Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Waqf Board Amendment Bill

জেপিসির বৈঠকে আবার যোগ দিলেন কল্যাণ, টানা তৃতীয় দিন ওয়াকফ বিল বাতিলের দাবিতে অশান্তি

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী সোমবার জেপিসিকে চিঠি লিখে ওয়াকফ বিল বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু দিল্লি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান অশ্বিনী কুমার মঙ্গলবার বিল সমর্থন করেন।

Chaos again at JPC meet on Waqf bill after non-Muslim board official Delhi backs bill

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৫৮
Share: Save:

বিতর্কিত ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল সংক্রান্ত যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি)-র বৈঠকে আবার অশান্তি হল মঙ্গলবার। এই নিয়ে টানা তৃতীয় বৈঠকে প্রতিবাদের ঝড় তুললেন বিরোধী সাংসদেরা। মঙ্গলবার দিল্লি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান, আইএএস আধিকারিক অশ্বিনী কুমার নতুন সংশোধনী বিল সমর্থন জানানোয় প্রতিবাদে সরব হন বিরোধী সাংসদেরা। সাসপেনশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় মঙ্গলবার আবার ওয়াকফ বিল সংক্রান্ত জেপির বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি (আপ) নেত্রী অতিশী সোমবার জেপিসিকে চিঠি লিখে ওয়াকফ বিলে প্রস্তাবিত সংশোধনীকে বাতিল করার দাবি জানিয়েছিলেন। জেপিসির তরফে বিলের বিষয়ে দিল্লি সরকারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে অতিশী বিলটিকে ‘অপ্রয়োজনীয় এবং অন্তঃসারশূন্য’ বলেন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মঙ্গলবার দিল্লির উপরাজ্যপাল (লেফটেন্যান্ট গভর্নর) নিযুক্ত ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান বিল সমর্থন করেন।

এর প্রতিবাদ জানান, কল্যাণ, আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ, ডিএমকের মহম্মদ আবদুল্লা এবং কংগ্রেসের নাসির হুসেন ও মহম্মদ জাভেদ। তাঁরা দাবি করেন, দিল্লি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান মুসলিম নন। তাই তাঁর নিযুক্তি অসাংবিধানিক। বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় সরকার ও বিরোধী পক্ষের সাংসদদের।

গত ২২ অক্টোবর জেপিসির বৈঠকে অসংসদীয় আচরণের অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছিল শ্রীরামপুরের কল্যাণকে। তিনি জেপিসির চেয়ারম্যান তথা বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পালকে লক্ষ্য করে কাচের বোতল ভেঙে ছোড়েন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় কাচ বিঁধে কল্যাণের হাত জখম হয়েছিল। কল্যাণ মঙ্গলবার দাবি করেন, তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে কাচের বোতল ভাঙেননি। সেই সঙ্গে জগদম্বিকাকে নিশানা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘উনি আমাকে অসম্মান করেছেন। আমার পরিবারের উদ্দেশে অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়েছে।’’

এর পরে সোমবার জেপিসির দ্বিতীয় বৈঠকে যোগ দেননি কল্যাণ। সে দিন বিরোধী সাংসদেরা ওয়াকফ বিল বাতিলের দাবিতে সাময়িক ভাবে ওয়াকআউট করেছিলেন। প্রসঙ্গত, বিরোধীদের প্রবল আপত্তি ও হট্টগোলের মধ্যে গত ৮ অগস্ট লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। বিলটি ‘অসংবিধানিক এবং মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী’ বলে অভিযোগ তুলে বিরোধীরা একযোগে তা নিয়ে আপত্তি জানান। দীর্ঘ বিতর্কের শেষে ঐকমত্যের লক্ষ্যে বিলটি জেপিসি-র কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র।

ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতা প্রসঙ্গে বিরোধী শিবির মুসলিম সংগঠনগুলির যুক্তি, ওয়াকফ বোর্ডের বিভিন্ন সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যেই ওই বিল আনছে কেন্দ্র। ‘জমিয়তে ইসলামি হিন্দ’ এবং ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডে’র মতো প্রধান মুসলিম সংগঠনগুলির মতে, গেরুয়া শিবির দীর্ঘ সময় ধরেই দিল্লি-সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সেই কারণেই তড়িঘড়ি পাশ করাতে চাইছে সংশোধনী বিল। যদিও কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, খোদ মুসলিম সমাজের গরিব এবং মহিলারাই এত দিন ওয়াকফ আইন সংস্কারের দাবি জানাচ্ছিলেন।

বর্তমান ওয়াকফ আইনের ৪০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যে কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণার অধিকার এত দিন ছিল ওয়াকফ বোর্ডের হাতেই। ফলে ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বার বার বহু গরিব মুসলিমের সম্পত্তি, অন্য ধর্মাবলম্বীদের ব্যক্তির সম্পত্তি অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের সেই একচ্ছত্র অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনও আধিকারিকের হাতে।

বর্তমানে যে আইন রয়েছে, তাতে ওয়াকফের দখল করা জমি বা সম্পত্তিতে কোনও ভাবেই পর্যালোচনা করার সুযোগ থাকে না। কারও আপত্তি সত্ত্বেও জমি বা সম্পত্তি দখল করতে পারে ওয়াকফ বোর্ড। তাতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকে না সরকারের। নতুন বিলে তার বন্দোবস্ত রয়েছে। যা নিয়ে আপত্তি উঠেছে। এ ছাড়া রয়েছে, একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণ নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাব। প্রসঙ্গত, ১৯৫৪ সালে প্রথম ওয়াকফ আইন পাশ হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইনে সংশোধনী এনে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছিল। বিজেপির দাবি ‘ওয়াকফ বোর্ডের একচ্ছত্র অধিকার’ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে নতুন সংশোধনীতে।

অন্য বিষয়গুলি:

Waqf Board Waqf Bill JPC Kalyan Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy