ফাইল চিত্র।
এমনিতে সাড়ে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সঙ্ঘ পরিবারের শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু সেখানেও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে হারানোর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে আনকোরা আজাদ সমাজ পার্টির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ ওরফে রাবণ।
কোন ভরসায় সঙ্ঘ পরিবারের মজবুত গড়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে হারানোর কথা ভাবছেন দলিত নেতা? চন্দ্রশেখরের বক্তব্য, এই গোরক্ষপুরেই ১৯৭১ সালে হেরে গিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী টি এন সিংহ। তাঁর ব্যর্থতার জন্যই তাঁকে সে বার হারিয়েছিলেন মানুষ। চন্দ্রশেখরের কথা, ‘‘আর এই যোগী আদিত্যনাথের সরকারের ব্যর্থতার তালিকা তো কম নয়। বেকারত্ব, আইন-শৃঙ্খলা, দলিত নির্যাতন, করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা..। ফলে মানুষই ওঁকে হারিয়ে দেবেন।’’
গোরক্ষপুর তো বটেই, পূর্ব উত্তরপ্রদেশের কোথাওই রাবণের দলের তেমন কোনও সংগঠন নেই। গোড়ায় অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চাইলেও আসন নিয়ে দরকষাকষিতে ভেস্তে
যায় দু’দলের জোট সম্ভাবনা। এই অবস্থায় কয়েকটি ছোট এবং আনকোরা দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘সামাজিক পরিবর্তন মোর্চা’ গড়ে উত্তরপ্রদেশের ভোট যুদ্ধে ঝাঁপিয়েছেন চন্দ্রশেখর। দলিতদের অধিকার-সহ নানা বিষয় নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে লাগাতার সরব চন্দ্রশেখরকে একাধিক বার গ্রেফতার করেছে যোগী প্রশাসন। তারই ‘বদলা’ নিতে সরাসরি যোগীর গড়ে তাঁকেই চ্যালেঞ্জ জানাতে গোরক্ষপুরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
যোগীর বিরুদ্ধে রাবণ দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে সেখানে কংগ্রেস তাঁকে সমর্থন করতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন। যদিও বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়। এসপি ওই আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা জানালেও কে প্রার্থী হবেন, তা এখনও নিশ্চিত নয়। কিন্তু এ সব নিয়ে আপাতত ভাবতেই নারাজ এই তরুণ দলিত নেতা।
উত্তরপ্রদেশের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তদের একাংশ বলছেন, গত বিধানসভা ভোটেও অখিলেশের দল এই কেন্দ্রে ২০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। এখানে কংগ্রেসের তেমন কোনও শক্তি নেই। চন্দ্রশেখরের দলের তো সংগঠনই নেই। কিন্তু তিনি খেলা ঘোরাতেই পারেন কয়েকটি কারণে। গোরক্ষপুর এমনিতে সঙ্ঘ পরিবারের গড় হলেও এখানে উন্নয়ন সে ভাবে হয়নি। ২০১৭ সালের বিআরডি মেডিক্যাল কলেজে অক্সিজেনের অভাবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা এখনও দগদগে অনেকের মনে। সেই ঘটনায় যে চিকিৎসককে যোগী বারবার নানা কারণ দেখিয়ে গ্রেফতার করে জেলে ভরেছেন, তা অনেকেই ভাল ভাবে নেননি। সেই কাফিল খান নিজেও যোগীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। কাফিল নিজে না দাঁড়িয়ে চন্দ্রশেখরের হয়ে প্রচার করলে বিষয়টি অন্য মাত্রা পেতে পারে। সে কারণে একটি মহল কাফিলকে না দাঁড়ানোর জন্য বোঝাতে সক্রিয়। তা ছাড়া যোগীর নিজের কেন্দ্রেই একাধিক গোশালার দুরবস্থায় ক্ষুব্ধ গোঁড়া হিন্দুদের অনেকেই। সব মিলিয়ে যোগী নিজে কিছুটা চাপে তো বটেই।
যদিও এই তত্ত্ব মানতে নারাজ সিংহ ভাগ বিশ্লেষক। তাঁদের বক্তব্য, গোরক্ষপুর মঠের প্রধান হিসেবে গোরক্ষপুরবাসীর মধ্যে যোগীর বিপুল প্রভাব রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে সঙ্ঘের জমাট সংগঠন। গত কয়েক বছরে নিজের কেন্দ্রে একাধিক প্রকল্প গড়েছেন যোগী। তার উপর উত্তরপ্রদেশ জুড়ে হিন্দুত্বের হাওয়া তুলে ভোটের মেরুকরণ করতে মরিয়া স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে বিজেপির সব শীর্ষ নেতাই। সেখানে বেকারত্ব বা উন্নয়নের বিষয়টি চলে গিয়েছে পিছনের সারিতে। সব মিলিয়ে যথেষ্ট সুবিধাজনক অবস্থানে আদিত্যনাথ। চন্দ্রশেখর এখানে দাঁড়িয়ে প্রচারের আলো টানলেও ভোট কতটা টানতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
এ সব কথা অবশ্য ভাবতে নারাজ চন্দ্রশেখর আজাদ রাবণ। ১৯৭১ সালের ঘটনা, দলিত ভোট ব্যাঙ্কে ভরসা এবং নিজের তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে পাশা উল্টে দেবার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী রাবণের ভরসা জনতা জনার্দনেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy