ওয়াকফ নিয়ে জেপিসি বৈঠক আবার উত্তপ্ত। ছবি: সমাজমাধ্যম।
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতেও অশান্ত হল ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল সংক্রান্ত যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি)-র বৈঠক। সোমবার বিলের খসড়া নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াকআউট করলেন, বিরোধী সাংসদেরা। যদিও কিছু ক্ষণ পরে ফিরে এসে তাঁরা আবার বৈঠকে যোগ দেন।
এই আবহেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি (আপ) নেত্রী অতিশী সোমবার জেপিসিকে চিঠি লিখে ওয়াকফ বিলে প্রস্তাবিত সংশোধনীকে বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। জেপিসির তরফে বিলের বিষয়ে দিল্লি সরকারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে অতিশী বিলটিকে ‘অপ্রয়োজনীয় এবং অন্তঃসারশূন্য’ বলেছেন। বৈঠকে ওয়াকফ বিলের খসড়া বাতিলের দাবি তুলে ওয়াকআউট করেন আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ, ডিএমকের মহম্মদ আবদুল্লা, ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-এর আসাদউদ্দিন ওয়েইসি, কংগ্রেসের নাসির হুসেন এবং মহম্মদ জাভেদ।
গত মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) জেপিসির বৈঠকে অসংসদীয় আচরণের অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছিল তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি জেপিসির চেয়ারম্যান তথা বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পালকে লক্ষ্য করে কাচের বোতল ভেঙে ছো়ড়েন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় কাচ বিঁধে কল্যাণের হাত জখম হয়েছিল। প্রসঙ্গত, বিরোধীদের প্রবল আপত্তি ও হট্টগোলের মধ্যে গত ৮ অগস্ট লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। বিলটি ‘অসংবিধানিক এবং মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী’ বলে অভিযোগ তুলে বিরোধীরা একযোগে তা নিয়ে আপত্তি জানান। দীর্ঘ বিতর্কের শেষে ঐকমত্যের লক্ষ্যে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি)-র কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র।
ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতা প্রসঙ্গে মুসলিম সংগঠনগুলির যুক্তি ছিল, ওয়াকফ বোর্ডের বিভিন্ন সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যেই ওই বিল আনছে কেন্দ্র। জমিয়তে ইসলামি হিন্দ এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মতো প্রধান মুসলিম সংগঠনগুলির মতে, পদ্মশিবির দীর্ঘ সময় ধরেই দিল্লি-সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সেই কারণেই ৪৪টি সংশোধনী এনে কেন্দ্র আসলে ওয়াকফ বোর্ডের উপর সরকারি কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করতে চাইছে। যদিও কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, খোদ মুসলিম সমাজের গরিব এবং মহিলারাই এত দিন ওয়াকফ আইন সংস্কারের দাবি জানাচ্ছিলেন।
বর্তমান ওয়াকফ আইনের ৪০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যে কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণার অধিকার এত দিন ছিল ওয়াকফ বোর্ডের হাতেই। ফলে ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বার বার বহু গরিব মুসলিমের সম্পত্তি, অন্য ধর্মাবলম্বীদের ব্যক্তির সম্পত্তি অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের সেই একচ্ছত্র অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনও আধিকারিকের হাতে। সংসদের দুই কক্ষে পাশ হলে আইনটির নতুন নাম হবে ‘ইউনিফায়েড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট, এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট’।
বর্তমানে যে আইন রয়েছে, তাতে ওয়াকফের দখল করা জমি বা সম্পত্তিতে কোনও ভাবেই পর্যালোচনা করার সুযোগ থাকে না। কারও আপত্তি সত্ত্বেও জমি বা সম্পত্তি দখল করতে পারে ওয়াকফ বোর্ড। তাতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকে না সরকারের। নতুন বিলে তার বন্দোবস্ত রয়েছে। যা নিয়ে আপত্তি উঠেছে। এ ছাড়া রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণ নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাব। প্রসঙ্গত, ১৯৫৪ সালে প্রথম ওয়াকফ আইন পাশ হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইনে সংশোধনী এনে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছিল। বিজেপির দাবি ‘ওয়াকফ বোর্ডের একচ্ছত্র অধিকার’ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে নতুন সংশোধনীতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy