত্যিই যদি সাপ হয়? গুজরাতের জামনগরে এক পায়রা এমনই চিন্তায় ফেলেছে গোয়েন্দাদের। পায়রাটিতে পাকিস্তানের গুপ্তচরবৃত্তির ছায়া দেখছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

পায়ে মাইক্রোচিপ (বৃত্তে বড় করে দেখানো) নম্বরের রিং। গুজরাতের জামনগরে ধরা পড়েছে এমনই একটি পায়রা। ছবির পায়রাটি  ধরা পড়েছিল ২০১১ সালে ফিলিপিন্সের একটি দ্বীপে।

পায়ে মাইক্রোচিপ (বৃত্তে বড় করে দেখানো) নম্বরের রিং। গুজরাতের জামনগরে ধরা পড়েছে এমনই একটি পায়রা। ছবির পায়রাটি ধরা পড়েছিল ২০১১ সালে ফিলিপিন্সের একটি দ্বীপে।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৫:২৫
Share: Save:

পথভোলা পায়রা নাকি পাক-গুপ্তচর!

দড়িকে সাপ ভাবার মতো ভুল হয়েই থাকে। কিন্তু সত্যিই যদি সাপ হয়? গুজরাতের জামনগরে এক পায়রা এমনই চিন্তায় ফেলেছে গোয়েন্দাদের। পায়রাটিতে পাকিস্তানের গুপ্তচরবৃত্তির ছায়া দেখছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

হবে না-ই বা কেন! আরব সাগরের ও-পারেই পাকিস্তান। আর এ-পারে জামনগরে রয়েছে রিলায়্যান্স, এসার সংস্থার একাধিক তেল শোধনাগার। গোয়েন্দা পরিভাষায় তাই জামনগর হল অতি-স্পর্শকাতর এলাকা। সেই জামনগরে পায়রার পায়ে মাইক্রো চিপ! ডানায় আবার উর্দু ভাষার লেখা। এমন পায়রা ধরা পড়লে সন্দেহ তো জাগবেই। ফলে হইচই সব মহলে। জামনগর থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট আসতেই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রও। জামনগরে ও আশপাশের এলাকার সব পায়রার উপর কড়া নজর রাখতে আজ নির্দেশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সন্দেহ জাগলেই পায়রা পাকড়াও করে পরীক্ষা করে দেখতে ও দিল্লিকে তা জানাতে বলা হয়েছে জামনগর প্রশাসনকে।

পায়রার ডাকের ইতিহাস অনেক দিনের। এবং এর মাধ্যমে চরবৃত্তিরও। প্রচীন রাজা-রাজড়ার আমল থেকে আধুনিক প্রযুক্তি আসার আগে পর্যন্ত দ্রুত তথ্য বিনিময়ে পায়রাই ছিল অন্যতম ভরসা। দূর থেকে পথ চিনে বাসায় ফিরে আসার ক্ষমতা ও দ্রুত গতি মূলত এই দুই কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত পায়রার মাধ্যমে গোপন তথ্য আদানপ্রদান হতে দেখা গিয়েছে। জার্মানি ও মিত্র শক্তি, উভয় পক্ষেরই তখন অন্যতম ভরসা ছিল পায়রা। এর পরে উন্নত নানা প্রযুক্তির উদ্ভাবন পায়রার ব্যবহার কমিয়ে দেয়। কিন্তু ভয়টা যে রয়ে গিয়েছে, সেটাই ফের মনে করিয়ে দিল জামনগরের ঘটনা।

কী ভাবে ধরা পড়ল পায়রাটি?

জামনগরের উপকূল থেকে পাঁচ নটিক্যাল মাইল দূরে তৈরি হচ্ছে এসার সংস্থার সালায়া জেটি। গত ২০ মার্চ সেই জেটিতে রাখা বাটি থেকে একটি পায়রাকে জল খেতে দেখেন সংস্থার এক নিরাপত্তা কর্মী। তিনি দেখেন, পায়রাটির একটি পায়ে মাইক্রোচিপ ও অন্য পায়ে একটি চাকতি লাগানো ছিল। যাতে নম্বর লেখা রয়েছে ২৮৭৩৩। পায়ে চিপ ও নম্বর, ডানায় উর্দু্তে লেখা এ সব দেখে সন্দেহ হয়। পরের দিন ভাদিনার এলাকায় উপকূলরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন সংস্থার কর্মীরা। উপকূলরক্ষী বাহিনী রহস্য ভেদে ব্যর্থ হওয়ায় ২৩ মার্চ পায়রাটিকে পাঠানো হয় ভাদিনারের পুলিশের কাছে। সেখান থেকে চিপ ও চাকতিটি পরীক্ষার জন্য যায় গাঁধীনগরের ফরেনসিক ল্যাবে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, চিপটি থেকে এ পর্যন্ত ওই পায়রাটি সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। চিপে লেখা রয়েছে, এটি বেনজিং ডুয়াল প্রজাতির পায়রা। শারীরিক ভাবে অত্যন্ত সবল এই পায়রাগুলি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারে অনায়াসে। আপাত দৃষ্টিতে এই তথ্য সন্দেহজনক কিছু নয়। গবেষণার উদ্দেশ্যে বা তাদের গতিবিধির উপরে নজর রাখতে পাখির পায়ে চিপ লাগিয়ে থাকেন প্রকৃতিপ্রেমী ও বিজ্ঞানীরাও। আরব দেশগুলিতে ‘রেসের’ মতো প্রতিযোগিতামূলক খেলাতেও ব্যবহার করা হয় এমন পায়রা। মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “পায়রাটির ডানায় উর্দু ভাষায় রসুল-উল-আল্লাহ লেখা ছিল।”

পায়রাটি এসেছে কোথা থেকে, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। জামনগরের মতো জায়গা সব সময় জঙ্গিদের নিশানায়। তাই গুপ্তচরবৃত্তির উদ্দেশ্যে পাকিস্তান ওই পায়রাটিকে ব্যবহার করছিল, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না মন্ত্রকের কর্তারা। মাইক্রোচিপটি সম্পূর্ণ ডি-কোড করা গেলে পায়রাটির ঠিকুজি-কুষ্ঠি জানা যাবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। তবে কেন্দ্র ঝুঁকি নিতে নারাজ। তাই জামনগর ও আশপাশের এলাকার সব পায়রার উপর নজরদারি করার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বিশেষ করে কোনও পায়রার পায়ে মাইক্রোচিপ রয়েছে কিনা, তা নজরে রাখতে বলা হয়েছে। থাকলে আটক করতে হবে সেই পায়রা।

অন্য বিষয়গুলি:

Pigeons pak agent Chip Pakistan Border
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE