বিক্ষোভে আটকে পড়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কনভয়।
পঞ্জাবে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকে যাওয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে ভবিষ্যতে অন্য কোনও রাজ্যে না হয়, তা নিশ্চিত করতে ‘কড়া’ ও ‘দৃষ্টান্তমূলক’ পদক্ষেপ করতে চাইছে মোদী সরকার।
সরকারি সূত্রের খবর, আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর সামনে মন্ত্রীদের সকলে পঞ্জাবের ঘটনা নিয়ে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সকলেরই মত, ওই ঘটনায় দায়ী আইএএস, আইপিএস অফিসারদের কড়া শাস্তি তো বটেই, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করা উচিত। সব রাজ্যের প্রশাসনের কাছেই বার্তা যাওয়া প্রয়োজন যে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা রাজ্যের সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, ‘‘প্রতিটি রাজ্যের সরকার যাতে সংবিধান অনুযায়ী চলে, তা নিশ্চিত করা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। সংবিধানের ৩৫৫ ও ৩৫৬ ধারায় কেন্দ্রকে এ বিষয়ে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’’
কী পদক্ষেপ করা হবে, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আজই ‘কড়া’ ব্যবস্থা চায় কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে পঞ্জাবের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত, পঞ্জাবের মুখ্যসচিব ও ডিজিপি-র সাসপেনশন চেয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। আগামিকাল এই মামলার শুনানি। মোদী সরকার নিজে কিছু করার আগে সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ করে, তা দেখে নিতে চাইছে। সে দিকে ইঙ্গিত করে কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় খুবই বড় রকম বিচ্যুতি হয়েছে। ইতিমধ্যেই কয়েক জন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদালতের কাছ থেকে ন্যায়বিচার মিলবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এই ধরনের গাফিলতি হলে যা পদক্ষেপ করা দরকার, করা হবে।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কালই পঞ্জাবের কংগ্রেসের সরকারের থেকে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকে যাওয়ার ঘটনায় রিপোর্ট চেয়েছিল। অনুরাগ বলেন, ‘‘রিপোর্ট পাওয়ার পরে, সেই মতো বড় মাপের কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
কী সেই কড়া পদক্ষেপ? বিজেপি-র নতুন শরিক, পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ ইতিমধ্যেই দাবি তুলেছেন, পঞ্জাবের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিচার করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর কনভয় ঘিরে ঘটনার পরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে ভোটের সম্ভাবনা পুরোপুরি খারিজ করে দিচ্ছেন না সরকারের কর্তাব্যক্তিদের একাংশ। মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, ‘‘১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে উত্তরপ্রদেশে কল্যাণ সিংহ সরকারকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছিল। কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার একই সঙ্গে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশেও বিজেপি সরকার হটিয়ে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেছিল। যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, এই সব রাজ্যের সরকার সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি মেনে চলেনি। তারা করসেবকদের জড়ো করেছে, মদত দিয়েছে। যারা পরে বাবরি মসজিদ ভেঙেছে।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের ওই মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, এ ক্ষেত্রেও পঞ্জাব সরকারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকে বিক্ষোভকারীদের মদত জোগানোর অভিযোগ রয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে ভোট করানোর চেষ্টা হলে আখেরে কংগ্রেসের রাজনৈতিক সুবিধা হয়ে যাবে কি না, সেই চিন্তাও রয়েছে বিজেপির মধ্যে। কিন্তু কড়া ব্যবস্থা যে দরকার, তাতে মোদী সরকারের মধ্যে দ্বিমত নেই। মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা পরে রাজনীতিতে নতুন বিষয় চলে আসবে, আর আমরাও সব ভুলে যাব, এ তেমন বিষয় নয়। এখানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা তো বটেই, তাঁর পদের গরিমা জড়িত।’’
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনার পর রাজ্যের তিন আইপিএস অফিসারকে বদলির নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাঁদের ডেপুটেশনে নিয়ে এসে রাজ্যের বাইরে বদলি করার চেষ্টা হয়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তিন আইপিএস-কে ছাড়েনি। মোদী সরকারের ধারণা, ফিরোজপুরের ঘটনায় দায়ী আইএএস, আইপিএস অফিসারকে বদলি করা হলে পঞ্জাব সরকারও তাতে সায় দেবে না।
পঞ্জাব সরকার নিজে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটির তদন্তে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু তাতে বিশেষ ফল মিলবে বলে কেন্দ্র মনে করছে না। কেন্দ্রীয় সরকারের এক শীর্ষব্যক্তির বক্তব্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নী নিজেই বলে দিয়েছেন, রাজ্য প্রশাসনের কোনও গাফিলতি ছিল না। ফলে বোঝাই যায়, রাজ্যের তদন্ত কমিটি কী বলবে!
এই ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট কী পদক্ষেপ করে, তা গুরুত্বপূর্ণ বলে মোদী সরকার মনে করছে। ‘লয়ার্স ভয়েস’ নামের একটি সংগঠন আজ সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে আদালতের নজরদারিতে তদন্ত দাবি করেছে। সংগঠনের তরফে প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল, আইনজীবী মনিন্দর সিংহ প্রধানমন্ত্রীর বেঞ্চে মামলার উল্লেখ করে আর্জি জানান, ভাটিন্ডার জেলা আদালতকে প্রধানমন্ত্রীর সফরের পুলিশি বন্দোবস্ত সংক্রান্ত সমস্ত নথি নিজের দখলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হোক। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা জানতে চান, আদালতের থেকে কী আশা করছেন? মনিন্দর বলেন, এই ঘটনায় দায়ী কারা, সুপ্রিম কোর্ট তা সাব্যস্ত করুক। ভবিষ্যতে যাতে এ রকম ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করুক। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় ত্রুটি ইচ্ছাকৃত। এ ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত এবং ঘটনার পিছনে পঞ্জাবের শাসক শিবিরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রধান বিচারপতি জানান, কাল এর শুনানি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy